Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শিকড় ২ ; মাদ্রাসা জীবনের স্মৃতিচারণ

শিকড় ২ এর ফলাফল ; আমাদের কথা

আসসালামু আলাইকুম,
শেষ হল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাটানো সময়ের স্মৃতিচারণ মূলক আয়োজন “শিকড় ২” আয়োজন। এই আয়োজন ছিল মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অংশগ্রহণ করে এই আয়োজনে এবং বিচারকের দৃষ্টিতে ছয় জনকে বাছাই করা হল এবং কাকতালীয় ভাবে পাঁচজনই পালেগ্রাম হাকিম মিঞা শাহ আলিম মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থী একজন দারুল ইসলাহ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। এবং পোলিং ভোটেও শীর্ষস্থান পায় পালেগ্রাম হাকিম মিঞা শাহ আলিম মাদ্রাসা।
লেখা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বরাবরের মত বানান, প্রাঞ্জল উপস্থাপনা এবং বাস্তবিক ঘটনার আবেগীয় প্রতিফলনকে বিবেচনা করা হয়েছে। ইতমধ্যে শুরু হয়ে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে “শিকড় ৩” আয়োজন। লিংকে ক্লিক করেই অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আমাদের সুকুমারবৃত্তির চর্চা অব্যাহত থাকুক এই প্রত্যাশা রইল।

সম্পাদনা পর্ষদ,

শিকড় ২ 

প্রথম স্থান, একদিন মাগরিবের লালিমা যখন পশ্চিম আকাশে শেষের দিকে। বাড়িতে ঢুকে পুরাতন  খাতা বের করে কি যেন একটি লেখা খুঁজছিলাম। দুই তিনটি দেখার পর হঠাত আর একটি খাতার কয়েক পৃষ্ঠা খুলতেই চোখ থমকে গেল। থাকিয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ ঐ পৃষ্ঠার দিকে। কত সময় থাকিয়েছি ঠিক মনে নেই। হঠাত কে যেনো বলে উঠলো কাঁদছিস কেনো তুই? সামনে থাকিয়ে দেখলাম আম্মু। আরে তাইতো আমি কাঁদছি অথচ আমিই জানিনা। হ্যাঁ,  খাতাটি আমার আলিম (ইন্টার) ২য় বর্ষের খাতা। সেখানে রয়েছে এক অদ্ভুত সাইন বা স্মৃতি। অবশ্যই বুঝতে পারবেন কার বা কিসের সাইন। তখন আমি ২য় বর্ষে, বারটি ছিল বুধবার। আমরা ক্লাসে দুষ্টুমি করছিলাম। হঠাৎ হুজুর আসলো, কিরে তোরা ছোটদের মত এমন চিল্লাফাল্লা করছিস কেন ? তখন দুষ্টমি করে আরিফ বলল হুজুর মাইরদেন আমাদের। হুজুর বলল এই দিকে আই, তারপর আরিফকে একটা মক্কী তাড়ায়  মত করে বারি দিল। আজিজ বলল আমাকে একটি দিন, আমি ও আমির বললাম আমাদেরও দেন। হুজুর হাসতে হাসতে আমাদের হাতে আলতু আলতু করে বারি দিল। কে জানতো আমাদের কপালে আর সে বারিও আর জুটবে না। হুজুর ঢুকার সময় চেহারা খুবই মলিন ছিল। হ্যাঁ বলে রাখি হুজুর ঐ মাসে পদোন্নতি পেয়ে উপধ্যক্ষ  হয়ে ছিলেন আমাদের মাদ্রাসায়। তিনি বললেন কালকের প্রশ্নটি লিখে দেয় সবাই। স্বাভাবিকভাবে সেদিন সবার আগে লিখে আমি খাতাটা জমা দিলাম হুজুর সুন্দর করে একটি সাইন দিলেন। এর আগে যে গুলি দেখাইছি সেখানেও সাইন করে নিলাম দুষ্টমি করে। ।
বৃহস্পতিবার হুজুরের ক্লাস ছিলনা। পরের দিন জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়ে সাধারণত পুকুরের ঘাটে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। আমার এক বন্ধু এসে (আজিজ) বলল,
আজিজ: হুজুরের জন্য দোয়া করিস। 
আমি বললাম, কোন হুজুর? 
আজিজ: ইসমাইল হুজুর। 
কি বলিস?? কি হয়েছে হুজুরের?
আজিজ: হুজুর গত রাতে হঠাত অসুস্থ হয়েছিল। এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। 
আচ্ছা, নামাজ পড়ে নেয় তারপর কথা হবে।
আজিজ: আচ্ছা! 
পরিকল্পনা ছিল কয়েকজন মিলে দেখতে যাবো হুজুরকে। নামাজ শেষে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু ঘুমালাম। হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো। আমি: ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বললাম, হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। 
আরিফ: দেখতেছি কেঁদে কেঁদে কি বলছে কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা যতটুকু বুঝলাম আমাদের হুজুর ইন্তেকাল করেছেন ।  মস্তিষ্কের নিউরন মনে হচ্ছে সহস্র ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফুটছে। ফোন কাটছি কিনা জানা নেই। ১ বছরের বাচ্চা যেমন মায়ের দুধের জন্য কাঁদে সেভাবে কাঁদতে কাঁদতে বাহিরে আসলাম। আম্মু বলল কি হয়েছে কি হয়েছে? কিছুই বলতে পারছিনা। একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম কিছুক্ষণ পর বললাম,  আমাদের হুজুর মারা গেছে। 

