মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন ◾
সম্প্রতি পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় উঠছে ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিকল্প হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে বাঁশখালী উপজেলার সুদীর্ঘ ৩৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই সমুদ্র সৈকত বিস্তৃত।বাঁশখালীর ছনুয়া,গন্ডামারা, সরল,কাথরিয়া,বাহারছড়া, খানখানাবাদ ইউনিয়নের উপকূল জুড়ে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে এই সৈকতের অবস্থান।নয়নাভিরাম ও অপূর্ব মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে বাহারচরা ইউনিয়নের বাহাচরা পয়েন্ট,খানখানাবাদ ইউনিয়নের খানখানাবাদ-কদমরসুল পয়েন্ট এবং কাথরিয়া ইউনিয়নের হালিয়া পাড়া পয়েন্ট পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আর্কষণীয় এবং পরিচিত হয়ে ওঠেছে।প্রতিদিন শতশত পর্যটক এই পয়েন্টগুলোতে প্রকৃতির অকৃত্রিম পরশ পেতে ছুঠে আসতেছে এবং বিভিন্ন উৎসবে পর্যটকে টইটুম্বুর হয়ে যায় এই পয়েন্টগুলো।এই পয়েন্টগুলোর মধ্যে হালিয়া পাড়া পয়েন্ট একটু কম পরিচিত হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য এই পয়েন্ট সত্যিই হার মানাবে অন্য পয়েন্টগুলোকে।ঝাউবাগান-ম্যানগ্রোভ বন(প্যারাবন) এবং কেঁওড়াবনের সবুজ সমারোহের সাথে সমুদ্রের নীল জলরাশির গভীর মিতালী এবং শুষ্ক মৌসুমে প্রাকৃতিক উপায়ে লবণ উৎপাদন পদ্ধতি এই পয়েন্টেকে করেছে অনন্য এবং যোগ করেছে ভিন্নমাত্রা।প্রকৃতি যেন নিজের অকৃত্রিম হাতেই গড়ে তুলেছে এই পয়েন্টকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লালাভূমি হিসাবে।স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,অতি সম্প্রতি স্থানীয় সামাজিক সংগঠন হালিয়া পাড়া”উই ফর ইউ(WE for YOU)”সংঘের উদ্যেোগে”চলো বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতকে জানি”শ্লোগানকে সামনে রেখে হালিয়া পাড়া পয়েন্টে চট্টগ্রাম শহর ও কক্সবাজার জেলার এবং স্থানীয় নামী-দামী ১৬ টি দলের সমন্বয়ে এক বিরাট গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট অত্যন্ত সফল ও জাঁকজঁমকপূর্ণভাবে সম্পূন্ন করার পর থেকে উক্ত পয়েন্টে পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।এবং কাথরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব শাহজাহান চৌধুরী পর্যটকদের সুবিধার্থে সৈকতে কটেজ ও বৈঠকখনা নির্মাণ করেছেন,স্থাপন করেছন গভীর নলকূপ এবং পর্যটকদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলার সুবিধার্থে সমুদ্র সৈকতের মাঠে স্থাপন করেছেন স্থায়ী গোলবার।স্থানীয়রা আরো জানান বিগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোমেনা আক্তার হালিয়া পয়েন্টের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এই পয়েন্টেই বার্ষিক উপজেলা অফিসার্স বনভোজনের স্পট হিসাবেই নির্ধারণ করেন এবং তাঁর নিজ উদ্যেোগেই বেড়িবাঁধ থেকে সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার রাস্তার জন্য বরাদ্দ প্রদান করেন।কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে বর্তমানে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ব্যক্তি স্বার্থের কাছে হালিয়া পয়েন্টের সবচেয়ে আর্কষণীয়,নয়নাভিরাম ও মনোমুগ্ধকর সবুজের সমারোহ ঝাউবন,প্যারাবন,পর্যটকদের খেলার মাঠ এবং বালির বেঁড়িবাধ চরম হুমকির মুখে পড়েছে,এমন কি স্রোতের সাথে বিলীন হওয়ার চরম শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।