‘আজকের একনেক সভায় অনুমোদন হওয়া সর্বোচ্চ প্রকল্প ছিল এটি’
বাঁশখালীর বর্তমান সংসদ সদস্য জনাব মুজিবুর রহমান সিআইপি নির্বাচিত হয়ে কথা দিয়েছিলেন আগামী তিন বছর কাজ করতে চান। কোন পাবলিক জনসমাগমে অতিথি হয়ে যাবেন না। কাজ করে যেতে চান। যদি মনে হয় তিনি কাজ করেছেন তখন তিনি নিজ থেকে জনসম্মুখে আসবেন এবং কথা বলবেন। বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁর গৃহীত পদক্ষেপ দেখেছেন মানুষ। তাঁর তৎপরতায় অভ্যন্তরীণ সড়ক গুলোর প্রকল্প প্রস্তাব ইতমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছে গেছে কিছু কিছু কাজ হচ্ছে। কিছু রাস্তার সংস্কার কাজ শেষের দিকে।
বাঁশখালীর প্রাণের দাবী টেকসই বেড়িবাঁধ নিয়ে তাঁর পদক্ষেপ দেখার অপেক্ষায় ছিল সেই অপেক্ষাও শেষ হল। ২৮ মে ২০২৪ তারিখে তাঁর ফেসবুক পেইজে করা পোস্ট থেকে জানা গেল বাঁশখালী বেড়িবাঁধ প্রকল্পের জন্য ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াশিকা আয়শা খান কে ধন্যবাদ জানান এই প্রকল্প অনুমোদন এর জন্য।
ফেসবুক পোস্টে তিনি আরো উল্লেখ করেন,’
আমি সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বেশ কয়েকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে প্রকল্পটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে নেয়ার ব্যবস্থা করি। বাঁশখালীর পাশ্ববর্তী উপজেলা আনোয়ারার সন্তান অর্থ-প্রতিমন্ত্রী প্রকল্পটি অনুমোদনে শুরু থেকেই সক্রিয় হন। তিনি প্রকল্পটি যাতে দ্রুত অনুমোদন পায় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন। এই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হলে আনোয়ারা-বাঁশখালী উপকূল হবে নতুন অর্থনৈতিক হাব, ইনশা’আল্লাহ।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায় আনোয়ারা ও বাঁশখালী অংশের জন্য প্রায় ৮৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে যার ৬০০ কোটি টাকা বাঁশখালী অংশের জন্য।
এই ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর বলেন, বাঁশখালী-আনোয়ারা টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায় নেয়া ৮৭৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে। এ প্রকল্পে প্রায় পৌনে ৬০০ কোটি টাকার কাজ হবে বাঁশখালীতে। বাকি কাজ হবে আনোয়ারা উপকূলে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য অর্থ প্রতিমন্ত্রী ও বাঁশখালীর সংসদ সদস্য অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন। প্রকল্পটি উপকূলের বেড়িবাঁধ রক্ষায় কার্যকর হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে লবন, মৎস্য ও কৃষি চাষে আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
উল্লেখ্য, পশ্চিম বাঁশখালীর মানুষের প্রাণের দাবী একটি টেকসই বেড়িবাঁধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছিলনা কোন ভাবেই। ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধটি সাগরের বুকে হারিয়ে যাচ্ছে খড়কুটোর মতই। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকায় বলতে গেলে সাগর বক্ষে দিনে দিনে মিলিয়ে যাচ্ছে এই বেড়িবাঁধ। এই বেড়িবাঁধের কারনে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। ঘূর্ণিঝড় আয়লা, সিডর, কোমেন, রোয়ানুর কবলে পড়ে প্লাবিত হয়ে শত শত একর ফসলী জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে। চলতি বছর দেখা যায় ব্যাপক এলাকা চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ব্লক তৈরী, লুটপাট ও ব্যাপক দূর্নীতিতে এর বাজেট যা ছিল তা কেবল ছোট থেকে ছোট হয়ে এসেছে। এসব ঢাকতে অপরিকল্পিত নকশা প্রনয়ণ ও যেনতেনভাবে বেড়িবাঁধ নির্মানের কারনেই মাত্র এক বছরের মাথায় হারিয়ে যাচ্ছে সাগর বক্ষে। অনেকের মতে সাম্প্রতিক সময়ে সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে উঠা চর স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়ায় তা সরাসরি আঘাত হানছে বেড়িবাঁধের উপর। ফলে বাঁধের কিনারেই তৈরী হচ্ছে ৬০ ফুট গভীরের খাড়ি (কূপ)। যা ক্রমশ বেড়িবাঁধের ভিতকে নড়েবড়ে করে দিয়ে ভাঙ্গণ ত্বরান্বিত করছে। যদিও বেশিরভাগ স্থানীয়রা এই যুক্তি মানতে নারাজ, তাদের দাবী এসব বিষয় দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগের। তাঁরা এটার সম্ভাব্যতা যাচাই না করে ধর তক্তা মার পেরেক টাইপের কাজ কেন করবে এবং তার খেসারত কেন উপকূলবাসী দিবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বাঁশখালী উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সাড়ে ৭ বছর আগে ২৫১ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০১৫ সালের ১৯ মে প্রকল্পটি একনেকে পাস হওয়ার পর বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বাঁধ নির্মাণে কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বেড়ে হয়েছিল ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় এতে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ভাঙন রোধ ও পুনরাকৃতিকরণ, ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করার কথা রয়েছে। ২০২২ সালে প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকার মধ্যবর্তী দুটি স্থানে ধ্বসে গিয়ে বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ অংশ সাগরে মিলিয়ে যায়। সিসি ব্লক বেষ্টিত বাঁধের যেটুকু ঠিকে আছে তাতে বিশালাকার ফাটল সৃষ্টি হয়ে নিচের দিকে ক্রমশ দেবে যাচ্ছে। ভারী কোন জোয়ার এলেই পুরোপুরি মিশে যাবে বেড়িবাঁধের এই অংশটুকু। ঘূর্ণিঝড় রেমাল চলাকালে নির্ঘুম রাত যাচ্ছে উপকূলবাসীর। সেই সময়ে স্বস্থির খবর হয়ে এল এই সংবাদ।
স্থানীয় মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শোয়াইব জানান, সাগর পাড়ে বসবাস আমাদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলেই আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। আমাদের অপেক্ষার দিন পুরিয়েছে জেনে ভালই লাগছে আশা,করছি কাজটা ভাল ভাবেই হবে।