• ঢাকা, বাংলাদেশ বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:২০ অপরাহ্ন
  • [কনভাটার]
শিরোনামঃ
আইসিবিআই ব্যাংকের এসভিপি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান হলেন বাঁশখালীর মান্নান আশরাফ ফকির হত্যা: অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা, স্ত্রী-ছেলে কারাগারে হাটহাজারীর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিশ্ব মঞ্চে মোহাম্মদ ইকবাল বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেড় বছরে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করা হবে : আমীর খসরু ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় বাঁশখালীর যুবকের মৃত্যু বিএনপির প্রার্থী তালিকায় অনুপস্থিত শীর্ষ নেতারা এনসিপির দক্ষিণ জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী হলেন বাঁশখালীর মিশকাত বাঁশখালী নিয়ে লেয়াকত আলীর ধারাবাহিক লেখনী ভাইরাল হযরত শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীন কঃ – প্রেমের বাদশাহর রাজকীয় উপাখ্যান বাঁশখালীতে গণঅধিকারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

হযরত শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীন কঃ – প্রেমের বাদশাহর রাজকীয় উপাখ্যান

বাঁশখালী এক্সপ্রেস প্রতিবেদন / ২০২ শেয়ার
আপডেট: সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

হাসান মুহাম্মদ কফিলুদ্দীন

প্রশংসা সেই মহান রবের যিনি তাসাউফ নামের ফুল বাগান সৃষ্টি করেছেন এবং নানা বর্ণের ও ভিন্ন ভিন্ন সুগন্ধের আউলিয়া কেরাম নামক ফুল দ্বারা এই বাগান সজ্জিত করেছেন। তিনিই কলম ধরার শক্তি দিয়েছেন এবং তাঁর প্রিয়তম আউলিয়া ও আধ্যাত্মিক সম্রাটগণের স্তুতিগান তুলে ধরার তৌফিক দিয়েছেন। দরূদ ও সালাম রইল আউলিয়া কেরামগণের নয়ন পুত্তুলি হুযূর সায়্যিদুনা রাসূল মাক্ববুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর। আহলে বাইত ও সুফিয়ায়ে কেরামগণের নেগাহে করম অধমের প্রেরণা। শিরনত পদচুম্বন রইল সিলসিলায়ে আলীয়া জাহাঁগীরিয়ার মসনদ নসীন সম্রাটগণের যাঁদের মেহেরবানীর বদৌলতে মস্তিষ্ক হতে জ্ঞানের জগত কলম বেয়ে নামার যোগ্যতা অর্জন করে। সকলের দয়া-মায়াকে সঙ্গী করে শুকরিয়া জানাই যারা এ লিখাটি পড়ছেন বা পড়বেন।রাব্বুল আলামীন এই ধরাধামকে সাজানোর জন্য কতেক নক্ষত্র-মহা নক্ষত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন।

এ সকল নক্ষত্রের মাধ্যমে জগতের দিক হারা মানুষদের দিশা দিয়েছেন। হেদায়েতের আলোক রশ্মি ঘরে ঘরে পৌঁছিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদীস শরীফের বাণীগুলোর মূল তত্ত্ব দ্বারা সাধারণ মানুষের জীবনকে সজ্জিত করেছেন। এ সকল নক্ষত্ররাজি দ্বারা ভালোবাসা নামক অনুভূতির পূর্ণতা দান করেছেন। এ সকল মহা তারকার অনুসরনে দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তি নির্ধারিত করেছেন। এমন সব নক্ষত্র দিয়ে রব তা’আলা সাজিয়েছেন তাঁর পরম প্রেমের বাগান। সৃষ্টি করেছেন এক অনন্ত ভালোবাসার রাজ্য। সে রাজ্যের নামই ‘তাসাউফ সাম্রাজ্য’।বহু রাজা-মহারাজাগণের আগমন ঘটেছে এই সাম্রাজ্যে। এই রাজ্যের মহা সম্রাটগনের প্রেমডোরে নিজেকে হারিয়েছেন কত শত-সহস্র বুজুর্গানে দ্বীন তার ইয়ত্তা নেই। আর অন্তর হারা প্রেমিকের সংখ্যা? সে তো অগনিত! প্রেমের এমনই এক আধ্যাত্মিক মারকাযের নাম ‘মির্জাখীল দরবার শরীফ’- সিলসিলায়ে আলীয়া জাহাঁগীরিয়ার ধারক ও বাহক।

