রহিম সৈকত ▪️
স্বামী হারিয়ে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাততে পারত। পারত পরের অনুকম্পা নিয়ে বেঁচে থাকার প্রচলিত পথে হাটতে। কিংবা উদয়াস্ত পোশাক কারখানায় অমানুষিক খাটুনির শ্রম। আলিফা হাটলেন প্রথাবিরোধী পথে। সময়ের বিরুদ্ধ স্রোতে সাহস করে টমটম গাড়ি নিয়ে নেমে পড়লেন রাস্তায়।
বলছিলাম বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডস্থ প্রেম বাজার এলাকার মৃত্যু বাহাদুরের কন্যা আলিফার কথা। একদা সমাজের অন্য দশ গৃহিনীর মত তার সংসার ছিল। পাশের গ্রামের দরিদ্র পরিবারের এক ছেলের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। অভাবের সংসারে দুই কন্যা সন্তান নিয়ে কায়ক্লেশে কেটেই যাচ্ছিল দিন। কিন্তু নিয়তির ফেরে স্বামীকে অকালে হারান। দুই সন্তান নিয়ে অকুল পাথারে পড়ে যায় আলিফা তবে হাল ছেড়ে দেননি। এক বুক সাহস নিয়ে নেমে পড়লেন রাস্তায়। বাতাসের বেগে ছুটে চলছে তাঁর টমটম বেশিরভাগ যাত্রী নারী। সে নারী হওয়ায় নারী যাত্রীরা সচ্ছন্দে তার টমটমের সওয়ারি হয়।
কোন বিড়ম্বনা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বলে না এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি বরং সহযোগিতাই পাচ্ছি। যাত্রী, পুরুষ চালকরা সহযোগিতা করেন। অনেকে নারী যাত্রী এলে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন। অনেকে আবার নিজ থেকে চলে আসেন। কেউ কেউ ভাড়া বাড়িয়ে দিতে চান কিন্তু আমি আমার নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নিইনা। সারাদিনে যা আয় হয় তাই দিয়ে চলে যাচ্ছে। তবে এখন খুব গরম পড়ছে মাঝে মাঝে চোখেমুখে অন্ধকার দেখি গরমের তিব্রতায়। একটু সহযোগিতা পেলে স্বপ্নটা আরো বড় হত।
আমরা সফলদের গল্প বলি, উঁচু তলার গল্প ফাঁদি, আলিফাদের গল্প কে বলবে, কে শুনবে? সমাজের সুবিধা বঞ্চিত আলিফারা একটি নতুন যুগ সৃষ্টিকারী। নিজের অজান্তে তৈরী করে ফেললেন বাঁশখালীর বুকে ইতিহাস। আলিফারা করুণা চায়না, চায় সম্মানের সাথে বাস করতে। আলিফাদের সম্মানের সাথে বাস করার ব্যবস্থা রাষ্ট্র দেখতে পারে। পারে স্থানীয় সরকার প্রশাসন ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : পারুল আকতার
ইমেইল : banshkhaliexpress@gmail.com
www.banshkhaliexpress.net | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত | © CW26020