Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আজ অধ্যাপক আসহাব উদ্দীনের ২৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী

আসহাব উদ্দীন আহমদ (১৯১৪ – ১৯৯৪) একজন বাংলাদেশী লেখক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ ও দক্ষ সংগঠক। তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এবং শ্রেণীবৈষম্যহীন রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন আমৃত্যু। চট্টগ্রাম সিটি কলেজ, সাধনপুর পল্লী উন্নয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় মোট ২৭টি গ্রন্থ রচনা করেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০০৫ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক-এ ভূষিত হন

আসহাব উদ্দীন ১৯১৪ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুনশী সফর আলী চৌধুরী ও মা নাসিমা খাতুন। তিনি ১৯৩২ সালে বাণীগ্রাম-সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৩৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৩৬ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ১৯৩৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাস করেন।

◾কর্মজীবন
শিক্ষকতা দিয়ে আসহাব উদ্দীন আহমদ কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি প্রথমে চট্টগ্রাম কলেজ, পরে একে একে তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমান হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজ), লাকসাম নবাব ফয়েজুন্নেসা কলেজ, ফেনী সরকারী কলেজ-এ ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ-এ ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন বেসরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির মুখপত্র ‘দি টিচার’-এর সম্পাদক।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন-এর পর থেকে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় উঠেন এবং কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে দেন। মার্ক্সবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে যোগ দেন কৃষক-শ্রমিকদের পাশে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী লীগের (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিপ্লবী রাজনীতির অনুসারী হওয়ায় তাকে পাকিস্তান আমলে এক বছর জেল খাটতে হয়। আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসার পর তার রাজনীতি নিষিদ্ধ হয় এবং তার নামে হুলিয়া জারি হয়। ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ডে হুলিয়া মাথায় নিয়ে জীবন কাটাতে হয়। পাকিস্তান সরকার তাকে ধরে দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। ১৯৬৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেলে তিনি পিকিংপন্থিদের সাথে ছিলেন এবং ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। সেই সময়ে তিনি বিভিন্ন গ্রামে কৃষকদের বাড়িতে তাদের আশ্রয়ে আত্মগোপন করে কাটান। ১৯৮০ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গণচীন সফর ।এ বছরের শেষের দিকে সক্রিয় রাজনীতি হতে অবসর নেন।

আরও পড়ুন  আজ মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. হাবিব উল্লাহ চৌধুরী'র ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী

আসহাব উদ্দীনের লেখালেখির মূল উপাদান ছিল শোষণমুক্তি ও সমাজ পরিবর্তন। ১৯৪৯ সালে তার রচিত প্রথম বই বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর প্রকাশিত হয়। তিনি তার আমার সাহিত্য জীবন বইতে বলেছেন,
“আমার লেখায় হাসি-ঠাট্টার ভেতর দিয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও অবিচারকে তুলে ধরা হয়েছে এবং জনগণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিকে প্রচার করা হয়েছে, জনপ্রিয় করা হয়েছে, প্রোপাগান্ডার আকারে নয়, সাহিত্য রূপে।”

আসহাব উদ্দীন আহমদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৪ সালের ২৮ মে ঢাকার সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়।
◾গ্রন্থতালিকা:
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর (১৯৪৯)
জান ও মান (১৯৫০)
ধার (১৯৫৪)
বন্দে ভোটারম (Bande Votaram) (১৯৬১)
ইন্দিরাদি সমীপেষু
সের আনা টাকা মাত্র (১৯৬৮)
আওয়ামী লীগের মীর জাফরী ঐতিহ্য (১৯৭০)
হাতের পাঁচ আঙ্গুল (১৯৭০)
লেখক ও পাচক (১৯৭১)
দাড়ি সমাচার (১৯৭১)
বিপ্লব বনাব অতি বিপ্লব (১৯৭৪)
ভাতের বাংলা কাপড়ের বাংলা (১৯৭৪)
বাঁশ সমাচার (১৯৭৪)
দ্বিপদ বনাম চতুস্পদ (১৯৭৫)
পথ চলিতে
মীর জাফরী ঐতিহ্য
ইন্দিরা গান্ধীর বিচার চাই (১৯৭৫)
উদ্ধার (১৯৭৮)
আমার সাহিত্য জীবন (১৯৮০)
ডেনজার সিগন্যাল (১৯৮০)
ঘুষ (১৯৮৬)
উজান স্রোতে জীবনের ভেলা (১৯৯০)
দাম শাসন দেশ শাসন (১৯৯১)
ভূমিহীন কৃষক কড়িহীন লেখক (১৯৯২)
আসহাব উদ্দীন আহমদের সেরা রম্য রচনা সংগ্রহ (১৯৯৪)
◾পুরস্কার ও সম্মাননা
একুশে পদক (২০০৫, মরণোত্তর)[৬]
বৌদ্ধ একাডেমি পদক
অনুপম পদক
চট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ পদক
আইনজীবি সমিতি পদক
বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র পদক, চট্টগ্রাম

এদিকে প্রফেসর আসহাব উদ্দিন আহমদ এর ২৭ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে উপলক্ষে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাঁশখালী (ডিগ্রি) কলেজ ক্যাম্পাসে মরহুমের কবরে ফাতেহা পাঠ, সকালে পুষ্পস্তবক অর্পন ও কলেজ মসজিদে বাদ জুমা মিলাদ মাহফিলের উদ্যোগ নিয়েছে গুনাগরি জাগরণ সংস্থা।

সূত্র : জাগরণ সংস্থা

তথ্যসূত্র:

▪️বাংলাপিডিয়া
▪️ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
▪️ দৈনিক ইত্তেফাক।