চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাণীগ্রামে ১৯০৩ সালের ১৯ মে জন্মগ্রহণ করেন একজন বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক সাধক ও সমাজচিন্তক, যিনি পরবর্তীতে স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ নামে পরিচিত হন। তাঁর জীবন ও কর্ম আধ্যাত্মিকতা, শিক্ষা, মানবসেবা ও সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে সমাজে একটি স্বতন্ত্র ভূমিকা রেখেছে।
শৈশব থেকেই তিনি জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী ছিলেন। পারিবারিক পরিবেশে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ও সংস্কৃত শিক্ষায় তাঁর প্রাথমিক দীক্ষা শুরু হয়। পাশাপাশি ধর্মীয় ভাবনাও গড়ে ওঠে। তিনি গণিত ও শাস্ত্রীয় শিক্ষায় প্রাজ্ঞতা অর্জন করেন এবং সমাজসেবায় যুক্ত হন পরিবারের সঙ্গে।
স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ ভারতবর্ষের বিভিন্ন ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণ করেন—কেদারনাথ, বদ্রিনাথ, গঙ্গাসাগর, কন্যাকুমারীসহ বহু অঞ্চলে। এসব ভ্রমণ তাঁর আধ্যাত্মিক ভাবনার বিকাশে সহায়ক হয়। পরে তিনি গুরুর পরামর্শে গুণাগরী ঋষিধাম নামে একটি আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।
গুণাগরী ঋষিধাম এখন শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় কেন্দ্র নয়, বরং একটি সামাজিক মিলনমেলাও বটে। এখানে প্রতি তিন বছর অন্তর ‘ঋষিকুম্ভ’ নামের এক বৃহৎ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যাতে দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ অংশগ্রহণ করে। এ আয়োজন আধ্যাত্মিক ভাবনার পাশাপাশি ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতির বার্তা বহন করে।
স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ বিভিন্ন ধর্মতাত্ত্বিক ও দার্শনিক রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে—গীতায় গুরুশীর্ষ, শালগ্রাম তত্ত্ব, শিবলিঙ্গ রহস্য, ও ধর্ম প্রবেশিকা। এসব রচনায় ধর্মীয় অনুশাসনের পাশাপাশি মানবিক ও নৈতিক দর্শনের আলোচনাও স্থান পেয়েছে।
তিনি আধ্যাত্মিক সাধনার পাশাপাশি নাট্যচর্চা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তাঁর জীবনচর্চা ধর্ম, জাতি ও বর্ণনির্বিশেষে মানবকল্যাণের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল এক দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত।
১৯৬৬ সালের ১৬ এপ্রিল, শনিবার সন্ধ্যারতির সময়ে তিনি মহাসমাধিতে বিলীন হন। তাঁর কর্ম ও ভাবনা আজও বহু অনুসারী ও চিন্তাশীল মানুষের মধ্যে প্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : পারুল আকতার
ইমেইল : banshkhaliexpress@gmail.com
www.banshkhaliexpress.net | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত | © CW26020