তৌহিদ-উল বারী ▪️
পাহাড়-সাগড়ের অপূর্ব মিতালীর এক অনন্য জনপদ চট্টগ্রামের বাঁশখালী। এ উপজেলার বুক ছিড়ে প্রবাহিত খালটিই জলকদর খাল নামে পরিচিত। ১৫০ বর্গমাইলের এই উপজেলার ঐতিহ্যের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে জলকদর খাল। খানখানাবাদের উত্তর সীমান্তে ঈশ্বরবাবুর হাট পয়েন্ট ও রাতারকুল গ্রামের জেলেপাড়া ঘেঁষে জলকদর সাঙ্গু নদীতে মিলিত হয়েছে। জলকদর খালটি শঙ্খ নদী হয়ে খানখানাবাদের অভ্যন্তরে বাহারছড়া, কাথারিয়া, সরল, গন্ডামারা, শীলকূপ, ছনুয়া, শেখেরখীল মধ্যবর্তী হয়ে আবারো দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের সাথে পড়েছে।
একটা সময় বাঁশখালীর ব্যবসায়ীগণ নৌকা ও সাম্পানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে এই জলকদর খাল হয়ে মালামাল নিয়ে আসতেন শঙ্খ নদীপথে। কিন্তু জলকদর খালের অধিকাংশ এলাকা অবৈধ দখলদার ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় পূর্বের সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ। এখন আগেরমতো সেই চিত্র তেমন একটা চোখে পড়েনা। দখল আর ভরাটের প্রেক্ষিতে সরু হয়ে আসছে এই জলকদর খাল। ফলে বোট চলাচলে যথেষ্ট অসুবিধা পোহাতে হচ্ছে। এরফলে ব্যবসায়ীরা আগের মত মালামাল পরিবহন করতে পারছেনা।
বলা যায়, জালিয়াখালী বাজার, বাংলা বাজার, সরকারহাট ও শেখেরখীল ফাঁড়ির মুখ বাজার মাছ বেচাকেনায় জমজমাট থাকে। খালের এসব অংশে মোটামুটি পানি প্রবাহ থাকায় মাছের বোট ও নৌকা-সাম্পান চলাচল রয়েছে। আবার এসব এলাকায় দখলও বেশি হয়েছে, যা চোখে পড়ার মতো। এছাড়া খালের তীরে গড়ে ওঠেছে বহুতল ভবন। চর ও বাঁধ দখল করে গড়ে ওঠেছে ঘরবাড়ি। বাস্তুহারা হয়ে অন্য জায়গা থেকে এসে চর জায়গা জমিতে ঘরবাড়ি বেঁধে বসবাস করে আসছেন অনেকেই।
অপরদিকে জলকদর খালের সাথে বাঁশখালীর পূর্বাঞ্চলের ৮টি পাহাড়ি ছড়ার প্রবাহিত পানি খালে নামার জন্য অবস্থিত অধিকাংশ স্লুইচ গেট নানাভাবে দখল ও বন্ধ থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই বন্যার সৃষ্টি হয় খালের পূর্বাঞ্চলের এলাকাগুলোতে। বলতে গেলে এ জলকদর খালটি জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও নানাভাবে দখলদারের দখলদারত্বে থাকায় বর্তমানে পানি নিস্কাশনে বাঁধাগ্রস্ত হয়ে সাধারণ জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অল্প বৃষ্টি হলেই বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসলি-জমি। ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে কৃষক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ।
বলতে গেলে এক সময়ের জনগুরুত্বপূর্ণ এই ঐতিহ্যবাহী জলকদর খালটি আগের রুপে নেই। কালের বিবর্তনে হারিয়ে পেলেছে তার রূপ, যৌবন। বর্তমানে এ জলকদরখালকে অনেকটা মৃত বললেই চলে। অথচ নদীমাতৃক এ দেশে এমন একটা বিষয় সচেতনমহলকে দারুণভাবে ভাবায়।
তবে খালটি খনন করে পুনরুদ্ধার করা হলে হাজার হাজার একর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। কৃষিপণ্য, লবণ চাষ ও মাছ উৎপাদন এবং পর্যটনের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। বাঁশখালী নয়, দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অতীতের মতো বড় অবদান রাখবে এই জলকদর খাল। এরজন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এমন সম্ভাবনাময়ী জলকদর খালকে হেয়-অবহেলায় হারিয়ে যেতে দিলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি একটা সময় পুরো খালটিই বিলীন হয়ে যাবে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতিমধ্যে খালটিরবুকে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার কথা উঠলেও তা শতভাগ বাস্তবায়ন করা হোক। হারিয়ে ফেলা জলকদর ফিরে পাক তার হারানো যৌবন। অবসান ঘটুক লোকেমুখে বলা সেই মুখের বুলি'র "বারো মাসই জলকদর দখল করি, বর্ষায় বানের জলে ডুবে মরি"
লেখক : তরুণ কলামিস্ট
সম্পাদক ও প্রকাশক : পারুল আকতার
ইমেইল : banshkhaliexpress@gmail.com
www.banshkhaliexpress.net | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত | © CW26020