Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বন্ধু | শিকড় ৭ম সংখ্যা

বাঁশখালী এক্সপ্রেস বিগত ৮ বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়কে উপজীব্য করে তরুণ সমাজকে সাহিত্যচর্চায় উদ্ভুদ্ধ করে আসছে। তাঁদের চিন্তার রাজ্যে যেসব বিষয় দোলা দিয়ে যায় নিত্য, সেখান থেকে ইতিবাচক নির্যাসটুকু দিয়েই বাঁশখালী এক্সপ্রেসের শিল্প ও সাহিত্য বিষয়ক আয়োজন ‘শিকড়’র পথচলা শুরু। আপনাদের গল্প গুলো পরম মমতায় তুলে আনা পাশাপাশি জনপদের লেখিয়েদের লেখালেখির চর্চার একটি ক্ষেত্র তৈরী করে দেয়ার উদগ্র বাসনা আর স্বপ্নের যুগপৎ প্রচেষ্টা এই শিকড় । আজ ৩০ জুলাই সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব বন্ধু দিবস’। জীবনের বন্ধুদের গল্পগুলো তুলে ধরতে বলা হয়েছিল এই আয়োজনে। শতাধিক অনুভূতিতে থেকে ১০টি লেখা নির্বাচন খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজার মত। প্রত্যেকে ভাল লিখেছেন। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। শুরুর গল্পের ‘নেচার’ আমাদের মাঝে নেই, তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক।
_রহিম সৈকত
সম্পাদক, শিকড় ৭ম সংখ্যা।

১.

সাহেদুল ইসলাম ◾

বন্ধু মানে শুধু মজা করা বা আড্ডা করা নয় বন্ধু মানে একে অপরের খুশিতে খুশি হওয়া, একে অপরের দুঃখে পাশে দাঁড়ানো, আবার একে অপরের স্বপ্ন পূরণের রাস্তায় সঙ্গী হয়ে ওঠা। বন্ধুদের স্থান জীবনে পরিবারের ঠিক পরেই আসে। আমাদের জীবনে বন্ধুদের গুরুত্ব ঠিক কতটা তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

আজকে বাঁশখালী এক্সপ্রেসের মাধ্যমে আমি আমার প্রয়াত বন্ধু নেচার কে স্মরণ করছি।

প্রয়াত বন্ধু নেচারের সঙ্গে লেখক

ছোট দুইটা ঘটনা বলি :
১। আমি যখনি বাড়িতে যাবো বলতাম তখনই সে আমি যাওয়ার খোঁজ নিতো এবং বাসায় ঠিকঠাক মতো পৌঁছেছি কি না জিজ্ঞেসা করতো। সে মারা যাওয়ার আগের দিন ও আমি বাড়িতে গেলাম এবং সে যথারীতি আমাকে কল দিলো বমি কল পিক না করাতে এস এম এস দিলো। আমি তা ও রিপ্লে করলাম না। তার পরদিন দুপুরে জানতে পারলাম বন্ধু আমার আর কখনও খোঁজ নিবে না।

২। আমি একবার কোন এক পছন্দের মানুষের সাথে ১ম সাক্ষাত করতে যাওয়ার জন্য তাকে ভোর ৪ টায় ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গেছিলাম। সে আমাকে বলতো এর শোধ আমি নিবো তোর বিয়ের দিন। কিন্তু বন্ধু আমার যে শোধ নিতে কখনও যে আসবে না!

আসলে কারো মনে কারো জায়গা হলে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো অনুভূতি থাকে না। সে আমার এতো আপন ছিলো আমি কিছু না বলতে বুঝে যেতো। খারাপ সময়ে দুঃখ না পেয়ে হাসানোর চেষ্টা করতো , আমার যত ভাবনা নিজের ভাবনা বানিয়ে নিতো, আসলে এই মানুষ গুলোয় প্রকৃত বন্ধু বলে। যে বয়সে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় থাকার কথা সেই বয়সে আল্লাহর মেহমান। খুব মিস করছি বন্ধু তোকে। ভালোবাসি বন্ধু। মহান আল্লাহ তোকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুক।
লেখক,
প্লানিং এক্সিকিউটিভ
মার্চেন্টেক্স বায়িং হাউজ, ঢাকা।
২.
বন্ধুত্ব
ফয়েজুন্নেসা মিলি ◾
বন্ধু হলো মন ভালো করার একটা ম্যাজিক ঔষধ। একে অন্যের সুখে-খুশিতে লাফিয়ে ওঠার; একে অন্যের দুঃখে পাশে দাঁড়ানোর। মন খুলে কথা বলা, হেসে গড়াগড়ি খাওয়া আর চূড়ান্ত পাগলামি করার একমাত্র আধার এ ‘বন্ধুত্ব’। বন্ধুত্ব কোনো বয়স মেনে হয় না, ছোট-বড় সবাই বন্ধু হতে পারে। তবে বন্ধুত্বের মধ্যে যে জিনিসটা অবশ্যই থাকা চাই তা হল ‘ভালোবাসা’। বন্ধু শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো সুহৃদ , মিত্র, সখা, প্রিয়জন ইত্যাদি। বন্ধু¡ বলতে শুধু ভালবাসার মানুষেকেবোঝায় না। আগেই বাংলা একাডেমীর দেওয়া অর্থ বলেছি। এটা অনেকটা বন্ধু আর প্রেমিক প্রেমিকার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শব্দের অর্থের দিক থেকে। এর ব্যাখ্যা যদিও অনেক বড়। এ বিষয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর একটি লেখায় বলেছেন, “বন্ধুত্ব ও ভালোবাসায় অনেক তফাৎ আছে, কিন্তু ঝট্ করিয়া সে তফাৎ ধরা যায় না। বন্ধুত্ব আটপৌরে, ভালোবাসা পোশাকী। বন্ধুত্বের আটপৌরে কাপড়ের দুই-এক জায়গায় ছেঁড়া থাকিলেও চলে, ঈষৎ ময়লা হইলেও হানি নাই, হাঁটুর নীচে না পৌঁছিলেও পরিতে বারণ নাই। গায়ে দিয়া আরাম পাইলেই হইল। কিন্তু ভালোবাসার পোশাক একটু ছেঁড়া থাকিবে না, ময়লা হইবে না, পরিপাটি হইবে। বন্ধুত্ব নাড়াচাড়া টানাছেঁড়া তোলাপাড়া সয়, কিন্তু ভালোবাসা তাহা সয় না। ”কেউ যদি বলে বন্ধুত্বেররঙ কী? আমি বলবো হলুদ। আসলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয় অনেক পবিত্র।

আরও পড়ুন  বাঁশখালী সমিতি, কক্সবাজারের যাত্রা শুরু
বন্ধু পরিবেষ্টিত লেখক মিলি

বন্ধু হবে ছেলে মেয়ে উভয়েই।এর মধ্যে কোন কলুষতা থাকে না। এই পবিত্র সম্পর্ককে অনেকে অনেক ভাবে দেখে। যাদের নেতিবাচক দৃষ্টি ভংগী এই বন্ধু শব্দটি নিয়ে তাদের উচিত দৃষ্টি ভংগীর পরিবর্তন করা। আমরা যেহেতু সামাজিক জীব। তাই বন্ধু ছাড়া কেউ চলতে পারে না। ভালো বন্ধু সব সময় ভালো কাজ করে এবং ভালো কাজে সহায়তা করে। মানবিক বন্ধু রয়েছে যারা সবসময় বন্ধুর বিপদে সহায়তা করে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর বন্ধু কাজী মোতাহার হোসেনকে এক চিঠিতে লিখেছেন বন্ধু, তুমি আমার চোখের জলের মতিহার, বাদল রাতের বুকের বন্ধু। যেদিন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর আর সবাই আমায় ভুলে যাবে, সেদিন অন্ততঃ তোমার বুক বেঁধে উঠবে। তোমার ঐ ছোট্ট ঘরটিতে শুয়ে, যে ঘরে তুমি আমায় প্রিয়ার মত জড়িয়ে শুয়েছিল, অন্ততঃ এইটুকু শ্বান্তনা নিয়ে যেতে পারবো, এই কি কম সৌভাগ্য আমার !!!”সবাই আবার প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। বন্ধু হবে সেই জন যে মনের ভাষা পড়তে জানে।বলার আগে বুঝতে পারে মনের কথা। অনুভূতি গুলো উপলব্ধি করতে পারে। ভুলগুলো শুধরে দিতে জানে।
তাই এই শন্দটিকে কেউ কলংকিত করতেন না। বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা দুটা আলাদা বিষয়। এই দুই বিষয়কে এক করা উচিত নয়। ভালবাসায় থাকে কামনার ছোঁয়া আর বন্ধুত্বে থাকে পবিত্রতার ছোঁয়া।
সবার বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট থাকুক।
লেখক,
সহকারী শিক্ষক,
এয়াকুবদন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

