হাজার হাজার বছর ধরে এই ভূখণ্ডে সহজ-সরল মানুষের বসবাস। সেই প্রাচীনকাল থেকেই এখানকার মানুষ বারবার শোষিত হয়েছে – কখনো প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য, কখনো যোগাযোগ ব্যবস্থা বা কৌশলগত অবস্থানের কারণে। ব্যবসায়ীরা এসেছে, বিদেশিরা এসেছে – আর এসেছে শোষণের নতুন কৌশল। তারা এদেশের সরল মানুষদের ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থে ধনী থেকে আরও ধনী হয়েছে। জমিদার প্রথা, লাঠিয়াল বাহিনী কিংবা দেশীয় দালাল—সবই ছিলো তাদের শোষণের হাতিয়ার।
এদের সহায়তা করেছে কিছু ঘৃণিত চরিত্র—মীরজাফর, লেনদুক দর্জির মতো আত্মস্বার্থপর বিশ্বাসঘাতক, যারা নিজেদের স্বার্থে জাতিকে বিকিয়ে দিয়েছে। ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম সত্য হলো—মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না, তাই জুলুম-অত্যাচার বারবার ফিরে আসে, শুধু রূপ বদলায়।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্তি পেলেও, স্বাধীনতা কেবল নতুন এক মোড় নিলো—শোষণ, বঞ্চনা আর বিশ্বাসভঙ্গের। ১৯৭১ সালে আবারো রক্ত ঝরিয়ে একটি নতুন রাষ্ট্র পেলাম। আমরা বিশ্বাস করলাম, হয়তো এবার আমাদের "নিজের দেশ" হবে। কিন্তু ৫৩ বছর পরেও আমরা কেবল প্রশ্নই করি—এ দেশ কি আসলেই আমাদের?
২০২৪ সালেও আবারো রক্ত ঝরল, চোখ গেল, হাত গেল, জীবন গেল। এবার হত্যাকারী কোনো বিদেশি নয়—আমাদের নিজেদের ভাই। তাহলে পার্থক্য কোথায়? ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হোক বা জাতিভিত্তিক—আমরা সবসময়ই বিশ্বাস করে ঠকেছি।
আমরা স্বপ্ন দেখি—শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচারব্যবস্থা, নিরাপত্তা, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান... কিন্তু বাস্তবতায় তা কেবল ভোট বা উৎসবের সময় সাময়িক আশ্বাস। সাধারণ মানুষের সীমিত চাহিদা প্রতিনিয়ত পদদলিত হয় কিছু মানুষ ও পরিবারের সীমাহীন লোভে।
মীরজাফর বা লেনদুক দর্জিরা এখনো আছে—তারা অন্য মুখোশে, অন্য চেহারায়, কিন্তু সেই একই বিশ্বাসঘাতকতা। আমাদের স্বপ্নগুলো আটকে যায় জটিল কাঠামোর গলিপথে, প্রশাসনের উদাসীনতায়। আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের নিজের রাষ্ট্রকে, নিজের সেবাগুলোকে।
যদি আমরা এখনো জেগে না উঠি, উন্নত শিক্ষা, নিরপেক্ষ বিচার, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা, স্বচ্ছ প্রশাসন না গড়ে তুলি—তাহলে ইতিহাস আবারও নিজেকে পুনরাবৃত্তি করবে। নতুন কোনো জেনারেশন আবারও হয়তো জীবন দিয়ে একটি সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে, কিন্তু সেখানেও দাঁড়িয়ে থাকবে নতুন প্রজন্মের মীরজাফর আর লেনদুক দর্জির দল।
বিশ্বাস করার সাহস যেন আমাদের না হারায়, কারণ বিশ্বাস হারানো মানেই হেরে যাওয়া। আমরা হয়তো আবারও ঠকবো, কিন্তু বিশ্বাসহীন জাতি হয়ে নয়—নতুন সম্ভাবনার জন্য অন্তত চেষ্টা করে যেতে চাই।
লেখক প্রধান শিক্ষক চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়
সম্পাদক ও প্রকাশক : পারুল আকতার
ইমেইল : banshkhaliexpress@gmail.com
www.banshkhaliexpress.net | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত | © CW26020