বাংলাদেশী তরুণী মল্লিকার প্রেমের টানে সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে সিরাজগঞ্জে ছুটে এসেছেন তুরস্কের যুবক মুস্তফা। খবর পেয়ে মল্লিকার বাড়িতে ভিড় করছে স্থানীয়রা।
গত রোববার (২ নভেম্বর) বাংলাদেশে আসেন তুরস্কের যুবক মুস্তফা ফাইক। এরপর মুস্তফা ও মল্লিকার পরিবারের সম্মতিতে সোমবার রাতে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
জানা যায়, শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের কাকিলামারি গ্রামের দলিল লেখক কামরুজ্জামান মানিকের মেয়ে মল্লিকা। দীর্ঘ ৩ বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্ট্রাগ্রামে নিজের আইডিতে ছবি পোস্ট করেন মল্লিকা। সেই ছবি দেখে পছন্দ করেন তুরস্কের যুবক মুস্তফা ফাইক। এরপর থেকে শুরু হয় কথা। কথার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় ভাবের আদান প্রদান। তারপর তা রুপ নেয় প্রেমে। দীর্ঘদিনের প্রেমের পরিণতি দিতে সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গত রোববার বাংলাদেশে আসেন তুরস্কের যুবক মোস্তফা ফাইক। অবশেষে সোমবার রাতে দুই পরিবারের সম্মতিতে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
এই খবর ছড়িয়ে পরলে তরুণীদের বাড়িতে ভিড় করে এলাকার শত শত মানুষ। প্রত্যেকেই এই ঘটনায় আনন্দ প্রকাশ করে জানান, এরকম ঘটনা আমরা কোনোদিন দেখিনি। তুরস্কের যুবক আমাদের এলাকার মেয়ের ভালোবাসার টানে চলে এসেছে এতে আমরা অনেক আনন্দিত। এসময় প্রত্যেকেই নবদম্পতির জন্য দোয়া ও শুভকামনা জানান।
মুস্তফা ফাইক সাংবাদিকদের বলেন, প্রেমের টানে বাংলাদেশে এসেছি। পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে করেছি মল্লিকাকে। তাকে বিয়ে করতে পেরে আনন্দিত ও উৎফুল্ল। বাংলাদেশের মানুষ ও প্রকৃতি অনেক ভালো লেগেছে বলেও জানান এই যুবক।
তিন বছরের সম্পর্ক বিয়েতে পরিণতি পাওয়ায় খুশিতে আত্মহারা মল্লিকাও। তিনি জানান, ভিসা প্রসেসিং শেষ হলেই পাড়ি জমাবেন তুরস্কে।
মল্লিকা বলেন, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থানরত এক আত্মীয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩ বছর আগে ইনস্টাগ্রামে আমাদের পরিচয় হয়। তখন থেকেই দুজনের মন দেওয়া-নেওয়ার শুরু। দুজনের পরিবারের সম্মতিতে এর আগে আমি তুরস্কে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করলে সেটা নাকচ হয়। এরপর কোনো উপায় না পেয়ে মোস্তফা বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
মল্লিকার মা ও স্বজনেরা এমন বিয়ে মেনে নিয়ে তারাও আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, দুই পরিবার আগে থেকেই এই বিয়েতে রাজি ছিল।
শাহজাদপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি শুনেছি তবে সেখানে যাওয়া হয়নি। তিনি বৈধভাবে এসেছেন এবং শুনেছি দুজনের পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছে। যেহেতু তারাও আমাদের কিছু জানাননি তাই আমাদেরও আর যাওয়া হয়নি।
এদিকে প্রেমের টানে পটুয়াখালীতে এসেছেন লঙ্কান যুবক দিলশান মাদুরাঙ্গা। গত বুধবার (৬ নভেম্বর) তিনি পটুয়াখালীর দশমিনায় আসেন এবং বৃহস্পতিবার সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি মেনে প্রেমিকা সুবর্ণা আক্তারের সঙ্গে তার বিবাহ হয়।
জানা যায়, পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের মধ্য গছানী গ্রামের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন সিকদারের মেয়ে সুবর্ণা গত পাঁচ বছর আগে কাজের সন্ধানে জর্ডানে যান। সেখানে তিনি একটি গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
স্থানীয়রা জানায়, এক মাস আগে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন সুবর্ণা। দেশে ফিরলেও দিলশান মাদুরাঙ্গার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। গত ৬ নভেম্বর সকালে দিলশান মাদুরাঙ্গা ওরফে দিলশান ইসলাম পটুয়াখালী আসেন। সেখানে উভয়ের সম্মতিতে ৭ নভেম্বর পটুয়াখালী নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে তাদের বিবাহ হয়। পরে একই দিনে সুবর্ণার গ্রামের বাড়ি বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের মধ্য বাঁশবাড়িয়ায় ইসলামী শরিয়াহ মতাবেক বিবাহ সম্পন্ন হয়।
শ্রীলঙ্কান পাত্র দিলশান মাদুরাঙ্গা ওরফে দিলশান ইসলাম বলেন, ‘আমরা দুজন একই গার্মেন্টসে কাজ করতাম। সেখানেই পরিচয় হয়। গত পাঁচ বছরের সম্পর্ক, আমাদের পরিবার সম্পর্কের বিষয়ে জানেন এবং তাদের সম্মতিতে বিবাহ করেছি।’
সুবর্ণার বাবা নিজাম উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘আমার মেয়ের সুখেই আমার সুখ। এখানে আমার কিছুই বলার নাই। তবে দোয়া করি ওরা যাতে ভালো থাকে।’