বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন

Byবাঁশখালী এক্সপ্রেস

এপ্রি ২৪, ২০২৪ #Banshkhali Express, #Banshkhali Express Live, #Banshkhali Express TV, #Banshkhali Mirror, #Banshkhali News, #Banshkhali Online Portal, #Banshkhali Plus, #Banshkhali Post, #Banshkhali Television Banshkhali News, #Banshkhali Times, #Banshkhali Today, #Banshkhali TV, #Bashkhali Maheshkhali, #Chattogram., #Chittagong, #Chittagong South, #History of Banshkhali, #Priyo Banshkhali, #আজকের বাঁশখালী, #খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন, #চট্টগ্রাম। Banshkhali, #দক্ষিণ চট্টগ্রাম, #প্রিয় বাঁশখালী, #বাঁশখালী, #বাঁশখালী অনলাইন পোর্টাল, #বাঁশখালী উপজেলা, #বাঁশখালী এক্সপ্রেস, #বাঁশখালী এক্সপ্রেস টিভি, #বাঁশখালী এক্সপ্রেস লাইভ, #বাঁশখালী টাইমস, #বাঁশখালী টিভি, #বাঁশখালী টুডে, #বাঁশখালী নিউজ, #বাঁশখালী পোস্ট, #বাঁশখালী প্লাস, #বাঁশখালী মহেশখালী, #বাঁশখালী মিরর, #বাঁশখালী সংবাদ, #বাঁশখালী সমাচার, #বাঁশখালীর ইতিহাস, #বাঁশখালীর খবর, #মুক্তিযুদ্ধে বাঁশখালী, #সমগ্র বাঁশখালী, #সারা বাঁশখালী

রহিম সৈকত ▪️

দেশমাতৃকার স্বাধীকার আন্দোলনে বাঁশখালী জনপদ থেকে যেসকল বীর সন্তান সম্মুখ যুদ্ধে লড়েছেন তাঁদের মধ্যে খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন একটি অগ্রগণ্য নাম। বাঁশখালীর সাংস্কৃতিক ও শিক্ষায় অগ্রজ পুরুষের চারণভূমি খ্যাত সাধনপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দ মোজাফ্ফরাবাদ গ্রামে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে খোন্দকার ইবনে আমিন ও মোস্তফা খাতুনের কোল জুড়ে আসেন ছমিউদ্দীন। বেড়ে উঠেন বাবা মায়ের শাসনে আদরে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিরক্ষায় সচেতন ছিলেন সবসময়

শিক্ষা ও কর্মজীবন :
সে বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ থেকে আই.এ. পাশ করার পর কিছুদিন স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়ন করেন এবং ২৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিমান বিধ্বংসী গোলন্দাজ বাহিনীর রাডার বিভাগে চাকুরিতে যোগদান করে। ০৫ মার্চ ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। চাকুরিকালীন সে ‘সিনিয়র লিডার ইনটেলিজেন্স কোর্স সম্পন্ন করেন। অবসর গ্রহন পরবর্তী থেকে আমৃত্যু সে নিজেকে বাঁশখালীর বিভিন্ন শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িত রাখে। সে দীর্ঘদিন বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও বাণীগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার উদ্যোগে বাণীগ্রাম স্কুলে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র বাঁশখালী-২ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মৃত্যুর আগে বাণীগ্রামে সে প্রস্তাবিত ‘উত্তর বাঁশখালী কলেজ’ এর প্রাথমিক কিছু কাজও সম্পন্ন করেছে।

বাঁশখালী কলেজে বধ্যভূমি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন (পুরাতন স্মৃতি মিনার)

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ : স্বাধীনতা যুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠলে সারাদেশ পাকিস্তানি হায়েনা ও দেশীয় দোসরদের থাবায় রক্তাক্ত হতে থাকে। ১৯ মে, ১৯৭১ সালে বাঁশখালীর কোকদণ্ডী, গুণাগরী ও কালীপুর গ্রামে পাক হানাদার বাহিনী পরবর্তীতে জলদী, চাষল, নাপোড়া ও শেখেরখীল গ্রামেও নগ্ন হামলা চালায় হানাদার পাকবাহিনী ও স্থানীয় দোসররা। হত্যা করা হয় নির্বিচারে সংখ্যালঘু ও স্বাধীনতাকামী মানুষদের। সেই উত্তপ্ত সময়ে সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসেন অকুতোভয় কেএম ছমিউদ্দীন। এসে দেখেন নিজ গ্রামেই নির্বিচার গণহত্যা, অগ্নিংসযোগ ও লুটপাট চালিয়ে, বিভীষিকাময় ধ্বংসস্তূপ।

খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন বাণীগ্রাম স্কুল ভবনের ভিত্তি প্রস্তর করছেন