বন্ধত্বের কোন সীমানা নেই, নেই কোন গোত্র

৩.
বন্ধু মানে
হাবীব বিন ইদ্রিস ◾

বন্ধু মানে প্রখর রোদে,
একটু শীতল হাওয়া।
বন্ধু মানে এক জীবনে,
অনেক কিছু পাওয়া।

বন্ধু মানে সকাল বেলা,
বন্ধু মানে সাঝ।
বন্ধু মানে মনের কথা,
বলতে নেইকো লাজ।

বন্ধু মানে রাখাল ভাইয়ের,
মিষ্টি সুরের বাঁশি।
বন্ধু মানে শত ব্যস্ততায়,
থাকা পাশাপাশি।

বন্ধু মানে দুজনেরই,
হয়তো একই চাওয়া।
বন্ধু মানে সবকিছুতে,
হৃদয়ে মিল হওয়া।

বন্ধু মানে হাতে হাত রেখে,
একই সাথে চলা।
বন্ধু মানে মনের কথা,
অনায়াসে বলা।

বন্ধু মানে কাছে থেকে,
বুকে জড়িয়ে রাখা।
বন্ধু মানে রাগ নয়,
অভিমানে থাকা।

বন্ধু মানে একই পথে,
একই সাথে নামি।
বন্ধু মানে টেনশন নাই,
তুর আরেক আমি।
৪.
সেইম স্কুলে পড়াশোনা করলেও কোচিং সেন্টারে-ই মূলত আমাদের পরিচয়।দুজন দুজনের এতো প্রিয় হয়ে উঠেছিলাম যেন এক আত্মা দুই দেহ।খুব সুন্দর একটা বন্ধুত্ব হয়েছিলো আমাদের মাঝে।এমন একটা দিন ছিলো না যেদিন আমরা আলাদা বেঞ্চে বসেছি বা পাশাপাশি বসি নি এমন।ছোট ছোট দুটি মানুষ ছোট ছোট খুনসুটি,ভালোবাসার সঙ্গে ভালোই দিন কাটাচ্ছিলাম।কিন্তু একটু অভিমানের জন্য বেড়ে গেছিলো দুরত্ব ,কিন্তু দেখতে তো পেতাম দুজন দুজনকে।যখন স্কুল ছেড়ে চলে গেলি তখন থেকে শুরু হলো আমার দুর্ভিষহ দিন।তখন-ই উপলব্ধি করলাম একেই বুঝি বলে বেস্ট ফ্রেন্ড।অনেক ফ্রেন্ড থাকার পরও তোর জায়গা টা স্পেশাল হয়েই থেকে গিয়েছিল।আমাদের বন্ধনটা এমন ছিলো দুজন দুজনকে ছাড়া ভালো থাকতে পারিনি।তাই তো আবার ফিরে এলাম দুজন দুজনের লাইফে। অনেক ভালোবাসি জান্নাতুল যা প্রকাশ করতে পারবো না। আর তোকে নিয়ে লিখা তো ফুরোবেই না তাও আজকের দিনে কয়েকটা লাইন তো লিখতে-ই হয় তোর জন্য।
তাসনিয়া তাবাসসুম ◾
পশ্চিম চাপাঁছড়ি,বাঁশখালী
৫.
আমার স্বামীর কথা। আমার জীবনে আসার পর থেকে কখনো কোনো কিছুর জন্য টেনশন করতে হয়নি। সব সময় তার কাছ থেকে যা চেয়েছি সবই পেয়েছি।ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করার। কিন্তু আমার পরিবারের মধ্যে কুসংস্কার বিদ্যমান ছিল। বাবা বলতো মেয়েরা পড়াশুনা করে লাভ নেই। কারন চাকরি করলে তো স্বামীই পাবে টাকা। এসব কথা আমি শুনতাম আর খুব কান্না করতাম।আমাকে সব সময় আমার স্বামী বলতো তোমার বাবা টাকা না দিলে তো সমস্যা নাই আমি তো কোনো কিছুর কমতি রাখছি না। শহরে থেকে পড়াশুনা করা যে কত কঠিন আর প্রত্যেক মাসে কত টাকার প্রয়োজন তা যে শহরে থেকে পড়াশুনা করে সেই জানে। ওকে টাকার জন্য বলতে হত না কখনো যখন টাকার প্রয়োজন হত তখন ই পাঠাই দিত।যখন ই অসুস্থ হতাম তখন ই আমার কাছে ছুটে যেত। মাজে মাজে আমি ভাবি একটা মানুষ কেমনে এত মনুষ্যত্বের অধিকারী হতে পারে। মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা আমাকে এমন স্বামী দান করার জন্য।
_ফাতেমা করিম, কাথরিয়া।

৬.
হঠাৎ দেখা হোক তোদের পানে, ঠোঁটের কোনায় ফুটুক সতেজতার হাসি। খুব কাছাকাছি এসে জড়িয়ে ধরে কাটুক অন্তত খানিকক্ষণ। আমাদের আত্মার অভয়ারণ্যে আলিঙ্গন যেন চোখের কোনায় নোনাজল মেখে দেয়। দীর্ঘ বিচ্ছেদের ইতিকথা টেনে আত্মাগুলো কোমলতার স্পর্শে বাঁচুক। যেখানে কাটুক ঝঞ্ঝাটময় জীবনের অবসাদ; ফিরে পাক শৈশবের অতৃপ্ত রসনায় হারানো দিনের গল্পগুলো। আঁধার কেটে আলো আসুক, সতেজ হোক বন্ধুত্বের অবনী। নিপাত যাক ব্যস্ততার, গ্লানি-ক্লেদ। তোদেরকে অদ্ভুত রকমের ভালোবাসি বন্ধু, তোদের সাথে দেখা হওয়ার তৃষ্ণায় ধুঁকছি শতাব্দীর জাঁতাকলে।

আরও পড়ুন  বাঁশখালী স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন এর বর্ণাঢ্য নবীন বরণ অনুষ্ঠান

অতঃপর ব্যস্ততা কাটুক, ভালোবাসাগুলো বাঁচুক। এভাবেই অবনীর প্রতিটি প্রান্তজুড়ে আমাদের দেখা হোক। যেখানেই থাকিস তোরা, ভালো থাকিস।

এস.এম.রাহমান জিকু,
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ।
৭.
মানব জীবনে সম্পর্ক বড়ই অদ্ভুত জিনিস। এই মায়ার বাঁধন মানুষের মনকে বেঁধে রাখে এক প্রচণ্ড সংবেদনশীল বাঁধনে আর বন্ধুত্ব হল এমনই সম্পর্কের এক অমূল্য সমীকরণ। শৈশব, কৈশোর, যৌবন এবং বৃদ্ধ বয়সে মানুষের পরিস্থিতি বদললায় কিন্তু বন্ধুত্বের জায়গায়টা ঠিকই জীবণের প্রথম দিকের মতোই রয়ে যায়। ভালো বন্ধু মানুষের জীবণের মোড় ঘুরিয়ে দেয় আবার অসৎ বন্ধুর সংস্পর্শে অনেকে হারিয়ে যায় অন্ধকারে। তাই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়াটাও বাঞ্চনীয়। বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন “গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধু তেমনি একটি বিশেষ জাতের মানুষ”। বিশেষ জাতের মানুষ অর্থাৎ বন্ধু সবার জীবণে গোলাপের মতো সুভাষ ছড়িয়ে দিক, সুখ – দুঃখের সময়গুলোতে পাশে দাড়িয়ে সাহস যোগাক, বন্ধুর হাত ধরেই সবার পথচলা হোক আলোর পথে।

রিয়াজুল হক রিফাত
সংবাদ কর্মী।
৮.
“হে বন্ধু তুমি যদি একশ বছর বেঁচে থাকো, আমি যেনো একদিন কম বাঁচি, যাতে তোমায় একদিনের জন্যেও মিস না করি।” বন্ধুত্ব আমাদের নানান প্রয়োজনে, নানান কারনে সীমাবদ্ধ থাকে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এখন মানুষের বন্ধুর অভাব হয় না। কিন্তু অভাব হয় প্রকৃত বন্ধুর। যতোই আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছি, ততোই আমাদের মাঝে রোবটিকতা কাজ করছে। আর কমে যাচ্ছে প্রকৃত বন্ধু। সঙ্কুচিত হচ্ছে আমাদের আবেগ।বন্ধুত্ব হল দুটি মানুষের মধ্যে আত্নিক সম্পর্ক, যেখানে থাকেনা কোন হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা,পরশ্রীকাতরতা। নিখাদ বন্ধুত্ব হচ্ছে সেই সম্পর্ক যেখানে একজন আরেকজনকে নিস্বার্থভাবে সাহায্য করে, সুসময়ে, দুঃসময়ে, সবসময় তার পাশে থাকে।বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক যার মাঝে জড়িয়ে আছে ভালবাসা ও আবেগ। আপনার আনন্দ এবং দুঃখে আপনার পাশে কেউ না থাকলে আনন্দ যেমন বহুলাংশে মাটি হয়ে যায়, তেমনি দুঃখও সহজে হালকা হয় না।মানুষ যখন বেদনাভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে তখন বন্ধুর কাছ থেকে সে প্রথম সান্ত্বনা পায়, আর যখন আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে তখন এ আনন্দের খবর সে প্রথম বন্ধুকেই জানায়। বন্ধুত্ব কখনো কারো আর্থিক ও বাহ্যিক অবস্থান দেখে হয় না …মনের অজান্তে গড়ে ওঠে এই বন্ধুত্ব। আর এই বন্ধুত্ব টিকে থাকে পারস্পরিক চিন্তাভাবনা ও মূল্যবোধের গুরুত্ব দেওয়া,ও কম্প্রোমাইজ করার প্রবনাতার উপর ভিত্তি করে।
রুমা চৌধুরী
পটিয়া সরকারি কলেজ।
৯.
বন্ধুত্ব নিয়ে লেখা হয়েছে কতো না কবিতা, গল্প-উপন্যাস! ছোট্ট একটি সুখের গল্প বলি, ২০০৯ সাল। ষষ্ট শ্রেনিতে সবেমাত্র ভর্তি হয়েছিলাম। জ্বরের কারণে টানা ১০-১৫ দিন স্কুলে যেতে পারিনি। একদিন দেখি টিফিন ছুটির পর পুরো ক্লাসের সবাই আমাকে দেখার জন্য আমার বাড়িতে উপস্থিত। একসাথে সবাইকে দেখে আমি অর্ধেক সুস্থতা বোধ করেছিলাম। যাদের দেখে এখনো আমি সুখবোধ করি তাদের দুঃখে চোখে জল আসে। আরো কতশত স্মৃতি-গল্প জড়িয়ে তা একটি কথায়, একটি গানে কিংবা গল্প-কবিতায় প্রকাশ করা যাবেনা। বন্ধুত্ব হলো মাটি আর আকাশের বন্ধন। বন্ধুত্ব মানে-
নিঃসঙ্গের সঙ্গী। যখন খুব প্রয়োজন, আকাশ মাথায় ভেঙ্গে পড়বে পড়বে, তখন খুঁজে পাওয়া ওই দুটি হাত।
স্মৃতিগুলো যত,
ছিল শত শত
-ভুলিনি এক চিলতেও তার এখনো।
বন্ধু তোমরা যেখানেই থাকো খুঁজে পেতে পারি যেন হঠাৎ স্মরণে,
যেখানেই থাকো যেভাবেই থাকো
মনে রেখ -আমিও আছি তখনো।

আরও পড়ুন  রায়পুরায় টেঁটা নিয়ে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, ১০ জন আহত

_আরফাত ওয়াজেদ শাওন

১০.
হারানো বন্ধুর খোঁজে

একটি অপরিচিত আইডি থেকে মেসেজ আসে হাই! জবাবে লিখলাম হ্যালো! কিছুক্ষন পর, সরি সরি, আমার ছোট ভাই ফুলের ছবি দেখে মেসেজ দিয়েছে আমার আইডি থেকে। আমিই দিই নাই। হাসির ইমো দিয়ে প্রতিত্তোরে লিখলাম ‘ঠিক আছে’ এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। একদিন লিখলাম ‘ভাল আছেন? এইভাবে শুরু। আমরা এক সাথে অনেক সময় পার করতাম। কথা বলতাম,পড়াশোনা থেকো শুরু করে করতাম ভাব বিনিময়। আমি কি করছি বা কি করবো না দেখেই ও বলে দিতে পারত। আমি তার কাছে সব সময় হেরে যেতাম, হেরে যেতাম তাঁর ভালোবাসার কাছে। অসম্ভব মায়ায় খোঁজ নিত আমার সে। কোনো এক অনিবার্য কারণে আমার সাথে ওর আর যোগাযোগ নেই। ১৬’ই ডিসেম্বর ২০২২ এর থেকে মানুষটির সাথে সর্বশেষ কথা হয়। কেমন আছে? কি করছে? কোন বিপদ হয়নি তো? কত কিছু মনে আসে! চর্ম চক্ষে, সশরীরে না দেখা মানুষটির জন্য এত এত মায়া জমিয়ে রেখেছি। মানুষটি বাঁশখালীর পুইছড়ি নামে কোন গ্রামের হবে হয়ত। ফেসবুকে বাঁশখালী নামে যত পেইজ, আইডি আছে ডু মেরে দেখি। কোনভাবে তাঁর ছায়া টুকুর দেখা পাই সেই আশায়। সর্বশেষ বাঁশখালী এক্সপ্রেস নামে ফেসবুক পাতায় বন্ধু দিবসে ‘লেখা আহবান’ দেখতে পেয়ে এই লেখাটি দিলাম। সম্পাদকের যদি দিল গলে, আর কোন না কোন ভাবে সে যদি শুনে, সে দেখে সেই আশায়!

রাকিব হাসান, দিনাজপুর।