বাঁশখালীর দুই এসএসসি পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দিতে না পারার কারন কী তা নিয়ে বললেন চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বাঁশ ৫(১২৮) কেন্দ্র সচিব, মুহাম্মদ রেজাউল করিম তাঁর ফেসবুকে এই নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। বাঁশখালী এক্সপ্রেসের পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হল।
‘আজ ২৭/০২/২০২৪ বুধবার এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র বাঁশ ০১(২০২) বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুইজন বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আইসিটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। অনুসন্ধানে জানতে পারি প্রাথমিকভাবে তারা বেখেয়াল ছিল এবং যখন জানে তখন বেলা ৯:৪০। তাড়াহুড়ো করে বের হয়, চাম্বল বাজার, টাইম বাজারে তাঁদের ২০ মিনিটের কাছাকাছি যানজটে কেটে যায়। এবং হলে পৌঁছে গিয়ে দেখে পরীক্ষার্থীরা বের হয়ে আসছে। অর্থাৎ আইসিটি পরীক্ষা শেষ।
এবং এটাই হল চরম বাস্তবতা, এইটুকু পর্যন্ত শিক্ষার্থীর অবহেলা এবং যানজটকে দায়ী করতে পারি আমরা। ১৪/১৫ বছরের শিক্ষার্থীর এই ভুল কোন ছোট ভুল নয় আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁদের ভুলকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা সাইবার বুলিং এর সমান হিসেবে দেখছি। কথায় আছে যে হারায় সে জানে। ঐ দুই শিক্ষার্থী কোন অমনোযোগী শিক্ষার্থী নয়, বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী। এই ধরনের ভুলকে নেহায়েত দুর্ঘটনা ভাবতে পারি এবং দুর্ঘটনায় ভাবছি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কি দেখছি? বিজ্ঞ প্রাজ্ঞ জনেরা ঐ দুই শিক্ষার্থীকে নিয়ে যা তা মন্তব্য করছে। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই ঐ দুই শিক্ষার্থী যদি তাঁদের ভাই বোন, সন্তান হত এইভাবে নিগৃহীত করতে পারতেন? বুলিং করতে পারতেন? আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি? ঘটনার বিস্তারিত না জেনে বিচারক এর মত রায় দিয়ে দিচ্ছি! আমাদের আগামীর গন্তব্য কোথায়? শিক্ষার্থীরাই বা এমন ভুল করবে কেন? আর তাঁদের ভুলে সহমর্মি না হয়ে তাঁদের জীবন বিষিয়ে তোলার মত এমন বিষবাষ্পই বা কেন?
যাক সেসব কথা। এবার মূল কথায় আসি, আজকের ঘটনায় দুইটি পরিবারের স্বপ্ন চুরমার হল। শিক্ষার্থীদের উদাসীনতা এর জন্য দায়ী, কিন্তু আমরা কি আর একটু মানবিকতা দিয়ে চিন্তা করতে পারিনা! আমরা যদি এভাবে চিন্তা করি, কক্ষ পর্যবেক্ষক দুজন মানবিক অভিজ্ঞ শিক্ষক ! আজকের ঘটনাটা অন্যভাবেও হতে পারতো! পরীক্ষা কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে কক্ষপর্যবেক্ষক মহোদয়দেরকে নির্দিষ্ট কক্ষের পরীক্ষার্থীর সমান সংখ্যক ওএমআর প্রদান করা হয়েছে ঠিক ৯ টা ৩০ মিনিটের সময়। কক্ষ পর্যবেক্ষক পরীক্ষার্থীর সমান সংখ্যক ওএমআর নিয়ে তার নির্ধারিত কক্ষে পৌঁছেছেন ৯:৩০ ঘটিকায়। তখন ঐ কক্ষের প্রত্যেক পরীক্ষার্থী উপস্থিত থাকার কথা কিন্তু ওএমআর বিলি করার পর যখন দুইটা ওএমআর থেকে যায় স্বাভাবিকভাবেই কি কক্ষপর্যপক্ষকের মনে আসার কথা না? এখানে নিশ্চয়ই দুই জন শিক্ষার্থী কম অথবা আমাকে দুইটা ওএমআর বেশি দেওয়া হয়েছে! ধরে নিলাম কক্ষ পর্যবেক্ষক মনে করেছেন ওএমআর বেশি দেওয়া হয়েছে! তারপরও যেহেতু প্রশ্নপত্র কক্ষে পৌঁছার আগে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ থাকেনা তখন কি একটু মনে প্রশ্ন জাগতে পারতো না এখানে নিশ্চয়ই দুইজন পরীক্ষার্থী কম আছে? একই স্কুলের আরো অনেক পরীক্ষার্থী সেই কক্ষে ছিল । একটু মানবিক হয়ে (যদিও সেটা দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়) একই স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত আছে কিনা এই তথ্য তখন জেনে নেওয়া খুব কঠিন ছিল কি? যদি ৯:৪০ এ সেই কক্ষে নিয়মিত শিক্ষার্থী অনুপস্থিত! এই তথ্য নিশ্চিত করা যেত তখন সেই কেন্দ্রের কেন্দ্রসচিব মহোদয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট করা যেত, যেভাবেই হোক, নির্দিষ্ট সময়ের ২০ মিনিট পরে হলেও ঐ শিক্ষার্থীদের কক্ষে উপস্থিত করা যেত বলে আমি নিশ্চিত।
কিন্তু সেটা হয়নি! এ দায় কার??? এক বাক্যে সবাই বলবেন শিক্ষার্থী সামান্য রুটিনের দিকে নজর দিতে পারে না? সাধারণ দৃষ্টিতে সেটাই বাস্তব। সেটাই নিয়ম কিন্তু মানবিকতার দৃষ্টি প্রসারিত যেত তখনই সৃষ্টি হতো ইতিহাস, মানবিকতার , দুটি পরিবারের স্বপ্ন বেঁচে থাকার ইতিহাস!! কিন্তু এখন তৈরি হল দুটি পরিবারের দুটি শিক্ষার্থীর স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস! কক্ষ পর্যবেক্ষক হিসেবে কে ছিলেন তাদের ছোট করা আমার এ লেখার উদ্দেশ্য নয়, যেহেতু আমিও একজন শিক্ষক।
কিন্তু আমরা চাইলে আরেকটু দায়িত্ববান আরো একটু মানবিক হতে পারি!! শিক্ষার্থীরা তো ভুল করবেই। কী বা তাদের বয়স ?? কিন্তু আমাদের দায়িত্বের বাইরে মানবিকতার দৃষ্টি প্রসারিত না হওয়ায় দুজন বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী নিয়মিত শিক্ষার্থীর একটি বছর চলে গেল! পড়ালেখা থেকে তাদের উৎসাহ হারিয়ে যাওয়া একেবারে অমূলকওতো নয়!
এসএসসি পরীক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে যারা দায়িত্ব পালন করছি তারা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আরেকটু মানবিক হতে করজোড় নিবেদন করছি।
মুহাম্মদ রেজাউল করিম
কেন্দ্র সচিব
বাঁশ ৫(১২৮)
চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়।