• ঢাকা, বাংলাদেশ বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন
  • [কনভাটার]
শিরোনামঃ
আইসিবিআই ব্যাংকের এসভিপি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান হলেন বাঁশখালীর মান্নান আশরাফ ফকির হত্যা: অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা, স্ত্রী-ছেলে কারাগারে হাটহাজারীর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিশ্ব মঞ্চে মোহাম্মদ ইকবাল বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেড় বছরে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করা হবে : আমীর খসরু ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় বাঁশখালীর যুবকের মৃত্যু বিএনপির প্রার্থী তালিকায় অনুপস্থিত শীর্ষ নেতারা এনসিপির দক্ষিণ জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী হলেন বাঁশখালীর মিশকাত বাঁশখালী নিয়ে লেয়াকত আলীর ধারাবাহিক লেখনী ভাইরাল হযরত শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীন কঃ – প্রেমের বাদশাহর রাজকীয় উপাখ্যান বাঁশখালীতে গণঅধিকারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

একজন খ্যাতিমান অধ্যাপক চৌধুরী স্যারের ৬৬তম জন্মদিনে

রিপোর্টার নাম: / ১৭২ শেয়ার
আপডেট: শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৪

আলমগীর মোহাম্মদ ▪️
খলিল জিবরানের একটা কবিতা আছে শিক্ষকদের নিয়ে। শিক্ষককে তিনি একজন জ্যৈতির্বিদের সাথে তুলনা করেছেন। যিনি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনে পথ দেখান। ইংরেজ পন্ডিত স্যামুয়েল জনসনের একটা উক্তি হলো, “A book either helps us to enjoy life or endure it.” আমি মনে করি এক্ষেত্রে একজন শিক্ষকের ভূমিকা মুখ্য। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ আলী তেমন একজন শিক্ষক যিনি শিক্ষার্থীদের সঠিক পথের আলো দেখাতে পারেন এবং একটা টেক্সটকে উপভোগ্য করে তুলতে পারেন তাঁর সমাজসচেতনতা ও বাস্তবিক জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়ে।

লেখকের সাথে অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ আলী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম ২০০৯ সালে। ভর্তির আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দিন যাওয়ার সুযোগ হয়নি। আমার এলাকার কাকা সাবেক স্কুল শিক্ষক জনাব আবুল কাশেম চৌধুরীর সাথে বিষয়টা শেয়ার করলাম। কাকা বললেন,’ ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান আমার বন্ধু মানুষ। আমাদের বাঁশখালী বাড়ি।’ এ যেন অন্ধকার রাস্তায় হঠাৎ টর্চের আবির্ভাব।
ভর্তির আগে নির্ধারিত দিনে কলা ভবনের ডিন অফিসে ভাইবা দিতে গেলাম। কাজী মোস্তাইন বিল্লাহ স্যার জানতে চাইলেন নাম, কী পড়ব। আমার ইচ্ছার কথা শুনে চৌধুরী স্যারকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ চৌধুরী ইংরেজিতে ওর নম্বর কত? পাবে?’ স্যার বললেন, ‘স্যার ও পাবে।’

মুশকিল হলো পরিচিত একজন শিক্ষক বিভাগে আছেন সেই খুশি বেশিদিন টিকল না। ক্লাস করতে গিয়ে বড়দের কাছে শুনলাম, সিএমএ মানে আর্মি মূর্তি। ফার্স্ট ইয়ারে রিডিং কোর্সে স্যার আমাদের নিউ হেডওয়ে সিরিজের একটা টেক্সট পড়াতেন। স্যারের হাতে থাকা সংস্করণের সাথে আমারটা না মেলায় ক্লাস থেকে বের করে দিলেন সোজা। জীবনের প্রথম কোনো শিক্ষক আমাকে এভাবে শাস্তি দিলেন। শুধু বের করে দিলেন তা না। বের হয়ে বারান্দায় এক বন্ধুকে বলছিলাম স্যার তো আমাকে ক্লাস থেকে তাড়িয়ে দিলেন। বারান্দায় এসে স্যার ডাক দিলেন, ‘ এই ছেলে তুমি কলার বারান্দায়ও দাঁড়াবে না।” এবার বুঝে গেলাম চৌধুরী স্যার আসলেই আর্মি মূর্তি।

সেকেন্ড ইয়ারে স্যার আমাদের পড়াতেন প্র‍্যারাগ্রাফ রাইটিং। স্যারের ক্লাস কন্টেন্ট আমার এখনো মুখস্থ আছে। রাইটিং পড়ানোতে স্যারের দক্ষতা এবং প্রায়োগিক দক্ষতা অত্যন্ত উঁচুমানের।

থার্ড ইয়ারে পড়িয়েছিলেন দ্য ফেইরি কুইন। স্পেন্সারের। ফোর্থ ইয়ারে এবসার্ড প্লে পড়াতেন যা অন্য অনেকের মতো আমাকে এবসার্ড লিটারেচার পড়ায় আগ্রহী করেছে। তাছাড়া টিচিং ল্যাংগুয়েজ থ্রু লিটারেচার নামে একটা কোর্স ছিলো। এই কোর্সটা স্যার বেশ জমিয়ে পড়াতেন। মাস্টার্সে স্যার ইএল্টি পড়াতেন। একদিন ক্লাসে সবার হাতে টেক্সট ছিল আমার নেই। স্যার খেয়াল করার সাথে সাথে আমার এক ক্লাসমেইট আমাকে টেক্সট বাড়িয়ে দিতে দেখে স্যার মন্তব্য করেছিলেন, ‘ তিনি কাবিল মানুষ। তাঁর টেক্সট লাগে না।’ ইএলটি, লিংগুওয়িস্টিক্স ও গ্রামারের সবচেয়ে দক্ষ শিক্ষক আমাদের চৌধুরী স্যার।

চৌধুরী স্যারের চরিত্রের অন্যতম গুণ হলো তিনি অবিচল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। স্যার বস্তুত এলিগরিক্যাল। সারফেইসে কঠিন, ইনারে কোমল একজন মানুষ। একই এলাকায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে কিনা জানি না স্যার আমাকে বেশ পছন্দ করেন। অনেকবার স্যারের বাসায় ও বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। স্যারের আন্তরিকতার একটা প্রসঙ্গের এখানে অবতারণা করা প্রাসঙ্গিক মনে করছি। করোনার সময় লেখালেখিতে একটা তাল পেয়েছিলাম। আমার প্রথম দুটো পান্ডুলিপি স্যার সম্পাদনা করেছেন। Selected Letters of Kazi Nazrul Islam চৌধুরী স্যার না হলে প্রকাশ করার সাহস পেতাম না। কোভিডের সময় একদিন স্যারকে ফোন দিয়ে পান্ডুলিপি দিতে গেলাম বাসায়। দরোজা থেকে দিয়ে চলে আসব এমন সময় স্যার বললেন, ‘ ঘরত আইয়্যো ওয়া। আলমগীরর ওঁয়ারে আঁরো ঘরত করোনা আইবু না ওয়া?’ সেদিন বুঝেছি স্যার আমাকে ভালোবাসেন।

ইংরেজি বিভাগ একসময় দীর্ঘ দশ বছর লাগিয়ে দিতো অনার্স-মাস্টার্স শেষ করতে। তিন বছরের চেয়ারম্যানশিপে তিনি সেটা কমিয়ে আনতে পেরেছেন। আমরা ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল দিয়েছিলাম নয়মাসে। চৌধুরী স্যারের পাঠদানে মেকিভাব নেই। স্যার খুব প্রিসাইজলি পড়ান। নিয়মিত ক্লাস দেন। কখনো ক্লাসে দেরি করেন না। শিক্ষার্থীদের অহেতুক ঘুরান না। একবার স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম অনেকে তো নিয়মিত ক্লাস নেন না। আপনার স্বভাব আলাদা কেন? স্যার বলেছিলেন, ‘ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের সবচেয়ে বড় দায় হলো Conscience। সেটা কাজে না আসলে আর কিছু করার থাকে না।’

আজকে এই প্রবাদপ্রতিম শিক্ষকের ৬৬তম জন্মদিন। জন্মদিনে স্যারকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

লেখক : প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, শিক্ষক, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি-(কুমিল্লা)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো নিউজ
সিবি হসপিটাল কী? কেন? কিভাবে?