আম্মু আর দু-একটা ভাবি ছিল উঠানে।  তারা অনেক সান্ত্বনা দিল। আরিফ কে কল দিয়ে বললাম। মাদ্রাসায় চলে আয়। সে বলল আচ্ছা আমি আসছি। দুই জনই গিয়ে দেখা করলাম গেইটে। না, কেউ কথা বলতে পারছিল না। মাঠে গিয়ে দেখলাম, আনেকই চলে আসছে। বড় হুজুর অর্থাৎ অধ্যক্ষ হুজুর বলল, জানাজা এখানে একবার হবে তারপর বাড়িতে একবার হবে। জানাজায় এত মানুষ হয়েছে যে একদম যেনো কোন একটি রাষ্ট্রীয় আয়োজন। ৫ বছরের ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে ৮৫ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত যেভাবে চোখের জল ফেলেছে।  আগত সবাই অবাক, কিভাবে হুজুর সবার মনকে জয় করে নিল আড়ালে। এতদিন আমরা জানতাম না।  সব আয়োজন শেষে হুজুরের লাশবাহী গাড়ী উপস্থিত। যে হুজুরের জন্য চক আর মার্কার কিংবা পান নিয়ে আসতাম। উনার জন্য আজ নিয়ে আসলাম এক সাজসজ্জাহীন পালকি যে পালকিতে চড়ে মানুষ যায় কেবল আরে ফিরে আসেনা। এমন বেদনাবিধুর পরিবেশ এই অল্প বয়সে দেখিনি। একজন মানুষের জন্য এত মানুষ নিরবে চোখের জল ফেলে। এক অদ্ভুত পরিবেশ। চক, মার্কার পানের বদলে আজ হুজুরের জন্য নিয়ে আসা হল পকেট ছাড়া, সেলাই ছাড়া সাদা জামা, যে জামা পরে হুজুর বরের বেশে নিষ্প্রাণ দেহ নিয়ে চলে যাচ্ছেন না ফেরার দেশে।

স্পিকার নিয়ে যখন অধ্যক্ষ (Principal) হুজুর বক্তব্য শুরু করলো, সবাই মাসুম বাচ্চার মতন করে ছোট বড় সবাই হু হু করে কেঁদে উঠলো। সে এক অজানা পরিবেশ। মনে হচ্ছে কান্নার প্রতিযোগিতা চলতেছে। মানুষ আর মানুষ শুধুই কান্নার আওয়াজ। 

