
উপজেলার সবচেয়ে প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী বাগিচাহাট খাঁন জামে মসজিদ। জানা যায়, ১৬৬৬ সালে মুঘল শাসন আমলে প্রতিষ্ঠিত এ মসজিদ। মসজিদের দক্ষিণ পাশে ২২ মুঘল সেনার কবর। যা ‘বাগ-ই-শাহ’ কবরস্থান নামে পরিচিত। মসজিদ সংলগ্ন উত্তর পাশে নবী করিম (সা.) ও বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)’র কদম মোবারক রয়েছে। এ অঞ্চলে বসতি স্থাপনকারী পরগনা রাজ্যের বিশিষ্ট মুসলিম জমিদার, ধর্ম প্রচারক ও সূফি সাধক শাহ সূফি নবাব শেরে জামান খাঁ (রহ.) খাঁন শাহী জামে মসজিদ ও কদম রাসূল (দ.) দরগাহ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন।
মুঘল আমলে চুন সুরকি দ্বারা চার দেয়াল ঘেরা এক গম্বুজ বিশিষ্ট মাজার শরীফ নির্মাণ করা হয়। মুঘল স্থাপত্য রীতিতে চমৎকার ডিজাইনে নির্মিত মাজারের ভিতরে একটি স্তম্ভের উপর হুজুর পাক (দ.) এর বাম পা মোবারকের ছাপ এবং গাউছুল আজম দস্তগীর বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)’র ডান পা মোবারকের ছাপের চিহ্ন সম্বলিত পাথর স্থাপন করা হয়। যা যুগ যুগ ধরে আশেকানে রাসূলদের নিকট কদম রাসূল (দ.) বা কদম মোবারক (দ.) হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে।
মসজিদের দক্ষিণ পাশে মুঘল সাম্রাজ্যের ২২ জন সেনার কবর। কবরগুলো আজ থেকে প্রায় ৩’শ ৫৬ বছর পূর্বে ১৬৬৬ সালে মোগল আমলে চট্টগ্রাম বিজয়কালে সাঙ্গু নদীর পাড় পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণ কালে শহীদ হওয়া ২২ জন সেনার কবর। ২২ জন সেনার কবরের স্থান হিসেবে নাম দেয়া হয়েছিল ‘বাগ-ই-শাহ’ কবরস্থান। যেখানে মুঘলদের বাগিচা ছিল, পাশে ছিল ভান্ডারখানা। যা এখন ভান্ডারীপাড়া নামে পরিচিত এবং মুঘল বাগিচাকে হাটে পরিণত করে বাগিচাহাট নামকরণ হয়। ধর্ম-প্রচারক, শাহসূফি ইয়াছিন খাঁ পবিত্র মক্কা নগরী থেকে আনা নবী করিম (সা.) ও গাউছুল আজম দস্তগীর বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)’র পায়ের চিহ্নিত পাথর উপহার দেন আধু খাঁকে। তিনি মসজিদের উত্তর পাশের কক্ষে এ দু’টি স্থাপনা স্থাপন করেন। যা আজও ইতিহাসের স্মারক হিসেবে রয়েছে মসজিদের পাশের কক্ষে।
মসজিদের চারিপাশে বাউন্ডারি দিয়ে ভিতরে চুনসুরকি দ্বারা চার দেয়াল ঘেরা এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদ, ২২ কবরস্থান, কদম রাসুল (সা.) কক্ষগুলি দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কারের অভাবে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকার পর ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা সূফি সামশুদ্দীন আহমদ ভান্ডারী (রাঃ) বিপুল অংকের অর্থের বিনিময়ে মসজিদ, কবরস্থান, কদম রাসুল (সা.) সংস্কার করেন। বর্তমানে মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদে পরিণত হলেও পূর্বের চুন সুরকি দ্বারা নির্মিত মসজিদের চিহ্ন এখনো বহন করছে। প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভক্তরা এ মসজিদে এসে কদম রাসুল (সা.)-এ সম্মান প্রদর্শন করতে দেখা যায়।