Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

চিঠি | শিকড় ; বিশেষ সংখ্যা

চিঠি
দৈনন্দিন জীবনে নিয়ত যুক্ত হওয়া প্রযুক্তি প্রতিদিন বদলে দিচ্ছে আমাদের জীবনধারা। মহাকালের গহ্বরে বিলীন করে দিচ্ছে এক কালের অবিচ্ছেদ্য উপায় উপকরণ। চিঠি, দুই শব্দ নিয়ে গঠিত মনের অভিব্যক্তি প্রকাশের একটি বাহন। এক দশক আগেও এর তিব্র আবেদন ছিল আজকে তা বিস্মৃত অধ্যায়। আমাদের পোস্টে আসা হাসির রিয়েক্ট গুলোতেই সহজে অনুমিত ২০০০ পরবর্তী প্রজন্ম চিঠির আবেদন কী জানেইনা। প্রবাস থেকে পাঠানো সন্তানের, স্বামীর, পিতার চিঠির জন্য পোস্ট অফিসে নিত্য ধর্ণা দেয়া মানুষগুলো ৯০ দশক থেকে আগেরকার সময়ের। ৯০ দশকের প্রেমিক পুরুষ গুলো বর্তমানে বয়সে ৪০ এর ঘরে যাওয়ার কাছাকাছি, এদিক ওদিক। তেমন কেউ পরিচিত থাকলে তাদের কাছে জেনে নিতে পারেন চিঠি কী? সাথে সাথে স্মৃতিকাতরতায় ডুবে যাবে। এই এমন আবেগ যা বর্তমানকে বুঝানো এক কথায় অসম্ভব। অক্ষরের সাথে অক্ষর যুক্ত করে তৈরী হওয়া শব্দ দিয়ে রচিত হত যাপিত জীবনের সুখ দুঃখের গল্প। সেই গল্প লিখেও শান্তি, পড়েও শান্তি। সবাই চিঠি পড়তে পারত না। যারা পড়তে পারত তাঁদের কত আদর যত্ন। শৈশবে ফিরে গেলে দেখি চিঠি লিখে দিয়ে, পড়ে দিয়ে যে একটা আদর যত্ন পাওয়া যেত তা এক কথায় অনির্বচনীয় অনুভূতি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এভাবে এক একটা বিষয় তামাদি হয়ে যায়। চিঠি নিয়ে উপজিব্য করে রচিত হয়েছে উপন্যাস, নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। আজ ১ সেপ্টেম্বর সারাবিশ্ব ব্যাপি পালিত হচ্ছে চিঠি দিবস। সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য আমরা ‘চিঠি বিষয়ক’ আহবান করেছিলাম আমাদের সাথে যারা যুক্ত আছেন তাঁদের কাছ থেকে। বেশি লেখনী যুক্ত করতে পারিনি। কেন পারিনি তা নিচে বলার চেষ্টা করেছি।

প্রিয় সুহৃদ,
কোন টপিক ধরে লেখা আহবান করলে নিজেদের সহজ সরল অনুভূতি গুলো নিজের মত প্রকাশের অনুরোধ থাকল। সেখানে থাকতে পারে দুই একটা বানান প্রমাদ, থাকতে পারে সাদামাটা প্রকাশ। কিন্তু ভাবনাটা তো আপনারই। আমরা আপনার নিজের মন থেকে উৎসারিত অতি পরিচিত শব্দমালায় অনুভূতির প্রকাশ চাই। কোন লেখকের লেখার অংশবিশেষ আপনি আপনার ব্যঞ্জনাকে আরো স্পষ্ট করে তুলতে যুক্ত করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাদের ক্রেডিত দিতে হবে না হয় তা চৌর্যবৃত্তি হয়ে যায়। যেটাকে বলা হয় প্লেজারিজম। চিঠি সংখ্যায় অসংখ্য লেখা পেয়েছি, ক্রস চেক করতে গিয়ে শুরুতেই কপি হিসেবে প্রমাণিত নিচের বিশদ আর পড়ার আগ্রহ পায়নি। সময় স্বল্পতার কারনে এইভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ক্রস চেক করার সুযোগ হয়না। বিষয়টা বিব্রতকর ও বটে। আপনারা যারা আমাদের বিভিন্ন আয়োজনে লিখেন তাদের মার্ক করে রাখি। যারা ভাল লিখেন তাঁদের লেখনী যেন মিস না হয়ে যায়। তাঁদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য আকারে হলে তাঁদের নিয়ে রাইটার ক্লাব ঘোষণা করা হবে। আজ এইটুকু।
-শুভেচ্ছা সহ
সম্পাদক,
শিকড়

আরও পড়ুন  বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রেহেনা কাজমী

.
বৃদ্ধাশ্রম থেকে মা বলছি
খোকা,
কেমন আছিস জানতে চাইবো না। কেননা সব মায়েদের চাওয়াই থাকে তার খোকা যেন সব সময় ভাল থাকে, সুস্থ থাকে। আমাকে ছেড়ে নিশ্চয়ই তুইও ভাল আছিস। আর ভাল থাকবি না কেন বল?