জানাযা শেষে গাড়ি কোনমতেই বের হতে দিচ্ছিলাম না, সকল ছাত্র এবং অনন্য মানুষরা গাড়ি চলতে দিচ্ছেনা। ডাইরেক্ট টেনে রেখে দিছে। আমরা চিৎকার করে বলতে লাগলাম! হুজুর কালকে আরবী প্রশ্ন কাকে লিখে দিবো। কে আমাদেরকে সিরাজী জায়গার বন্ঠন নিয়ে ক্লাস করাবে। হুজুর আমরা কি ভাবে মেনে নিবো যে আপনি আর এই গেইট দিয়ে ডুকবেননা। হঠাৎ অধ্যক্ষ হুজুর চিল্লিয়ে বলে উঠলো, হে আল্লাহ এই অবুজ ছেলেদের কে আমরা কিভাবে স্বান্তনা দিবো। আল্লাহ মাওলানা ইসমাঈল সাহেবকে তোমার কুদরতের হাতে তুলে দিলাম আমরা। সবার আওয়াজ আরো উঁচু হয়ে গেলো। হে আল্লাহ আমাদের হুজুরকে ছাড়া কিভাবে চার দেওয়ালের ক্লাসে বসবো?  এক অদ্ভুত হৃদয়ের বন্ধন ছিড়ে চলে যাচ্ছে। 

আরও পড়ুন  গন্ডামারায় নিহত শ্রমিকদের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর

কিছুূদিন পরে আমাদের আলিম পরিক্ষা শুরু হবে। সিএনজি একটি নিয়ে কিছু বন্ধুবান্ধব মিলে চলে গেলাম, গন্তব্য  হুজুরের কবর যিয়ারতের উদেশ্য। হুজুরের কবর ছিল মসজিদের পাশে। সেখানে নামাজ পড়ে সবাই কবর যিয়ারত করে চলে আসলাম। হঠাৎ মনে পড়ল কাজী নজরুলের সেই চির চেনা সুর! “মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেনো ঘরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।”  এখনও মনে পড়ে হুজুরের সেই কথা, থাকিয়ে থাকি আকাশের দিকে। পরিশেষে বলবো। হে আরশের অধিপতি, তুমি আমাদের প্রান প্রিয় হুজুরকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান কর। আমিন! সুম্মা আমিন। 
বিদ্র:- যখনই টাইপিং করতেছি, হাত দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর চোখ মুছতেছি। চোখে সেই সাগর পরিমান জল। ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। 

নাম : ওমর ফারুক
ব্যাচ : দাখিল -২০১৬
মাদ্রাসা : পালেগ্রাম হাকিম মিঞা শাহ আলিম মাদ্রাসা।
বর্তমান : সরকারি সিটি কলেজ,  চট্টগ্রাম। 

◾দ্বিতীয় স্থান
পরিবারের বড় ছেলে হওয়াতে ইসলামী শিক্ষার্জনে মা-বাবাদের আগ্রহ একটু বেশিই থাকে।আমার বেলায়ও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।তবে হাফ পান্ট পরে আন অফিসিয়ালি কিছুদিন প্রাইমারি স্কুলে যাওয়া হয়েছিল।তবে এ যাত্রা বেশিদূর আগায়নি।এবার মা-বাবার স্বপ্নের বাস্তবায়নের যাত্রা শুরু। ২০০১ সালের শুরুর দিকে কোন এক রোদ মাখা সকালে জেঠাত ভইয়ের হাত ধরে জীপে চড়ে মাদরাসায় গিয়ে শিশু ওয়ানে(প্রাক-প্রাথমিক) ভর্তির মাধ্যমে একাডেমিক শিক্ষা জীবনের যাত্রা শুরু।

আমি যখন শিশু ওয়ানে ভর্তি হই মাঝু(জেঠাত ভাই) তখন দশম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত।আমি তাকে মাঝু ডাকাতে সিনিয়র জুনিয়র সবাই তাকে মাঝু বলে ডাকত।তিনি কিছুদিন সেখানে শিক্ষকতা করেছিলেন তখনও আর এখনও মাঝু বলে ডাকে।

