Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

স্বপ্না রানীর পুরস্কার রাখার একটি আলমারিও নেই

পুরনো মাটির ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে একটু ফুটো। সেটি আবার খড়ের বেড়া দিয়ে আটকানো। এলোমেলো এ ঘরে থাকা মাঝারি সাইজের একটি টিনের বাক্স থেকে বের করা হচ্ছে ট্রফি, সম্মানা স্মারক, মেডেলসহ একজন চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবল খেলোয়াড়ের যত অর্জন। সেগুলো বের করে একটি একটি করে টেবিলে সাজানো হচ্ছে ফটোসেশনের জন্য।

এটি সাফ চ্যাম্পিয়ন জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়ার স্বপ্না রানী বাড়ি। নিজের মেধা ও শ্রম উজাড় করে মাঠে খেলে দেশের সুনাম কুড়ালেও নিজের ভাগ্য বদলাতে পারেনি ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অংশ নেওয়া এই নারী ফুটবলার।

ভালো একটি ঘরে নিজের অনুপ্রেরণার জন্য হলেও তার এসব অর্জন পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখবে এমন জায়গাটুকুও নেই তার। এক প্রকার বাক্স বন্দি হয়ে থাকে চ্যাম্পিয়ন এই খেলোয়াড়ের যাবতীয় অর্জন।

জেলার রানীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বরা শিয়ালডাঙ্গী গ্রামে সাফ চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবলারের বাসায় গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।

ফুটবলার স্বপ্না রানীর বাবা নিরেন বাবু বলেন, আমার মেয়ে যখন ফুটবল খেলা শুরু করে তখন গ্রামের অনেকে অবজ্ঞা করেছিলো। টিটকারি মূলক কথা বলেছিলো। শুধু মেয়েকে নয়, আমাকেও বলেছিলো আমার মেয়েকে নাকি ভাঙা টিভিতে দেখা যাবে। ওসবে কান না দিয়ে মেয়েকে অনুপ্রেরণা দিয়েছি। গ্রামবাসী আমার মেয়ের সফলতায় খুশি হয়েছেন। মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন মানে আমিও চ্যাম্পিয়ন। আজ সারাদেশ আমাদের মেয়েদের নিয়ে গর্ব করছে।

কিন্তু এত অর্জনেও শঙ্কা থেকে তিনি বলেন, দেশের ফুটবল এখনো অনুন্নত। তাই মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত। মানুষ মনে করে এখন আমাদের অনেক টাকা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মেয়ের অর্জনগুলো সাজিয়ে রাখবো এমন একটা আসবাবপত্রও নেই। ওরা দেশের জন্য খেলে। তাই সরকার যেন ওদের সহযোগিতা করে। যাতে ওরা মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে। যারা দেশের জন্য খেলে সরকার যাতে তাদের একটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে ভূমিকা রাখে এটাই চাওয়া৷

আরও পড়ুন  দিনাজপুরে শিয়ালের আক্রমণে নারীসহ আহত ১৪

মা সাবিলা রানী জানান, ডিসের লাইন না থাকায় মেয়ের খেলা দেখতে পারিনি। ছেলে এসে যখন বললো মেয়েরা আবারও সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আমি খুব আনন্দিত হয়েছি। খবরটা মুহূর্তে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এ আনন্দ বলে বুঝাবার মতো না।

তিনি আরও বলেন, এমন জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে একদিন দেশের ফুটবলের অনেক নাম ডাক হবে। তখন নিশ্চয় স্বপ্নার মতো খেলোয়াড়দের কদর বাড়বে।

স্থানীয় রাঙাটুঙ্গী প্রমিলা নারী ফুটবল একাডেমি থেকে উঠে আসা বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়ার স্বপ্না রানী।

একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, নারী ফুটবলাররা যে অর্জন এনে দিচ্ছে, এতে আমরা গর্বিত। তাদের স্থায়ী জীবিকার জন্য কিছু করা দরকার। যাতে খেলার পরে তাদের নিশ্চিত জীবিকার ব্যবস্থা হয়। আমরা চাই যেন স্বপ্না রানীদের অর্জনগুলো অনাদরে পড়ে না থাকে।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, নারী খেলোয়াড়দের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল তাদের কিভাবে সহায়তা করা যায় সে দিকটা দেখা হচ্ছে।