• ঢাকা, বাংলাদেশ বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন
  • [কনভাটার]
শিরোনামঃ
আইসিবিআই ব্যাংকের এসভিপি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান হলেন বাঁশখালীর মান্নান আশরাফ ফকির হত্যা: অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা, স্ত্রী-ছেলে কারাগারে হাটহাজারীর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিশ্ব মঞ্চে মোহাম্মদ ইকবাল বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেড় বছরে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করা হবে : আমীর খসরু ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় বাঁশখালীর যুবকের মৃত্যু বিএনপির প্রার্থী তালিকায় অনুপস্থিত শীর্ষ নেতারা এনসিপির দক্ষিণ জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী হলেন বাঁশখালীর মিশকাত বাঁশখালী নিয়ে লেয়াকত আলীর ধারাবাহিক লেখনী ভাইরাল হযরত শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীন কঃ – প্রেমের বাদশাহর রাজকীয় উপাখ্যান বাঁশখালীতে গণঅধিকারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

শুভ জন্মদিন প্রাণপ্রিয় বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

রিপোর্টার নাম: / ৪৮ শেয়ার
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১

আকতার জাবেদ ▪️

আজ ১৮ই নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দিবস। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অর্থনীতি বিভাগ, ২০০ জন ছাত্রছাত্রী, সাতজন শিক্ষক নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়।

চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে এক হাজার ৭৫৪ একর জায়গা নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলবিজয়ী।

প্রথম উপাচার্য ছিলেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এ আর মল্লিক (সাবেক অর্থমন্ত্রী)। ইতিহাস বিভাগের তিনজন প্রফেসর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। যথাক্রমে- ড. এ আর মল্লিক, প্রফেসর ড. আবদুল করিম এবং ব্যারিস্টার প্রফেসর ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস : বিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই চট্টগ্রামের বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদরা চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলেন। ১৯৪০ সালের ২৮ ডিসেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সর্বভারতীয় সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে মওলানা মুনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী চট্টগ্রামে একটি ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি’ নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন এবং এ লক্ষ্যে তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার দেয়াং পাহাড়ে ভূমিও ক্রয় করেন। ১৯৪২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নূর আহমদ বঙ্গীয় আইন পরিষদে চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক দাবি উত্থাপন করেন।

পাকিস্তানের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬০-৬৫) প্রণয়নকালে চট্টগ্রামে একটি ‘বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৬২ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদ ফজলুল কাদের চৌধুরী চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তীকালে তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী নির্বাচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।

১৯৬৩ সালের ২৯ নভেম্বর ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার মনোনীত হন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের অনুপস্থিতিতে ১৯৬৩ সালের ১২ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্বকালে ফজলুল কাদের চৌধুরী কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এ টি এম মোস্তফাকে পূর্ব পাকিস্তানে তৃতীয় বিশ্ববিদ্যালয়টি চট্টগ্রামে স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

১৯৬৪ সালের ৯ মার্চ ফজলুল কাদের চোধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের বৈঠকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ মঞ্জুর করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম ওসমান গণিকে চেয়ারম্যান ও ড. কুদরাত-এ-খুদা, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, এম ফেরদৌস খান এবং ড. মফিজউদ্দীন আহমদকে সদস্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্থান নির্বাচন কমিশন’ গঠন করা হয়।

ওই কমিশন সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি ভূমিকে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হিসেবে সুপারিশ করে। ১৯৬৪ সালের ১৭-১৯ জুলাই অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ইসলামাবাদে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের সভায় ‘স্থান নির্বাচন কমিশন’-এর সুপারিশের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। ১৯৬৪ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

১৯৬৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান মল্লিককে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রকল্প পরিচালক’ নিযুক্ত করা হয়। চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ‘কাকাসান’ নামের একটি ভবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের অফিস স্থাপন করেন।

১৯৬৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর এক সরকারি প্রজ্ঞাপন বলে তৎকালীন পাকিস্তান শিক্ষা পরিদফতরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প অফিসে বদলি করা হয়। স্থপতি মাজহারুল ইসলামের ‘বাস্তকলা’ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। প্রাথমিকভাবে একটি দ্বিতল প্রশাসনিক ভবন, বিভাগীয় অফিস, শ্রেণিকক্ষ ও লাইব্রেরির জন্য একতলা ভবন তৈরি করা হয়।

১৯৬৬ সালে ড. এ আর মল্লিককে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আবদুুল মোনেম খান।

ড. আবদুল করিম ইতিহাস বিভাগের প্রধান ও রিডার, ড. জাকি উদ্দিন আহম্মেদ সিনিয়র লেকচারার, আবুল কালাম মঞ্জুর মোর্শেদ বাংলা বিভাগের সিনিয়র লেকচারার, মোহাম্মদ আলী ইংরেজি বিভাগের প্রধান ও রিডার এবং ড. শফিউল আলম অর্থনীতি বিভাগের রিডার এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পূর্ণ অধ্যাপক নিযুক্ত হন অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান।

১৯৬৭ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন সব ডিগ্রি কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত করা হয়। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম ডিগ্রি (পাস) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৮-৬৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন পাঁচটি বিভাগ- রাজনীতি বিজ্ঞান, বাণিজ্য, সমন্বিত গণিত, পরিসংখ্যান, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যা চালু করা হয়।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি অনুষদ- কলা, বিজ্ঞান, ব্যবসায় প্রশাসন, সমাজবিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন ও জীববিজ্ঞান; ছয়টি ইনস্টিটিউট- শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, চারুকলা ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস, সমাজবিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট;

একটি অধিভুক্ত অনুষদ- চিকিৎসা অনুষদ; দু’টি অধিভুক্ত ইনস্টিটিউট- ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অব থালমোলজি, ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ ও ২১টি অধিভুক্ত কলেজ রয়েছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ উপাচার্য ড. এ আর মল্লিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে চাকসু ভিপি ইতিহাস বিভাগের ছাত্র আব্দুর রবসহ ১৫ জন শহীদ হন। একজন শিক্ষক, ১১ জন ছাত্র ও তিনজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দফতরের কর্মচারী মোহাম্মদ হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি বেশ সমৃদ্ধ। এ গ্রন্থাগারে প্রায় তিন লক্ষাধিক বই এবং সাড়ে তিন হাজার বিভিন্ন ধরনের পত্রপত্রিকা এবং ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে। ১৯৮১ সালে বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববরেণ্য পদার্থবিদ ও নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ড. আবদুস সালামকে সম্মানসূচক ডিএসসি ডিগ্রি দেয়া হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে একটি বিশেষ অধ্যাপক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শতাধিক বিভাগ চালুর মতো জায়গা আছে। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা সম্ভব।

লেখক, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জর্জ কোর্ট, নাটোর।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো নিউজ
সিবি হসপিটাল কী? কেন? কিভাবে?