শৈশব জীবনে ঘটে যাওয়া সব স্মৃতিই এখনও আমার চোখে ভাসমান।সব ম্মৃতি তো এখানে বলার সুযোগ নেই তবে কোনটা বাদ দিয়ে দিয়ে কোনটা উল্লেখ করব তা ভেবেই ব্যকুল।বাড়ি থেকে মাদরাসা দূরে হওয়াই আমাকে মাঝুর সাথে হোষ্টেলে থাকতে হয়েছে।তাই হোষ্টেলের সবার কনিষ্ট বলে শিক্ষক ও সিনিয়র ভাইরা খুব স্নেহ করতেন।

হোষ্টেল জীবনের অনেক গুলো স্মৃতি মনে এসে ভিড় জমিয়েছে স্মৃতিতে,অম্লান হয়ে আছে মাদরাসার মাটির মসজিদ,লিচুগাছ ঘেরা বালুময় মাঠ,কালীপুর স্কুল মাঠে সাইকেল চালানো শিখা,মাদরাসার মাঠে ফিরোজ ভাইয়ের ফুটবল শিখানো ও অভয় বাণীতে সাহস দেয়া,শুক্রবার বাবুর্চি “মামু” ছুটিতে থাকায় পুকুর থেকে মাছ ধরে রান্না করে খাওয়া, ফজরের নামাজ পড়তে ওঠলে লিচু কুড়ানোর ধুম,বন্ধুদের পেয়ারা,কাঠাল ও লিচু বাগানে হামলা,ছরা বেঁয়ে অনেকদূর গিয়ে হাতির সাক্ষাৎ, বাঁশখালী কলেজের মাঠে ফুটবল খেলতে যাওয়া, ছোট বলে খেলার সময় বড়দের কাপড় জমা রাখা,হোস্টেলের তরকারি ভাল না থাকলে বন্ধুর বাড়ি থেকে তরকারি আনা, মরহুম বন্ধু মনছুরের দুষ্টামি,এনাম ও শোয়াইবের খাবার নিয়ে নেকামি, রফিক ভাইয়ের সকালের মক্তব,বক্কর ভাইয়ে নেতৃত্ব, জসিম ভাইয়ের আদর, হোস্টেলে ইকবালের সাথে খুনসুটি, ৫ টাকার গাড়ি ভাড়া বাচিয়ে বাড়ি থেকে হেঁটে আসা,মিযানুচ্ছরফ ক্লাসে নুর মোহাম্মদ হুজুরের মাইর,বুড়ো হুজুরের ক্লাস, জুনের খেলা, আবাসিক অনাবাসিকদের সাথে ঝগড়া, বিকালের ক্রিকেট, হাডুডু সব মিলিয়ে অনবদ্য একটি সময় ছিল আমার শৈশবের  বিদ্যাপীঠ পালেগ্রাম হাকিমিয়া শাহ্ সিনিয়র মাদরাসাকে ঘিরে।

জন্টু স্যার! আমাদের বাংলা পড়াতেন, খুব সিধে-শান্ত প্রকৃতির মানুষ তবে খুব রাগী।তাই ওনার ক্লাসে আমরা দুষ্টুমি করতাম বেশি।মনছুর আমদের ক্লাসের ক্যাপ্টেন,সে ১ম টেবিলে বসত সাথে ছিল প্রিন্সিপাল হুজুরের ছেলে বাহার।দ্বিতীয় টেবিলে শোবাইব,নেচার ও আমি স্যার গল্প পড়াচ্ছেন সে মুহুর্তে শোয়াইব বাহারকে একটা গুতা দিল।সাথে সাথে বলল স্যার! পেছন থেকে আমাকে গুতাচ্ছে।কে করল একাজ স্যারের প্রশ্ন, শোয়াইব বলল স্যার হুমায়ন! ব্যস মাইর শুরু আমি এত বলি স্যার বুঝতেই চায়না।ক্লাস শেষে স্যারকে বিস্তারিত বললাম,স্যার খুব অনুতপ্ত হলেন।স্যার আব্বুর স্কুল বন্ধু তাই দায়িত্ব ছিল আমার খোজ নেয়ার আর স্যারের মারফতে আব্বু প্রায়শ টাকা পাঠাতেন।স্যারের সাথে বশিরউল্লাহ বাজারে সাক্ষাৎ হয় মাঝেমধ্যে ডাক দেয হুমায়ন!
কেমন আছ?কি কর? আন্তরিকতার সহিত দোয়া করে।