স্থানীয়দের সাথে কথা বলে যতোদূর জানা যায় ২০১০ সালের দিকে চিংড়ি ঘেঁড়ের মালিক ঘেঁড়ে সমুদ্রের পানি ঢুকানো এবং নিষ্কাশনের জন্য নিজেদের ইচ্ছামতো প্রস্থে প্রায় ২- ২.৫ ফুটের ছোট্ট একটি খাল খনন করেছিল।যদিও জায়গা,ঝাউবন- প্যারাবন এবং সমুদ্র সৈকত দেখাশুনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী কর্তৃপক্ষ স্থানীয় উপকূলীয় রেঞ্জ অফিসের অনুমতি না নিলেও অজ্ঞাত কারণে তাঁরা নীরব ছিল বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
এখন সময়ের আবর্তনে দু’পাশ ভেঙ্গে ২-২.৫ ফুট প্রস্থের খাল প্রায় ৩০-৩৫ ফুটের মত বিস্তৃতি লাভ করেছে ও খালের দুই পাশে সৃষ্টি হয়েছে বেশকয়েকটি শাখা প্রশাখা।বর্তমানে খালের ভিতর প্রতিনিয়ত ঢুকে পড়ছে মাছ ধরার ছোট বড় ট্রলার এবং ট্রলারের পাংকার ঘুরনীতে স্রোতের সাথে সমুদ্রে মাটি তলিয়ে যাওয়ার কারণে বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হচ্ছে খাল ও শাখা প্রশাখাসমূহ।ফলে স্রোতের সাথে খালের দুই পাশের ঝাউবন,প্যারাবন,বালির বেঁড়িবাধ এবং সমুদ্র সৈকত ও খেলার মাঠ বিলীন হওয়ার চরম শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।কিন্তু ১ কি.মি.মধ্যেই হালিয়া পাড়াস্থ চুনতি বাজারে বাঁশখালী উপকূলীয় রেঞ্জ অফিসারের কার্যালয়ের অবস্থান হলেও রেঞ্জ কর্মকর্তা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না এবং রেঞ্জ অফিস অজ্ঞাত কারণেই নীরব রয়েছে বলেই স্থানীয়দের অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ সর্ম্পকে উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা জনাব মো.শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি খাল খননের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন,তিনি বলেন পানি চলাচলের ফলে প্রাকৃতিকভাবেই এই খালের সৃষ্টি। তাঁদের মৌখিক মানা অমান্য করে ও রাতের আঁধারে তাঁদের অগোচরে মাছ ধরার ট্রলার ঢুকার বিষয়টি স্বীকার করে দ্রুতই এইসব ট্রলার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান এবং তিনি আরো বলেন ট্রলার যাতে খালে ঢুকতে না পারে সে জন্য খালের প্রবেশ মুখে দ্রুতই খুঁটি পুঁতে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, মাত্র কয়েকদিন আগেই জোয়ারের পানি শুকিয়ে গেলে ভাটায় মাঠে আটকে পড়া একটি ট্রলারকে সমুদ্রে নামানোর জন্য মালিক পক্ষ নিজেদের ইচ্ছামতো আরেকটি খাল খনন করেন।অথচ জোয়ার আসলে অথবা কয়েকজন মিলেি ধাক্কা দিয়েই নামানো যেত ট্রলারটি।তাদের উদ্দেশ্যে ছিল আরেকটি খাল সৃষ্টি করে বিদ্যমান খালটিকে আরো বড় করা যাতে পরবর্তীতে অবাধে কয়েকটি ট্রলার একসাথে যাতায়াত করতে পারে এবং নোঙর করতে সুবিধা হয়।এই বিষয়ে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন হালিয়া পাড়া”উই ফর ইউ( WE for YOU)”সংঘের সাধারণ সম্পাদক আলী ইসলাম মুন্নাসহ কয়েজন সদস্য বলেন,ঝাউবন-প্যারাবন,সমুদ্র সৈকত,খেলার মাঠ এবং বালির বেঁড়িবাধ বিলীনের শঙ্কা হতে রক্ষার্থে দ্রুতই এই খালে মাছের ট্রলার ঢুকা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে এবং উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তাকে দ্রুতই দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।অন্যথায় মাননীয় সাংসদ,উপজেলা চেয়ারম্যান,উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদানসহ অন্যান্য সামাজিক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে এবং সচেতন এলাকাবাসীদের নিয়ে মানচব বন্ধন করবেন।