মির্জাখীল দরবার শরীফের পীরানে এযামগণের সম্পর্কে বেশি কিছু বলার নেই। সারা জগত তাঁদের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। তাঁদের গুণকীর্তনকে নিজেদের সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করেন। তাঁদের গোলামীকে নিজেদের জন্য পূণ্যের কাজ বলে অন্তরে ধারন করেন। নিজ নিজ সময়ের শ্রেষ্ট আধ্যাত্মিক সম্রাট হিসেবে শাহ জাহাঁগীরগণ জাহাঁগীরি শাহী মসনদে আসীন ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। পূর্ব পুরুষগণ ফাতেমী বংশোদ্ভূত, সুদূর আরব হতে আগত। ইসলাম প্রচারের মানসে দিল্লীর রাজন্যবর্গ বাংলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে তাঁদের সাথে ফাতেমী বংশোদ্ভুত দুইজন মহাত্মা ‘সৈয়দ’ বাংলায় আগমন করেন। তাঁরা প্রথমে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার দেয়াং গ্রামে অবস্থান গ্রহন করে ইসলাম প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে তাঁদের বংশধরগণ সাতকানিয়া থানার মির্জাখীল গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস আরম্ভ করেন।রাসূল মাক্ববুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই পবিত্র বংশধারাতেই আগমন হয় ভূবন বিখ্যাত আলেম, ফকীহ, বরেন্য মুজতাহিদ, আধ্যাত্মিক জগতের শাহবাজ মৌলানা মোখলেছুর রহমান কঃ ছাহেব। রূহানী জগতে যিনি ‘শেখুল আরেফীন’ উপাধিতে ভূষিত এবং ‘সিলসিলায়ে আলীয়া জাহাঁগীরিয়া’ নামক আযীমুশশান সিলসিলা দ্বারা মহিমান্বিত। ‘শাহ জাহাঁগীর’ তাঁর লক্বব।পবিত্র ওফাতের পূর্বে হযরত শেখুল আরেফীন কঃ তাঁর ছোট ছাহেবজাদা হযরত শাহ জাহাঁগীর ফখরুল আরেফীন মৌলানা মুহাম্মদ আবদুল হাই কঃ কে তাঁর পরবর্তী জাহাঁগীরি মসনদের উত্তরাধীকারী নির্বাচিত করেন।

তাঁর পরবর্তী সাজ্জাদানশীন হন জগতপীর খ্যাত, যূগের গউস, বেলায়ত সম্রাট হযরত শাহ জাহাঁগীর শমছুল আরেফীন মৌলানা মুহাম্মদ মখছুছুর রহমান কঃ ছাহেব।হযরত শাহ জাহাঁগীর শমছুল আরেফীন কঃ দুনিয়াবী জীবনেই সিলসিলার পরবর্তী সম্রাট হিসেবে যাকে নির্বাচিত করে গিয়েছিলেন; তিনিই যুগশ্রেষ্ঠ তত্ত্বজ্ঞানী, আরেফগণের গৌরব, খোদা-তত্ত্ব জ্ঞানীদের আকাঙ্ক্ষার আধার, মা’রেফতের উদীয়মান সূর্য্য, স্বীয় সময়ের অদ্বিতীয় বিদ্বান, হযরত শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীন কঃ।১৩৫৯ হিজরীর ১৭ই জমাদিউস সানী মোতাবেক ১৯৪০ খ্রীষ্টাব্দের ২৪শে জুলাই, ১৩৪৭ বাংলার ৯ই শ্রাবণ ঐতিহ্যবাহী ‘মির্জাখীল দরবার শরিফে’ জগত উদ্ভাসিত করে পিতা হযরত মৌলানা মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান শাহ রাঃ এবং মাতা তাপসী ও যূগের ‘রাবেয়া বসরী’ মহিয়সী জনাবা আনোয়ারা বেগম রাঃ এর পবিত্র ঘরে শুভাগমন করেন সিলসিলায়ে আলীয়া জাহাঁগীরিয়ার আলোকবর্তিকা, যূগশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ, তাপসকূল শিরোমণি হযরত শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীন মৌলানা মুহাম্মদ আরেফুল হাই ছাহেব কঃ।