ভাল থাকার জন্য তো তোরা আমায় এখানে পাঠিয়ে দিয়েছিস। আমি ভাল আছি, তবে ছোটদাদুর জন্য মনটা খুব কাঁদে রে। ওকে ভুলে থাকতে পারি না। বউমাও নিশ্চয় খুব ভাল আছে।

যখন একলা থাকি তোর বাবার স্মৃতি খুব মনে পড়ে। বাড়ির প্রতিটা আসবাবপত্রে তোর বাবার হাতের ছোঁয়া লেগে আছে। ইচ্ছে ছিল জীবনের শেষ অবধি সেগুলো বুকে আগলে রাখবো।

কিন্তু তোরা আমার সুখ চাস বলেই নাকি এই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছিস। তাই মাঝে মাঝে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লেও এই ভেবে হেসে উঠি যে তোরা আমায় কত ভালোবাসিস।

জগতে কোন ছেলে তার মাকে ভালোবেসে এমন সুন্দর জায়গায় পাঠায়। যেখানে কোন কাজ করতে হয় না। শুধু বসে বসে খাওয়া আর গল্প করে সময় কাটানো যায়।

জানিস খোকা, তুই তখন খুব ছোট। কেবল মাত্র হাঁটতে শিখেছিস। থাপুস-থুপুস করে পা ফেলে বাড়ীর আঙিনা জুড়ে হেঁটে বেড়াস। আমি তোর পাশাপাশি হাঁটছি। হঠাৎ তোর পা কেটে রক্ত বের হল। তোর বাবা তো সেটা দেখে আমার সাথে সেকি রাগ।

পারে তো বাড়ি থেকে আমায় বের করে দেয়। তোকে কেন বুকে না রেখে মাটিতে হাঁটতে দিয়েছি এই অপরাধে। সেদিন আমরা তোর চিল্লা-চিল্লি দেখে কিছুই খেতে পারি নি।

সারারাত নির্ঘুম কেটেছে দুজনের। তুই এখনও ভাল করে বাঁ পায়ের নিচে তাকালেই দেখতে পারবি আমাদের দুজনের আদরের ছোঁয়া।

খোকা, তোর বাবা প্রায়ই বলতো দেখে নিও আমাদের খোকা একদিন মস্ত বড় হবে। তোর বাবার কথা সত্যি হয়েছে। তুই অনেক বড় হয়েছিস। দোয়া করি আরও বড় হ। যতো বড় হলে মানুষ আকাশ ছুঁতে পারে। তোর জন্য মন খুব কাঁদে।

আরও পড়ুন  দুই প্রতিবেশী উপজেলার দায়িত্বভার সামলাবেন এই দম্পতি

কতোদিন হলো তোকে দেখিনা। এতো ব্যস্ত থাকিস কেন? এই বুড়ো মাকে একদিন একটু সময় করে দেখতে আসিস। ভয় নেই কিছুই নেব না তোর কাছে। শুধু তোর মুখটা দেখে প্রাণটা জুড়িয়ে নিব।

তোকে এখন দেখতে না পারায় আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন খাঁ খাঁ করে রে। আমি তোকে জন্ম দিয়েছি। বুকে আগলে রেখে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেছি। ছোট্ট বিছানায় পেচ্ছাব করে ভিজিয়ে দিয়েছিস যখন তখন আমি সেই ভেজা বিছানায় শুয়ে তোকে বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুম পাড়িয়েছি।

একেই বলে বুঝি জন্মান্তরের বাঁধন। এই বাঁধনটা কেটে দিতে নেইরে খোকা। কেটে দিলে সবাই যে তোকে অমানুষ ভাববে। আর আমি মা হয়ে সেটা সইবো কেমন করে বল

আজ আর নয়। আমার বংশের প্রদীপ ছোটদাদুর প্রতি খেয়াল রাখিস। ভাল থাকিস খোকা। হাজার বছর বেঁচে থাকিস।

ইতি,
তোর মা।
লেখা: শুভদীপ হালদার, কলকাতা , ভারত।
(চিঠিপত্র.কম থেকে সংকলিত)
২.
ভালবাসার নায়িকা জোসেফিনকে লেখা নেপোলিয়নের আবেগময় চিঠি

জোসেফিন, আমার জোসেফিন,
গতকাল সারাটি বিকেল কাটিয়েছি তোমার পোট্রেটের দিকে চেয়ে থেকেই। কী করে পারো তুমি বলতো এই কঠোর মনের যোদ্ধার চোখেও জল আনতে? আমার হৃদয় যদি একটি পাত্র হয়, তবে সেই পাত্রে ধারণ করা পানীয়ের নাম দুঃখ। তুমি কি তা বোঝো জোসেফিন? আবার কবে তোমার আমার দেখা হবে? সে অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হতেই চায় না! সে অপেক্ষায়…

তোমারই
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট
(রোয়ার বাংলা থেকে সংকলিত)

নেপোলিয়নের চিঠি

৩.
আবার দেখা হোক
এস.এম.রাহমান জিকু

বহুকাল পেরিয়ে গেলো আমাদের। অনুভব হয়নি, হয়নি অপলক চাহনি, হয়নি এক কাপ চায়ে ঠোঁটের আলাপন; দেখাও হয়নি। তবুও তাঁহার রেশ কাটেনি যুবকের ক্ষতে।

জানি অনেকগুলো বছর পেরিয়ে যাবে, আমাদের দেখা হবে না। খুব কাছাকাছি থাকবো, দেখা হবে না। আমাদের ছায়ার আলিঙ্গন হবে, কিন্তু দেখা হবে না। আত্মার বিনিময় হবে, তবে কথা হবে না। একই আকাশের নিচে দাড়িয়ে রঙধনুর মিলন দেখবো, তবুও আমাদের স্পর্শ হবে না।

আমরা একই শহরে, একই বাস ধরে আসা-যাওয়া হবে কিন্তু দেখা হবে না। আমাদের অসুখ-বিসুখ হবে অথচ দেখা হবে না।

আরও পড়ুন  বাঁশখালীর সরলে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের মোজাম্বিক প্রবাসীদের অনুদান

নিয়তির আবর্তনে দেখা হবে আমাদের, কথা হবে না। একই ছাদের নিচে থাকা হবে, তবে কথা হবে না। বিকেলের ছাদে প্রকৃতির পানে দৃষ্টির মিলন হবে, কিন্তু কথা হবে না। সন্ধ্যার বর্ণিল আকাশ পানে গোধূলির আলোমাখা ঠোঁটের আলাপন গোচরীভূত হবে, তবুও দেখা হবে না।

যুবকের বন্ধ দরজার কড়া নেড়ে লেখকের দু’চারটে অনুভূতি;

হঠাৎ হোক দেখা তাঁহার! অমনিতেই ফুটুক যুবকের নিষ্প্রাণ ঠোঁটের আচমকা হাসি। সেই প্রাণবন্ত হাসির আলাপন যেন বিষাদের ছাপ লুকিয়ে যুবকের ঠোঁটের কোনায় ভালোবাসা রচনা করে। যেখানে একটি ক্ষত-বিক্ষত আত্মায় নতুন ভোরের সূর্য উদিত হয়।

তবুও দেখা হোক তাঁহার পানে, বহুদিন পর হয়তো বহুকাল পর নয়তো বা শতাব্দীর জাঁতাকলে।

অতঃপর দেখা হোক তাঁহার; অন্তত একটিবার দেখা হোক আবার।

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ।
ঠিকানাঃ কলেজ রোড, চকবাজার, চট্টগ্রাম।
ইমেইলঃ mizanrahmanbns@gmail.com

৪.
প্রিয় হল্লাবাজ মেয়ে,
মেঘের মতো আমারও আর জল ঝরে না কাঁদতে কাঁদতে হাসি আসে না হল্লাবাজ মেয়েটা কি তা বুঝতে পারে না? সে কি পড়তে পারে না তার সখীর অন্তঃকরণে আঁকা শব্দ কথা?কেন এমন হলো পথ চলা?
কতদিন হয়ে গেল তোর চিঠি পায় না।আমি না কখনো ভাবি নি আমার হল্লাবাজ সখীটা এভাবে চুপ হয়ে যাবে। তোর এভাবে নীরবতা বরণ করে নেওয়াটা আমার সহ্য হচ্ছে না। তোর আর আমার হৈ-হুল্লোড় করে চলার কথা ছিলো তাই না।মনে নেই তোর সেই গল্পগুলো? জানিস হল্লাবাজ মেয়েটার একটু হৈ-হুল্লোড় আমি কত অপেক্ষা করি।রোজ মনে হয় এই বুঝি হল্লাবাজ মেয়েটা তার গল্পের ঝুড়ি খুলে বসবে। কিন্তু সে তার গল্পের ঝুড়ি খুলে না,ছোট পায়ে এসে চুপটি করে থাকে।না গল্প, না কবিতা কোনটাই করে না।তাই আমিও থামিয়ে দিয়েছি গল্প লেখা।
কথা ছিলো অন্তঃকরণে যত ঝড় উঠিলেও গল্প বলিবো কাঁদতে কাঁদতে হেসে দিব।সোনার পাখিটা আমার সব সোনার দিন নিয়ে গেলো।
তোর আর ভালো থাকা লাগবে না শুধু আমার সোনার খাঁচার সোনার পাখি হওয়া লাগবে। আবার আগের মতো করে তুই আমি মিলে সবাইকে রাজি করাবো আজব আজব কাজ করে বন্ধুমহল মাতাবো।

ইতি,
তোর হিতৈষী