• আজ প্রলয়ঙ্কারী ২৯ এপ্রিল।
• ২৫৯ কোটির টাকার বেড়িবাঁধের বেহাল অবস্থা!
• অরক্ষিত কয়েক লক্ষাধিক মানুষ!
রহিম সৈকত ▪️
এপ্রিল মাস আসলেই অজানা আশংকায় তটস্থ থাকেন উপকূল বাসী। ১৮৭৬, ১৮৯৭, ১০, ৩১ অক্টোবর ১৯৬০, ১৯৯১ বছরের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক প্রাণহানি, জানমালের ক্ষয়ক্ষতির সাক্ষী বংশপরম্পরায়। ১৯৬০ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম উপজেলার বাঁশখালী উপজেলার উপকূলবর্তী ইউনিয়ন ছনুয়া, শেখেরখীল, গন্ডামারা, সরল, কাথরিয়া, বাহারচরা, খানখানাবাদ, পুকুরিয়া ইউনিয়নে প্রাণহানি হয়েছিল ৯৫৩৭ জনের, গবাদি পশুপাখির প্রাণহানি হয় ৮২৩০৩ বেশি, ঘরবাড়ি বিনষ্ট হয় ৬২,৭২৫ টি, সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয় ৯৪০০০ একর এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ ৫,৪৮,০০০ একরের। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলে সংঘটিত ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ম্যারি এন ঘূর্ণিঝড়ে এসব ইউনিয়নে প্রাণহানি হয় ৯৩৪৬ জন, আহত হয় ১১৯৯৩ জন, গবাদি পশু বিনষ্ট হয় ১,৬১,৫৭৫ টি, ফসল বিনষ্ট হয় ১৩ হাজার একর, ঘরবাড়ি বিনষ্ট হয় ৬৩,৩৬৫টি। মোট কথা এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, প্রাকৃতিক দূর্যোগ মানেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হাহাকার, হৃদয় দীর্ণবিদীর্ণ করা করুণ বাস্তবতা।
বাঁশখালীবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী একটি বেড়িবাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের আমলে সাড়ে ৭ বছর আগে বাঁশখালী উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ২৫১ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
২০১৫ সালের ১৯ মে প্রকল্পটি একনেকে পাস হওয়ার পর বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বাঁধ নির্মাণে কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বেড়ে হয়েছিল ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় এতে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ভাঙন রোধ ও পুনরাকৃতিকরণ, ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করার কথা রয়েছে। ২০২২ সালে প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়। নিম্নমানের কাজ আর সংশ্লিষ্টদের উদাসিনতায় মাত্র দেড় বছরের মাথায় এটিতে ভাঙ্গন ধরা শুরু করেছে। প্রসঙ্গত গত বছর এই নিয়ে দৈনিক বাংলায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। তখন তড়িঘড়ি করে কিছু জিও ব্যাগ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর আর কোন খবর নেই।
রবিবার সরেজমিনে দেখা যায় খানখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়া, কদম রসুল, খানখানাবাদ উপকূলের বেড়িবাঁধ ভয়াবহ অবস্থায় আছে। সাগরের জলসীমার সাথে বেড়িবাঁধ প্রায় সমান্তরাল হয়ে আসছে। প্রেমাশিয়া, কদমরসুল পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ধ্বসে ক্রমশ সাগরবক্ষে মিলিয়ে যাওয়ার ক্ষন গননা করছে। এপ্রিল থেলে সেপ্টেম্বর দুর্যোগ প্রবন সময়। বিগত বছর গুলোতে প্লাবিত হয়ে লবনাক্ততায় ব্যাপক আবাদি জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চলতি বছরও একই ঝুঁকিতে আছে এই এলাকার লক্ষাধিক মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক জিয়াউল হক জিয়া বলেন সামনে আসছে দুর্যোগের সময় আর একই সাথে আমাদের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার সময়।
কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি পানে তাকিয়ে আছে খানখানাবাদ এর মানুষ।
সাগর তীরে ছোট দোকান চালানো শোয়াইবুল ইসলাম বলেন, আমাদের কপাল কি কোনদিন পাল্টাবে না। এপ্রিল আসলেই ভয় আর আতংকের সাথে আমাদের নিত্য বসবাস। এরপর ৭ মাস আমাদের এই ভয় নিয়ে কেটে যাচ্ছে। বাপ দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে কোথায় যাব?
খানখানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, প্রেমাশিয়া, কদম রসুল, খানখানাবাদ পয়েন্টের অবস্থা এতটাই নাজুককে যে আগামী বর্ষায় ৫ থেকে ৭ ফুটের জোয়ার হলে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হবে। কোন দুর্যোগ হলে তার প্রভাব হবে ভয়াবহ। অনতিবিলম্বে এই বাঁধ রক্ষার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন সময়ের দাবী। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানাই।
এই ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের দায়িত্বরত প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলীর নাম্বারে একাধিকবার কল দেয়া হলেও রিসিভ করা হয়নি। মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও প্রতিবেদন লেখা অবদি কোন প্রতিত্তোর দেয়া হয়নি।