এখন আর সেই মাটির মসজিদ,কাঠের ঘাট,বালুময মাঠ,বাঁশের গেইট,বন্ধুদের আর দেখা মেলে না।মাঝেমধ্যে যাওযা হয় শিক্ষক মহোদয়দের সাথে সাক্ষাত ও চারিদিক একটু চোখ বুলিয়ে ফের ফিরে আসি নিজ আলয়।
তাই কবির সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলি,
পুরনো দিনের সে কথা ভুলবি কিরে হায,
সে যে চোখের দেখা মনের কথা সে কি ভূলা যায়!

মুহাম্মদ হুমায়ন কবির
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
পালেগ্রাম হাকিমিয়া শাহ্ সিনিয়র মাদরাসা।

◾তৃতীয় স্থান

মানুষের স্মৃতি গুলো গতানুগতিক হলেও
আমারটা না হয় একটু ব্যতিক্রম আর কি!
আমি একজন মাদরাসা স্টুডেন্ট। আর জীবনের প্রায় অধিকাংশ সময় কাটিয়েছি হোস্টেলে।আহ! কত রকম যে স্মৃতি আছে হিসাব নেই।অনেক স্মৃতি ধীরে ধীরে বিস্মৃতির পথে।
ভালোবাসা আর ভালোলাগার প্রিয় ক্যাম্পাসটি,
পাহাড়ের পাদদেশে, সবুজে ঘেরা প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য বেষ্টিত  কালীপুর ইউনিয়নের পালেগ্রামে অবস্থিত। বাঁশখালীর অন্যতম বিদ্যাপীঠ,
“পালেগ্রাম হাকিম মিয়া শাহ্ সিনিয়র মাদরাসা”
যার বুকে রচিত হয়েছে হাজারো স্বপ্ন গড়ার ইতিহাস আর আমার অনেক স্মৃতি। স্মৃতি বিজড়িত সেই ক্যাম্পাসের কথা অনেক পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করলেও, আক্ষেপ থেকে যাবে অনেক কিছু বাদ পড়েছে। আর সেখান থেকে ক্ষুদ্র এক খানা স্মৃতি পাঠকদের উদ্দেশ্যে লিখা।

✍️ হোস্টেল জীবন যারা অতিক্রম করেছে তারা জানে কত কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়।খাবার থেকে শুরু করে ছোট-বড় অনেক সমস্যা লেগেই থাকে।আবার মাঝেমধ্যে পরিবার থেকে দূরে আছি তার শূন্যতা নিত্য ব্যাপার। মন খারাপে কম্বলের ভিতর কান্না করা।একবেলা নাস্তা খাওয়ার জন্য কত তীব্রতা!
আহ! সব ত্যাগ পড়াশোনার জন্য। দিনশেষে কষ্ট করে বড় হওয়া মানুষ গুলো দেশের শীর্ষ স্থানে নেতৃত্ব দিতে পৌঁছে যায়। আর এক সময় তাদের গল্প গুলো মানুষদের আকর্ষণ হয়।আর দীর্ঘ নিশ্বাস বুকে থেকে যায় অতীতের অস্তিত্বহীন অবস্থা স্মরণ হলে।

আরও পড়ুন  বাঁশখালীত ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিশু সহ ২জন নিহত

✍️হয়তো তখন ক্লাস সিক্স কিংবা সেভেনে।আমরা হোস্টেলে জুনিয়র লেভেলের। খাবারের মান মাঝারি তবুও সুন্দর নান্দনিক পরিবেশের কারণে ভালো লাগতো।তবে,খাবার খারাপ হলেও আমরা বাবুর্চিকে কিছু বলতে পারতাম না জুনিয়র তাই।
একদিন তরকারি গুলো একদম সিদ্ধ হয়নি।ব্যাপার টা প্রায় ঘটতো। কি আর করার কপালে যা আছে মানতে হবে।তবে আজ আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ব্যাপারটা প্রিন্সিপাল হুজুরকে জানাতে হবে।প্রিন্সিপাল আমাদের সকলের মাথার তাজ, মধ্যমণি আলহাজ্ব মীর আহমদ আনছারী। হুজুর আমাদের খুব ভালোবাসতেন। হোস্টেলের স্টুডেন্ট দের সাথে সরাসরি কথা বলতেন।

