রিয়াজুল হক রিফাতের◾
গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তার বৃহস্পতিবার রাত যেন রক্তে ভিজে গেল। পেশায় সাংবাদিক, নাম আসাদুজ্জামান তুহিন মাত্র ৩৮ বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে।দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ এর গাজীপুর স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন তিনি। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রাম থেকে উঠে এসে তিনি হয়তো স্বপ্ন দেখেছিলেন সত্যের পথে লেখা, মানুষের জন্য লড়া, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম চালানোর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সত্য বলার দায়ই যেন তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াল।হত্যার ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তুহিনকে ধাওয়া করে, আশ্রয় নেওয়া চায়ের দোকানে ঢুকে, একের পর এক কোপ। এমন নির্মম দৃশ্য সভ্য সমাজে কল্পনাতেও আসে না।
শুধু পূর্বশত্রুতার জেরে বা অন্য কোনো গোপন কারণে যেভাবেই হোক, এভাবে প্রকাশ্যে কাউকে হত্যা করা আমাদের আইনের শাসনের চরম ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। প্রশ্ন উঠছে, একজন সাংবাদিক যদি জনবহুল এলাকায়, সবার চোখের সামনে, এমন নৃশংসভাবে খুন হতে পারেন, তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?সাংবাদিকতা শুধু একটি পেশা নয়; এটি এক ধরনের দায়বদ্ধতা। সত্য তুলে ধরা, ক্ষমতার অপব্যবহার প্রকাশ করা, দুর্নীতির খবর মানুষের সামনে আনা এসব করতে গিয়েই দেশে বহু সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন, কেউ কেউ প্রাণও হারিয়েছেন।
কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও কি আমরা শুধু নিন্দা, শোক, সমবেদনা জানিয়েই থেমে যাব? অপরাধীরা কি আবারও রাজনৈতিক ছায়া, প্রভাবশালী পরিচয় কিংবা আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে বেঁচে যাবে?এমন হত্যাকাণ্ডে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হলো এটি শুধু একজন মানুষের জীবন কেড়ে নেয় না, এটি অন্য অনেক সাংবাদিকের কলমকে ভয়ে থমকে দেয়। এটি সত্য প্রকাশের পথ সংকুচিত করে দেয়। এটি মানুষকে শেখায়, ‘চুপ থাকাই ভালো’। অথচ গণতন্ত্রে, ন্যায়বিচারে, মানবাধিকারে বিশ্বাসী কোনো দেশ এই বার্তা সহ্য করতে পারে না।আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দ্রুত, দৃশ্যমান ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি আনতে হবে।
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এবং সমাজকেও বুঝতে হবেসাংবাদিক হত্যা শুধু সাংবাদিক সমাজের ক্ষতি নয়, এটি আমাদের সবার ক্ষতি। কারণ সত্য চাপা পড়লে, ন্যায়বিচার হারিয়ে গেলে, শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগী হয় পুরো জাতি।আসাদুজ্জামান তুহিনের রক্ত যেন শুধুই এক ব্যক্তির নয় এটি সত্য বলার অধিকার, মুক্ত গণমাধ্যম, এবং ভয়মুক্ত সমাজের দাবি। আমরা যদি এবারও নীরব থাকি, তবে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, বাঁশখালী এক্সপ্রেস।