একজন শিক্ষককে হত্যা করলো। একজন অধ্যক্ষকে লাঞ্চিত করলো। অথচ বাংলাদেশ এখনো ফুঁসে ওঠেনি। প্রতিবাদে ফেটে পড়ে নি। কেন? কেন?কেন এই নির্লজ্জ নীরবতা?এই জাতি কি তার শৌর্যবীর্য, গৌরব হারিয়ে ফেলেছে? সে কি বায়ান্নো, ঊনসত্তর, একাত্তরকে ভুলে গেছে? সে কি লাল-সবুজের পতাকাকে বুকে ধারণ করেনা?সে কি জাতির দুর্দিনে পবিত্র শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ নেয় না?অযুত কন্ঠে গায়না--আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি!? সে কি স্মৃতি সৌধে গিয়ে শির উঁচু করে বলেনা--সব কটা জানলা খুলে দাও না?সে কি বত্রিশ নম্বরে গিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেনা এই সিঁড়ি আমার পিতার রক্তে রঞ্জিত? সে কি বলে না এই রক্তাক্ত পাঞ্জাবি আমার পিতার?সে কি উচ্চারণ করেনা--আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি? তবে আজ কেন নীরব বাংলাদেশ? কেন নীরব তুমি? মানবতা, তুমি নীরব কেন?একবার চীৎকার দিয়ে বলো--শিক্ষক হত্যার বিচার চাই। শিক্ষক লাঞ্চনার বিচার চাই। বাকবিশিস, তুমি সারা বাংলাদেশ জুড়ে আন্দোলিত হও। তোমার প্রথম প্রতিবাদ বাংলাদেশ দেখেছে --শুনেছে। বাকশিসসহ সব সংগঠন, এগিয়ে আসুন। আমাদের পরিচয় আমরা শিক্ষক। আমরা মানুষ গড়ার স্থপতি।
শিক্ষক খুনের - শিক্ষক অপমানের এ দুঃসময়ে ও আমার একটি দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠে। জাতীয় অধ্যাপক ড.আনিসুজ্জামান লালগালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন।পাশে হাটঁছেন বাংলার প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা। টিভির পর্দায় আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি পদক্ষেপ খেয়াল করছিলাম। তিনি আনিসুজ্জামান স্যারের পাশে হাঁটছেন। কিন্তু বার বার একটু পেছনে। তিনি অতি সতর্কে, সন্তর্পনে হাঁটছিলেন যেন তাঁর শিক্ষককে সুপারসিড না করেন। আমার বুক অহংকারে গৌরবে ফুলে ওঠছিলো। একজন শিক্ষকের প্রতি আমাদের প্রধান মন্ত্রীর এতো সম্মান-এতো ভালোবাসা!এতো সমীহ! মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধুও শিক্ষকদের প্রতি এমন সম্মান দেখাতেন। অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামের স্মৃতি কথায় এর প্রমান মেলে।আমি বিশ্বাস করি যিনি তাঁর শিক্ষককে এতো সম্মান করেন তিনি এই বাংলার মাটিতে শিক্ষক হত্যার বিচার করবেনই। শিক্ষক হত্যা আর শিক্ষক লাঞ্চনা তিনি সইবেন না। আমার মন আবারও বলছে -আমাদের তো একজন শেখ হাসিনা আছেন, আমাদের তো বঙ্গবন্ধু তনয়া গণতন্ত্রের মানস কন্যা প্রধান মন্ত্রী আছেন এই বিচার হবেই।
প্রিয় নেত্রী, শেষ কথা বলতে চাই -আমাদের শেষ ঠিকানা আপনি। আমাদের শেষ ভরসা আপনি। যখন বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে তখন আপনিই হস্তক্ষেপ করেন। হয়তো আপনার মন বলে ওঠে--আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা। জাতি আমার দিকে তাকিয়ে আছে, যেমন তাকাতো আমার বাবার দিকে। আমি বাংলার নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াবো, আমি শোষিত মানুষের পাশে দাঁড়াবো।
সেদিন যখন আপনি পদ্মাসেতু উদ্বোধন করছিলেন কলেজের পরীক্ষা স্থগিত করে বিশাল হলরুমে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সেই দৃশ্য দেখিয়েছিলাম ছাত্র শিক্ষক সবাইকে। গর্বে আমাদের বুক ফুলে ওঠেছিলো। আপনার সাথে আমাদের মনও বলে ওঠেছে--দেখো বিশ্ব, আমরা পারি। বাংলাদেশ পারে। আমাদের প্রধান মন্ত্রী পারে। "কেউ আমাদেরকে দাবায়ে রাখতে পারবানা। "
আমি জানি 'অক্ষর ' অবিনশ্বর। যে শিক্ষক একটি নিরক্ষর শিশুকে 'অক্ষর ' দান করেছেন, শিক্ষার আলোক ধারায় স্নান করিয়েছেন সেই অক্ষর ই আজ প্রতিবাদ করবে। শিক্ষক হত্যার বিচার করবে। ড. আনিসুজ্জামান, ড.রফিকুল ইসলামের রেখে যাওয়া আদর্শ,সত্য নিষ্ঠার পরাকাষ্ঠা জন নেত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষকের পাশে দাঁড়াবেন। যথাযথ হস্তক্ষেপ করবেন। নিহত শিক্ষকের পরিবারের সহায় হবেন। ন্যায় বিচারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।
জাতির পতাকা আজ খামচে ধরতে চাইছে পুরোনো শকুন। ছদ্মবেশে মিশে যেতে চাইছে প্রগতিশীলদের সাথে। কেউ কেউ হাতও মিলাচ্ছে। আমরা তা হতে দিব না। এটি সূর্য সেনের বাংলা।প্রীতি লতার বাংলা। বঙ্গবন্ধুর বাংলা। আঠারো কোটি বাঙালির বাংলা। বাংলা মায়ের দুঃসময় এলে তার সন্তানেরা রুখে দাঁড়ায়। বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়। বাঙালির যাত্রা আজ অপ্রতিরোধ্য। শিক্ষকরাই এ দেশপ্রেমিক জাতির নির্মাতা। তাঁরাই থাকবেন সমাজের অগ্রগন্য। শিক্ষক হত্যার বিচার চাই --শিক্ষক লাঞ্চনার বিচার চাই। আমি জানি, এ বিচার বাংলার মাটিতে হবেই।
সম্পাদক ও প্রকাশক : পারুল আকতার
ইমেইল : banshkhaliexpress@gmail.com
www.banshkhaliexpress.net | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত | © CW26020