হযরত যখন মাতৃগর্ভে ছিলেন তখন মাতা সাহেবানী স্বপ্নে দেখলেন, একটি প্রাসাদে বহু বুজুর্গ মহিয়সী মহিলাদের মাঝে তিনি উপবিষ্ট আছেন। হঠাৎ একটি উজ্জ্বল চন্দ্র আসমান হতে তাঁর নিকট অবতরণ করল। স্বপ্নের মাঝেই উক্ত বুজুর্গ মহিলাদেরকে চন্দ্রটি দেখালে তাঁরা সমস্বরে বলে উঠেন, এটি হযরত শাহ জাহাঁগীরের গাদ্দীনশীনের চন্দ্র। যাকে সুউচ্চ মরতবা প্রদান করা হবে। পৃথিবীতে তাঁর আগমন অতি সন্নিকটে। তাঁর মাধ্যমে সৃষ্টিকূল সঠিক পথের দিশা পাবে।হযরত শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীন কঃ যখন দুনিয়ায় আগমন করলেন তখন ২য় শাহ জাহাঁগীর হযরত ফখরুল আরেফীন কঃ এর ছোট বোন সৈয়দা নজমুন্নিছা রাঃ হযরতকে কোলে নিয়ে ৩য় শাহ জাহাঁগীর হযরত শমছুল আরেফীন কঃ এর খেদমতে উপস্থিত হলে তিনি পবিত্র কানে আযান ও ইক্বামত প্রদানের পর নিজ আঙ্গুল মুবারক হযরতের মুখে দিয়ে মধু সেবন করান।

পরবর্তীতে হযরত কঃ বলেন, তখন হতেই আমার সারা শরীরে আমার হযরত কেবলা-ও-কাবার অশেষ দানের ফোয়ারা প্রবাহিত হওয়া আরম্ভ হয়েছিল।তিনি একবার এমনও বলেছিলেন, আমার জন্মের বহু পূর্ব হতেই আমার পীর-মুর্শিদের বিশেষ দানসমূহ আমার উপর ফল্গুধারার ন্যায় প্রবাহিত ছিল।একদা তিনি এমনও বলেছিলেন, আমার শিশুকালে কান্না করলে আমার পীর-মুর্শিদের হুজরা শরীফে সংবাদ প্রদান করা হত। তখন তিনি অন্দর মহলে আসতেন এবং আমার মুখে আপন শাহাদাত আঙ্গুলি রাখতেন। আমি সে আঙ্গুল চুষে খেতাম। আমার পেট ভরে যেত। কান্নাও থেমে যেত।বাল্যকাল থেকেই তাঁর প্রতি দরবারের খলিফা ছাহেবগণের আন্তরিক সম্মান ও বিশেষ দৃষ্টি জানান দেয় যে, তিনিই সেই ব্যক্তি যার ব্যাপারে ২য় শাহ জাহাঁগীর হযরত ফখরুল আরেফীন কঃ ফরমায়েছিলেন, আমার সিলসিলার মধ্যে এমন একজন উচ্চস্তরের বুজুর্গের আবির্ভাব ঘটবে যিনি সমগ্র পৃথিবীকে তাঁর ঐশ্বরিক জ্যোতিতে আলোকিত করবেন। আমার মুরিদদের মধ্যে যদি কারও তাঁর সাক্ষাতের সৌভাগ্য হয় তবে সে যেন তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান জানায়।শাহ জাহাঁগীর হযরত ফখরুল আরেফীন কঃ এর প্রধান খলিফা মৌলানা হাকিম সৈয়দ সিকান্দার শাহ রাঃ একবার হযরতকে বাই-সাইকেল চালাতে দেখার পর হিন্দুস্থানে গমন করে তাঁকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখে পাঠান।

সেখানে হযরত শাহ জাহাঁগীর ফখরুল আরেফীন কঃ এর উক্ত বাণীখানা লিপিবদ্ধ করেন। বলাবাহূল্য, তিনি ছাহেবে কাশফ ও কারামতের অধিকারী হয়ে হযরতের মাঝে ঐ মহান বুজুর্গের অস্তিত্বই দেখতে পেয়েছিলেন।ইবতেদায়ীর শিক্ষা, প্রাথমিক আরবি ও ফার্সির জ্ঞান নিজ গৃহে আপন পূজনীয় পীর-মুর্শিদ হযরত শাহ জাহাঁগীর শমছুল আরেফীন কঃ এর পবিত্র তত্ত্বাবধানেই অর্জন করেন। প্রাথমিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটলে গারাংগিয়া আলীয়া মাদ্রাসা ও দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসা এবং পরবর্তীতে ওয়াজেদীয়া আলীয়া মাদ্রাসায় তৎকালীন শ্রেষ্ঠ উলামা ও বুজুর্গানে দ্বীনের তত্ত্বাবধানে পর্যায়ক্রমে কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন।উপরস্থ পীরানগণের মত তাঁরও জ্ঞানার্জনের তৃষ্ণা ছিল প্রবল। কামিল সমাপ্তির পর সাতকানিয়া গোলাম বারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মাত্র আড়াই বছরে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন। এরপর সাতকানিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে বি.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। একইসাথে ঢাকা গমন করে ইংরেজির সু-পন্ডিতের নিকট পাঠ গ্রহনের মাধ্যমে ইংরেজি ভাষার উপর বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। তবে উক্ত সময়ে তিনি কখনই আরবি, ফার্সী, তাফসীর, হাদীস, ফেক্বাহ সহ দ্বীনের শিক্ষা হতে বিরত ছিলেন না। একই সমান্তরালে ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রামের ওয়াজেদিয়া আলীয়া মাদ্রাসা থেকে ফিকাহ বিভাগ থেকে কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন। ইতিমধ্যে আপন পীর-মুর্শিদ ৩য় শাহ জাহাঁগীর হযরত শমছুল আরেফীন কঃ এর যত্ন ও তত্ত্বাবধানে জ্ঞান-বিজ্ঞান, ধর্মীয় বিষয়াদির উপর কঠোর পরিশ্রমের সাথে অধ্যয়ন করেন। অল্প সময়েই উপরস্থ পীরানগণের ন্যায় যুগের শ্রেষ্ঠ ও অদ্বিতীয় আলেমরূপে পরিগণিত হন। এখানেই তিনি থেমে থাকেন নি। বরঞ্চ দিবা-রাত্রি দরবারের লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত অগনিত কিতাবাদির অধ্যয়নে ডুবে থাকতেন। ঐ সময়েই তাঁর জ্ঞানের প্রতি অগাধ আগ্রহ ও আদবের কথা লোকমুখে প্রবাদের ন্যায় আলোচিত হতে থাকে।যৌবনকালের সময়কে পুরোদমে তিনি জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডে কাজে লাগিয়ে মানব কল্যানে নিজেকে ব্রতী রাখেন।

সমসাময়িক যুব সমাজকে নিয়ন্ত্রণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রমে আনসার ট্রেনিং সম্পন্ন করে নিজেকে প্রস্তুত করেন। পরবর্তীতে স্ব-উদ্যোগে আনসার ক্যাম্প পরিচালনা করেন। শুধু তা-ই নয়; সার্ভেয়ার ট্রেনিং সর্বোচ্চ কৃতিত্ত্বের সাথে সম্পন্ন করেন। মির্জাখীল এলাকার কৃষি নির্ভর অর্থনৈতিক বিনির্মাণে ক্রস-ড্যাম্প নির্মাণ করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাছাড়া সারা দেশ ও বহির্বিশ্বের ডাক যোগাযোগ এবং টিএন্ডটি সংযোগ স্থাপন ও মির্জাখীল পোস্ট অফিস অনুমোদন এবং প্রতিষ্ঠা, একইসাথে বৈদ্যুতিক পরিসেবার বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে তিনি গুরুদায়িত্ব পালন করেন।দরবার প্রাঙ্গণে বাজার স্থাপন সেই সাথে জনসাধারন ও ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে নিজ উদ্যোগে সরকারি অগ্রণী ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু ও গ্রাহক সেবা আরম্ভের ব্যবস্থা করেন। ঐ সময়ে মির্জাখীলের সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে তার সক্রিয় ভূমিকা ও পদক্ষেপ দশগ্রামের মানুষ চিরকাল স্মরণ রাখবে।হযরত শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীন কঃ একজন বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। দিন-রাত দরবারের লাইব্রেরি, কিতাবাদির সংরক্ষণ, দুষ্প্রাপ্য কিতাব সমূহের সংগ্রহ, প্রাচীন পান্ডুলিপি সমূহের যত্ন-আত্তিতেই জীবনের অধিককাল ব্যয় করেন। এক পর্যায়ে লক্ষ কিতাবের এক সুবিশাল লাইব্রেরীতে রূপ দেন।ইত্যবসরে আপন দাদা হযরত ২য় শাহ জাহাঁগীর ফখরুল আরেফীন কঃ ছাহেবের অনুসরনে সমুদ্রপথে ভ্রমণ করে হজ্বকার্য্য সম্পাদনের ইচ্ছা পোষন করেন। ১৩৯৮ হিজরীর ১২ই যিলক্বদ, ১ম শাহ জাহাঁগীর হযরত শেখুল আরেফীন কঃ ছাহেব কেবলার পবিত্র ওরস শরীফের প্রথম দিন সকল কার্য্য সম্পাদন করে সম্মানিত পিতা-মাতা উভয়ের দোয়া নিয়ে ‘হিজবুল বাহার’ নামক জাহাজে চড়ে হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ১৪ দিন পর জেদ্দা সমুদ্র বন্দরে পৌঁছান। আপন পীরানে এযামগণের অনুসরসে প্রথমে মদীনা শরীফে পবিত্র রওজা যিয়ারত করেন। ঐ সময়ে তিনি খালি পায়ে থাকতেন।

এ বিষয়ে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলে উত্তরে বলেন, যে পবিত্র স্থানের আদব রক্ষার্থে এবং ভক্তি প্রদর্শনে মস্তকে হেঁটে যাওয়া আবশ্যক; সেখানে খালি পায়ে হাঁটা তো যোগ্য সম্মান প্রদর্শন নয়! হজ্ব কার্য্য সম্পাদন করে একইভাবে ১৪ দিন জাহাজে চড়ে দরবার শরীফে ফিরে আসেন।১৪০০ হিজরীর ২৭শে জমাদিউস সানী মোতাবেক ১২ই মে, ১৯৮০ সালে আজমীর শরীফ সহ ভারতবর্ষ সফরে বের হন।পরবর্তীতে ১৪০২ হিজরির ২৪শে মহরম মোতাবেক ২২শে নভেম্বর, ১৯৮১ খ্রীষ্টাব্দে দ্বিতীয়বার হিন্দুস্থান সফরে বের হন। এরপর ১৪০৪ হিজরীর ২৭শে মহরম মোতাবেক ৩রা নভেম্বর, ১৯৮৩ সালে ৩য় বারের মত হিন্দুস্থান সফর করেন। প্রতিবারই ক্লান্তিহীন ও বিরতিহীনভাবে এত স্থান সফর ও উপরস্থ পীরানগণ ও সিলসিলার সাথে সম্পর্কিত এবং মুহব্বতের সাথে সংযুক্ত সকল বুজুর্গানদের মাজার শরীফ যিয়ারত করেছিলেন যে, কলেবর বৃদ্ধির কারনে সফর সমূহের বিস্তারিত বর্ণনা এই লেখায় সম্ভবপর নয়। হিন্দুস্থানে ২য় বার সফরের পর হযরত বাবা ফরিদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রাঃ এর মাজার মুবারক যিয়ারতের জন্য তিনি ব্যাকূল হয়ে পড়েন। ১৪০২ হিজরীর ২৭শে যিলহজ্ব রোজ বৃহস্পতিবার দরবার শরীফ থেকে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন এবং লাহোর, পাক পতন শরীফ, মুলতান শরীফ, শেমালী এলাকা-জাত, ইসলামাবাদ, গোলরাহ শরীফ, মোজাফফরাবাদ, আজাদ, কাশ্মীর, তুঁসা, সিহওয়ান শরীফ, করাচি সফর করে তত্ত্বজগতের শ্রেষ্ঠতম বুজুর্গানদের মাজার শরীফ সমূহ যিয়ারত করে দরবার শরীফে ফিরে আসেন।দেশ বিদেশের সফর সমাপ্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে সিলসিলায়ে আলীয়া জাহাঁগীরিয়ার মসনদে আরোহন করেন।

ঐ সময়ের পর হতে পরবর্তীতে প্রায় ২২ বছর আস্তানা পাকের বাহিরে তিনি কদম রাখেন নি। ত্যাগ, তিতিক্ষা, তপস্যা, সাধনা, ইবাদতের যিন্দেগীতেই নিজেকে বিলিয়ে দেন। আস্তানা পাক থেকেই শাসন করেন রূহানী জগত। এই সময়ে তিনি পরিপূর্ণরূপে দরবারেই অবস্থান করতেন। সকলেই তাঁর সান্নিধ্যে গমন করে নিজেদের সৌভাগ্যমন্ডিত করতেন।বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই পরম পূজনীয় মহাত্মা ১৪৪৭ হিজরীর ৩রা জমাদিউল আউয়াল মোতাবেক ২৪শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ, পবিত্র জুমাবার সকালে হায়াতে যিন্দেগীর সফর শেষ করে মহামহিম প্রভূর মিলনপ্রাপ্ত হন। হায়াতে যিন্দেগীর স্তুতিগাঁথার সমাপ্তি ঘটে তত্ত্বজগতের অনিন্দ্য সুন্দর প্রাণপুরুষ, সিলসিলায়ে আলীয়া জাহাঁগীরিয়া, মির্যাখীল দরবার শরীফের চতুর্থ মসনদনশীন সম্রাট, হযরত শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীন মৌলানা মুহাম্মদ আরিফুল হাই কঃ এর।দুনিয়া থেকে পর্দা গ্রহণ করলেও তরীকত সাম্রাজ্যের জন্য রেখেছেন এক অমূল্য রতন। তাঁরই জানশীন, আধ্যাত্মিক জগতের মহারাজ, সিলসিলায়ে আলীয়া জাহাঁগীরিয়ার পঞ্চম শাহ জাহাঁগীর ইমামুল আরেফীন হযরত মৌলানা ডক্টর মোহাম্মদ মকছুদুর রহমান কঃ ছাহেব।তিনি যেন পুর্ববর্তী মহাত্মাগনেরই বাস্তব প্রতিচ্ছবি।

পরম পূজনীয় পিতার ন্যায় তিনিও দুনিয়াবী শিক্ষা, আধ্যাত্মিক জ্ঞান সাধনার পাশাপাশি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন জনহিতৈষী কর্মকান্ডে। পিতার প্রদত্ত সকল দায়িত্ব নিপুন কর্মে সম্পাদন করে চলেছেন। পবিত্র আস্তানাপাকের দেখভাল, ভক্ত-মুরিদানদের হাল-হাকীকত সামলানো, পীরান পীরগণের ফাতেহা-ওরশ শরীফের এন্তেজাম করা, প্রতিদিনের ফাতেহা শরীফ পরিচালনা করা, মাজার শরীফ হতে আরম্ভ করে একটি ছোট্ট ফুলের পরিচর্যায় নিজেকে ব্যস্ত রেখে তিনি উপরস্তগণের সঁপে দেওয়া দায়িত্বকে নিপুনভাবে সম্পাদন করে চলেছেন।সেই সাথে শিক্ষাক্ষেত্রে বহু স্বর্ণপদকসহ সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী এই মহান ব্যক্তিত্ব সুফি তত্ত্বের চর্চা, শরীয়ত-তরীকতের সুষ্ঠু পরিপালন, সামাজিক দায়িত্বে নিষ্ঠাবান চরিত্র হিসেবে সারা জাহান মাতোয়ারা করে রেখেছেন। যুগশ্রেষ্ঠ ফকীহ হিসেবে শ্রেষ্ঠ মনীষীগন কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছেন। নিজ সিলসিলার তো বটেই; অন্যান্য সকল সিলসিলার বুজুর্গগণও তাঁকে আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের গর্ব-জ্ঞানে মেতে উঠেছেন। রূহানী জগতের মহান নেয়ামতরূপে তাঁকে সম্বোধন করছেন।দেশ-বিদেশে যেখানেই তিনি সফর করেন, সকলেই তাঁর পবিত্র অস্তিত্ব সম্মুখে মস্তক অবনত করে নেয়।

ভালো কি মন্দ, বিশ্বাসী কি অবিশ্বাসী সকলেই তাঁর পবিত্র হাজেরীতে কদমে লুটিয়ে পড়ে। জ্ঞানীগণ তাঁর প্রখর জ্ঞানের প্রভাবে জ্ঞান হারান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সুন্নতের অনুসরন, পীরানে এযামগণের অনুসরণ, বিনয়-নম্রতায় তাঁর মতন দ্বিতীয় মেলা ভার।নিঃসন্দেহে কেউ যদি হযরত শাহ জাহাঁগীর শেখুল আরেফীন কঃ, শাহ জাহাঁগীর ফখরুল আরেফীন কঃ, শাহ জাহাঁগীর শমছুল আরেফীন কঃ এবং শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীন কঃ এর দর্শন এক প্রতিকৃতিতে দেখতে চান; তবে হযরত শাহ জাহাঁগীর ইমামুল আরেফীন কঃ ছাহেবের প্রতি দৃষ্টি প্রদানেই তা সম্ভব। তিনি সকলেরই এক প্রতিবিম্ব স্বরূপ। ক্ষমতাধর আউলিয়া কেরামগণ প্রস্থান করেন না। তাঁরা ক্ষমতাধর থেকে মহাক্ষমতাধরের আসনে আসীন হন। শক্তিমান আউলিয়া কেরামগণের প্রস্থান হয় জাগতিক। তাঁরা মহান আল্লাহর ইচ্ছায় স্থান পরিবর্তন করেন মাত্র।রাব্বুল আলামীন সিলসিলায়ে আলীয়া জাহাঁগীরিয়ার সকল পীরানে এযামগণের উসিলায় আমাদের কবুল করুন। তাঁর প্রিয় নক্ষত্ররাজির অনুসরন ও তাঁদের ভালোবাসার মাধ্যমে আমাদের উভয় জগতের কামিয়াবী দান করুন। আমিন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো নিউজ
সিবি হসপিটাল কী? কেন? কিভাবে?