বইপ্রেমীদের কাছে গ্রন্থাগার মানেই আনন্দের কিছু, গ্রন্থাগার মানেই ভালোবাসার জায়গা। যেদিন থেকে মানুষ অক্ষরকে পাথর, চামড়া বা পাতায় আটকে ফেলতে শিখেছিল সেদিন থেকেই তারা সেগুলো সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল। মূলত রাজা-বাদশারাই প্রথমে গ্রন্থাগারের সূত্রপাত ঘটান। সেগুলোই ছিল তখনকার সংস্কৃতি এবং জ্ঞান অর্জনের কেন্দ্র। পরবর্তী সময়ে এই গ্রন্থাগার থেকেই সূত্রপাত ঘটে বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের।

জ্ঞানার্জনের জন্য পড়তে হয় বইপুস্তক। মানুষ যাতে সহজেই বই সংগ্রহ করে জ্ঞানার্জন করতে পারে সে জন্য বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে পাঠাগার। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় এক ব্যতিক্রমী লাইব্রেরী যাত্রা শুরু করেছে। গত ২০ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এই উন্মুক্ত পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়।

লাইব্রেরি এক্স’র জন্য যাঁরা কাজ করছে

আনোয়ারায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই পাঠাগার নাম রাখা হয়েছে “লাইব্রেরী এক্স” যার মূল মন্ত্র ‘যেখানে জ্ঞান উন্মুক্ত ও সীমাহীন’। উন্মুক্ত এ পাঠাগারে কাজ করছে ২০ জনেরও অধিক শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে কেউ কেউ অনলাইন প্লাটফর্মে; আবার কেউ কেউ অফলাইনে ও পাঠাগারের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

পাঠাগারটিতে থাকছে বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য, রাজনীতি, ধর্ম, ভ্রমণ, আত্মজীবনী, ভাষা ও ইংরেজি ভাষার বই এবং আত্মউন্নয়ন বিষয়ক বই।

পাঠকরা যেভাবে সংগ্রহ করবেন :
এ পাঠাগারটি থেকে বই সংগ্রহ করতে হলে প্রথমেই যোগাযোগ করতে হবে পাঠাগারটির ফেসবুক পেজে। পাঠকের পছন্দ অনুযায়ী বইটি দিতে ফেসবুক পেজ থেকে কিপারের সাথে যোগাযোগ করা হবে; কিপার পাঠককে যে নির্দিষ্ট লোকেশন দিবে, সেই লোকেশনে এসে বই নিয়ে যেতে হবে। বই নেয়ার সাত দিনের মধ্যে বইটি ফেরত দিতে হবে। তবে, তারা প্রতি বইয়ে নামমাত্র মূল্যে দৈনিক ২ টাকা হারে সাত দিনে ১৪৳ নির্ধারণ করেছে।এছাড়াও নেয়া যাবে তিন মাসের মেম্বারশিপ।

মেম্বারশিপের সুবিধা সমূহ : পড়তে পারবে নিজের ইচ্ছামতন বই, যত খুশি ততটা। তবে বই সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে একটি করে বই সংগ্রহ করতে পারবে। মেম্বারশিপে আগ্রহী পাঠকদের মেম্বারশিপের ফি বাবদ ৭০৳ প্রদান করে মেম্বারশিপ কার্ড নিতে হবে।

আরও পড়ুন  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা নিরসনের মন্ত্রণালয়ের আদেশ

এ বিষয়ে লাইব্রেরী এক্সের পরিচালক মুনতাসিন হেলাল রাফি জানান, বর্তমান প্রজন্ম প্রযুক্তি নির্ভর হওয়াতে বই বিমুখী হয়ে গেছে। বিশেষ করে মোবাইল ফোনে আসক্তি, যেটি বর্তমান প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এসব চিন্তা ভাবনা মাথায় রেখে আমাদের এই ভিন্ন আয়োজন।

লাইব্রেরি এক্সের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ বোরহানউদ্দিন বলেন, লাইব্রেরি এক্সের প্রতিটি সদস্য যেমন শিক্ষার্থী; তেমনি যারা পাঠক থাকবে তারাও শিক্ষার্থী, চাকরিরত অবস্থায় বা অন্যরা যদি বই নিয়ে পড়তে চায় তাহলে পড়তে পারবে। তবে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি বিজ্ঞান চিন্তা, ও ইতিহাস গবেষণা নিয়ে কাজ করতে আমাদের সদস্যরা নিরলস পরিশ্রম করা যাচ্ছে।

পাঠাগারটি বর্তমানে আনোয়ারা উপজেলা সদরকেন্দ্রিক হলেও, পরবর্তীতে উপজেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *