
রহিম সৈকত ◾
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ২০২৫ সালের দাখিল ও ফাজিল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবারের ফলাফলে কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন নিজেদের সাফল্যে আলোচনায় এসেছে, তেমনি কিছু প্রতিষ্ঠান পিছিয়ে পড়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। মাদ্রাসাগুলোর এই ফলাফল উপজেলায় ইসলামি শিক্ষার গুণগত মান এবং প্রশাসনিক মনোযোগের দরকারীয়তার প্রতি নতুন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
নেতৃত্বে আম্বিয়াখাতুন মহিলা মাদ্রাসা:
প্রকাশিত ফলাফলে শীর্ষস্থান দখল করেছে আম্বিয়াখাতুন মহিলা মাদ্রাসা, যেখানে মোট ২৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পাসের হার ৯২ শতাংশ এবং একজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। ছাত্রীদের এ সাফল্য শিক্ষার্থীদের অধ্যবসায় এবং শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টার একটি উজ্জ্বল প্রমাণ।
দ্বিতীয় অবস্থানে যাতানুরাইন ফাযিল মাদ্রাসা:
যদিও শিরোনামে যাতানুরাইন ফাযিল মাদ্রাসার নাম শীর্ষে উঠে এসেছে, প্রকৃতপক্ষে পাশের হারে এটি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ৪৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৮ জন উত্তীর্ণ হয়ে মাদ্রাসাটি ৮৪.৪৪% পাসের হার অর্জন করেছে। যদিও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী নেই, তবে সামগ্রিক ফলাফল প্রশংসাযোগ্য।
তৃতীয় স্থানে বাগমার ওলি শাহ (র.) সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা:
৫৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৬ জন উত্তীর্ণ হয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি ৮৩.৬৪% পাসের হার অর্জন করেছে। এটি প্রতিষ্ঠানটির ধারাবাহিক ফলাফলের একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাঁশখালীর মোট ২৩টি মাদ্রাসার ফলাফলে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেনি। যেমন, চাম্বল হযরত খাদিজাতুল কোবরা (রা.) মহিলা দাখিল মাদ্রাসা সর্বনিম্ন ৩৬.১৭% পাসের হার নিয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আহমদিয়া দালাম পীর (র.) আলিম মাদ্রাসা (৪১.৩০%) ও পশ্চিম বাঁশখালী দারুল ইসলাহ দাখিল মাদ্রাসা (৪৫.১৬%) সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান পঞ্চাশ শতাংশের নিচে রয়েছে। শিক্ষক ঘাটতি, শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা – পিছিয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানের মূল কারণ হতে পারে। প্রশাসনিক পর্যায়ের হস্তক্ষেপ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে পাঠদান মনিটরিং জোরদার করার মাধ্যমে ফলাফলে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। এক নজরে ২৩ প্রতিষ্ঠানের ফলাফল :
১. আম্বিয়াখাতুন মহিলা মাদ্রাসা
ইআইআইএন: ১৩৮০৮২)
২. জাতা নুরাইন ফাযিল মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৯১)
৩. বাগমার অলি শাহ (র.) সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৮৫)
৪. চাঁদপুর কিউ. এইচ. আর. ডি. ইউ. আলিম মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৯৩)
৫. পুইছড়ি ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৮১)
৬. পুকুরিয়া আনসারুল উল. ফাযিল মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৮০)
৭. জালদি হোসাইনিয়া কামিল মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৯০)
১২. মিনাইঝারি তলা ইসলামিয়া হাকিমিয়া দাখিল মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৯৪)
১৩.
শাহ আমানত দাখিল মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০০০)
১৪. পালেগ্রাম হাকিম মিয়া শাহ আলিম মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৯৭)
১৫. শেখেরখীল দারুল সালাম আদর্শ আলিম মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৯৮)
১৬.
রংঙ্গিয়াঘোনা মনছুরিয়া ফাযিল মাদ্রাসা (১০৪০৮৩)
১৭.
কোকদণ্ডী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৮৪)
১৮. পশ্চিম বরোঘোনা রহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৮৯)
১৯. কদম রসুল হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৯২)
২০. উপকূলিয়া সানুয়া খুদুক খালী হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৯৯)
২১. পশ্চিম বাঁশখালী দারুল ইসলাহ দাখিল মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৮২)
২২. আহমদিয়া দালাম পীর (র) আলিম মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১০৪০৭৯)
২৩. চাম্বল হযরত খাদিজাতুল কোবরা (রা.) মহিলা দাখিল মাদ্রাসা (ইআইআইএন: ১৩১৭৬৭)
২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষার ফলাফল বাঁশখালীর মাদ্রাসা শিক্ষায় সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ—দুই-ই তুলে ধরেছে। শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে উঠেছে, তেমনি পিছিয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি হতে পারে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবার উপলক্ষ। ইসলামি শিক্ষার মান উন্নয়নে এখন প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা, নীতিনির্ধারক ও স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : পারুল আকতার
ইমেইল : banshkhaliexpress@gmail.com
www.banshkhaliexpress.net | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত | © CW26020