বাবু সুশীল চন্দ্র রায় (প্রকাশ পেলু বাবু), ছাত্র ও যুবনেতা মোক্তার আহমদ (সাবেক এমপি), ডা. আবু ইউসুফ, সোলতান আনোয়ার, প্রফেসর আসহাবউদ্দীন আহমদ ও মোহাম্মদ হাসেম এর উৎসাহে ছমিউদ্দীন বাণীগ্রাম, বৈলগাঁও, রাতাখোর্দ্দ ও সাধনপুর এলাকার ৩৫ জন সাহসী যুবকের সমন্বয়ে গঠন করে বাণীগ্রাম মুক্তিবাহিনী। মাত্র এক মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান ও তাঁর নিজস্ব উদ্যোগে সংগৃহীত দুটো বন্ধুক, একটি স্টেনগান ও দুটো পিস্তলসহ সামান্য গোলাবারুদ নিয়ে শুরু হয় বাণীগ্রাম মুক্তিবাহিনীর যাত্রা। ছমিউদ্দীন এর নেতৃত্বে বাণীগ্রাম মুক্তিবাহিনী প্রথম গেরিলা আক্রমণ করে বাণীগ্রাম তহশিল অফিসে। তহশিল অফিসে আক্রমনের সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে গেলে ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষও যুক্ত হতে থাকে এই মুক্তি আন্দোলনে। এভাবেই শুরু হয় বাণীগ্রাম মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ আন্দোলন।
ক্রমান্বয়ে পর্যদুস্ত করা হয় তৎকালীন সাধনপুর ইউনিয়নের বোর্ড অফিসের শক্তিশালী রাজাকার ও হানাদার ঘাঁটি। ছমিউদ্দীন এর দূরদর্শিতায় সেসময় বাণীগ্রাম পাহাড়ে প্রাণভয়ে আশ্রিত হাজার হাজার নারীপুরুষ প্রাণে বেঁচে যায়। দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের ফলে ১২ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে  বাঁশখালী হানাদার মুক্ত হয়। আরো বিস্তারিত জানুন ছমিউদ্দীন এর লেখনী থেকে (রেফারেন্স/লিংক যুক্ত করা হবে)

আরও পড়ুন  আলোকোজ্জ্বল জীবন যাঁর, তিনি স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ
স্মারক স্তম্ভের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তৎকালীন এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সহ ছমিউদ্দীন

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় ছমি উদ্দীন : ১৯৮৯ সালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় বাঁশখালীর অন্যতম বধ্যভূমিখ্যাত বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ  সংলগ্ন স্থানে শহিদদের স্মৃতি রক্ষার্থে গণসমাধি নির্মাণ করেন যা বর্তমানে বধ্যভূমি কমপ্লেক্সে রূপান্তরিত হয়েছে। ২০১১ সালে বাণীগ্রাম মধ্যপাড়া পুকুর পাড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ২২ জন শহিদের স্মরণে নামফলক সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। ২০১৩ সালে বাণীগ্রাম কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারকে নতুন আঙ্গিকে সংস্কার করেন। ২০১৪ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত বাঁশখালীর ৯৮ জন শহিদের নামফলক সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ বাণীগ্রাম শহিদ মিনারের পাশে নির্মাণ করেন। ২০১৪ সালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ঢাকার রাজপথে ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে বাণীগ্রামে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভা ও মিছিল এর স্থানে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণ করেন।

বাণীগ্রামে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি মিনারে তৎকালীন এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও ছমিউদ্দীন

জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষানুরাগী ছমিউদ্দীন :
২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে ছমিউদ্দীন সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হয়ে এলাকার রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিষদভিত্তিক সেবার প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেন। পাশাপাশি বাঁশখালীর প্রাচীন বিদ্যাপীঠ বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন।

অর্জিত রাষ্ট্রীয় ব্যাজ

পারিবারিক জীবন : সহধর্মিণী মিসেস ছাকিয়া আকতারের যোগ্য সাহচর্যে ব্যক্তিজীবনেও জনাব ছমিউদ্দীন একজন সফল পিতা ও গৃহস্বামী। এক কন্যা ও তিন পুত্র সন্তান সুশিক্ষিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। বড় সন্তান ফাহমিদা আকতার নাজমা, বি.এ (অনার্স) এম.এ (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) পড়ালেখা শেষ শিক্ষকতা শুরু করেন। ববর্তমানে সহকারী অধ্যাপক, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ, কুমিল্লায় কর্মরত আছেন। ২য় সন্তান কে.এম সালাহউদ্দীন কামাল, বি.এম (অনার্স) এম.কম; এলএল.বি একজন জনপ্রতিনিধি। সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে পিতার যোগ্য উত্তরসূরী হওয়ার পথেই আছেন। পাশাপাশি সামাল দিচ্ছেন বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও রাতা খোদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির ভার। ৩য় সন্তান কে.এম. ইখতিয়ারউদ্দীন আরাফাত, বি.এসসি ইঞ্জিনিয়ার (চুয়েট), এমবিএ, সদ্য বিদায়ী ইউএনও এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, রামগড়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।  বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষারত।
কনিষ্ঠ পুত্র: কে.এম. জিয়াউদ্দীন ফাহাদ
এলএল.বি (অনার্স), মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ব্যবসায়ী।

আরও পড়ুন  রোজা সম্পর্কিত ৫টি হাদিস
এখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন

মৃত্যু : ০৩ জুন ২০১৫ তারিখে বিকাল ২.০০ টায় ভারতের কলকাতাস্থ টাটা মেডিকেল সেন্টারে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পদকপ্রাপ্ত বাঁশখালীর এই মহান সন্তান মৃত্যুবরণ করেন।

  • তথ্যসূত্র : 
    লাল মুক্তিবার্তা ০২০২৫০১২৯
    গেজেট নং ৪২০১
    দৈনিক আজাদী
    দৈনিক পূর্বকোণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *