Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

চট্টগ্রামের বৃহত্তম শস্যভাণ্ডার গুমাই বিল

রহিম সৈকত ▪️
চট্টগ্রামের একটি প্রাচীন প্রবাদ- “আঁতত হাঁচি হোঁরত দা, ভাত হাইলি রইন্ন্যা যা” অর্থাৎ যদি ভাত খেয়ে বাঁচতে চাও তাহলে একখানা ধান কাটার কাঁচি ও কোমরে একখানা দা নিয়ে রাঙ্গুনিয়া যাও। বলছিলাম বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলের কথা। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এটিকে বলা হয় গুঁয়ার বিল। আজকের আয়োজন গুমাই বিল নিয়ে।

প্রায় তিন হাজার হেক্টর আয়তনের গুমাই বিল

প্রায় তিন হাজার হেক্টর আয়তনের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধান উৎপাদন অঞ্চল গুমাই বিল চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। রাঙ্গুনিয়ার নিশ্চিন্তাপুর পাহাড়ের পাদদেশে চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, লালানগর ইউনিয়ন এবং পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এই বিলের অবস্থান। দেশের বৃহত্তম চলন বিলের পর গুমাই বিলের আবাদি জমির আয়তন প্রায় ২ হাজার ৪০০ হেক্টর।

মরিয়মনগর থেকে শুরু হয়ে রাঙ্গামাটির নিশ্চিন্তাপুর পর্যন্ত বিস্তৃত এই বিলের কিছু অংশ রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় পড়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিলগুলোর মধ্যে গুমাই বিল সবচেয়ে বড়। ধান উৎপাদন ও অর্থনীতির অবদান হিসেবে এটি চট্টগ্রামের সমৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করে।

স্থানীয়দের মতে, গুমাই বিলের এক মৌসুমের ধান দিয়ে সারা দেশের আড়াই দিনের খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব! প্রতি বছরই এই বিলে ইরি ও আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়। পাকিস্তান শাসনামলে গুমাই বিলে ধান চাষ শুরু হয়, এবং স্বাধীনতার পর আধুনিক সেচব্যবস্থা স্থাপিত হয়।

বলা হয় গুমাই বিলের এক মৌসুমের ধান দিয়ে সারা দেশের আড়াই দিনের খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব!

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর উৎপাদন ও সেচব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ এই অঞ্চলে পরিকল্পিত সেচব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যা স্থানীয় শত শত কৃষকের উপকারে আসে। জনশ্রুতি আছে, গুমাই বিল একসময় একটি জলাভূমি ছিল, যেখানে প্রচুর মাছ আর বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পাওয়া যেত। এখন সেই দৃশ্য অতীত। তবে রাঙ্গুনিয়াবাসীর সঙ্গে গুমাইয়ের সম্পর্ক এখনও নিবিড়।

ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়ে পাখি সন্ধান করে তাঁদের আহার

একসময় গুমাই ছিল ঝিল আকারে, কর্ণফুলী নদী ও আশপাশের পাহাড়ি ঝর্ণা ও ছড়া থেকে পলি মাটি মিশ্রিত স্রোত এসে এই বিলে পড়ত। বাইনালার ছড়া, সোনাইছড়ি, মুন্দরী, কুরমাই, ইছামতি, বারঘোনিয়া, ঘাগড়া হ্রদ খাল ও গুট্টাকার খাল গুমাইতে প্রবাহিত হয়, যা এ অঞ্চলের ভূপ্রকৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।

আরও পড়ুন  বাহারচরাতে 'কমিউনিটিতে ন্যায়বিচারের প্রবেশাধিকার' অবহিতকরণ সভা

মাছে-ভাতে বাঙ্গালী প্রবাদটি এখন নিকট অতীত বুলি। এসব জলাভূমি এই অঞ্চলের মানুষের অন্ন- আমিষের চাহিদা মিটাত। মানুষের হাতে কাচা পয়সা না থাকলেও গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, ক্ষেত ভরা শস্য ছিল। এই গুমাই বিল ঠিকে থাকুক তেমনি প্রত্যাশা তবে দখলদারদের শকুনি নজর পড়তে শুরু করেছে।