✍️একদিন আসরের পর হুজুরের কাছে সবাই গেলাম অভিযোগ করতে।একে একে সবাই বলতে লাগল সমস্যার কথা।একজন চুপ করে থাকলো।যাকে হোস্টেলের সবাই “পাগলা মিয়া” বলে ডাকতো। হুজুরের আদেশ,
হুজুরঃ- দেখি পাগলা মিয়া তোমার সমস্যা বলো।
পাগলা মিয়াঃ- হুজুর, রান্না করা বেগুন টিপলে
পানি গলে,কিন্তু বেগুন গলে না।
সবার সে কি অট্টহাসি! পাগলা মিয়ার কথায় সবাই পাগলা হাসি দিল।

✍️আজো স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে আছে।
ভুলতে পারিনা হারানো সেই দিন গুলোর কথা।
একদম সহজ সরল- সাদামাটা।এই পাগলা গুলোকে বড্ড মিস করি।

মোঃ গিয়াস উদ্দিন (আজাদ)
প্রাক্তন ছাত্রঃ-
দাখিল ব্যাচঃ ২০১৮
আলিম ব্যাচঃ ২০২০
পালেগ্রাম হাকিম মিয়া শাহ্ সিনিয়র মাদরাসা।


◾চতুর্থ স্থান;
মাদ্রাসায় কাটিয়েছি মাত্র দুই বছর, তা হয়ে উঠল আমার জীবনের সেরা সময়। ক্ষুদ্র এই সময়, অনেক জীবনের গল্প জড়িয়ে রয়েছে আমার সাথে।  শিক্ষকদের মধ্যে যার কথা সবার প্রথমে আসে, তিনি অধ্যক্ষ মীর আহমেদ আনসারী হুজুর(ম.জি.আ) আমাদের কুরআন ক্লাস নিতেন, অত্যন্ত চমৎকার হুজুরের ভাষা। আমাকে স্নেহ করে, “আরিফ সাব” বলে ডাকতেন। হাকিম মিয়া মাদ্রাসার একজন কান্ডারী যার হাত ধরে উঠে এসেছে এই মাদ্রাসা। তিনি সব দিক দিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতেন। সত্যি এজন্য হাকিমিয়া মাদ্রাসা বাঁশখালী তথা চট্টগ্রামের অন্যতম একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর আমাদের মরহুম মাওলানা ইসমাইল হুজুর (রহ) যার কথা স্মরণ হলে বুকটা কেঁদে ওঠে, অত্যন্ত নম্র ,ভদ্র ,মার্জিত মিষ্টভাষী ছিলেন। আমাকে আদর করে ” তুই বলে” সম্বোধন করে ডাকতো। কখনো কটু কথা বলতেন না।মাদরাসায় অধ্যায়নকালীন এটাই ছিল সবচেয়ে বিয়োগ ব্যথা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে হুজুরের নাম স্মরণ করি। মাঝে মাঝে গভীর রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে ওঠি কান্না ধরে রাখতে পারি না। ভালোবাসাটা অন্তর থেকে আল্লাহর জন্য। কামরুল স্যারের বাংলা ক্লাসে অপরিচিতা গল্পে খুব মজা হতো। বিশেষ করে আমরা বন্ধুরা খুব দুষ্টুমি করতাম। আমি লাজুক টাইপের তাই খুব বেশি হাসতাম। স্যার বলতো “ওডা আরিফ ” সাইফুল স্যারের ইংরেজি ক্লাস খুব জমিয়ে করতাম,স্যার মজা করে আরিফ শাহ্(র)  ডাকতেন।

মাওলানা শেহাব উদ্দিন হুজুরের আরবি প্রথম পত্র ক্লাস দিয়ে শুরু হতো, অমায়িক একজন মানুষ। সবসময় স্নেহ করে বলতেন “মেধাবী ছাত্র আরিফ”। খুব অনুপ্রাণিত হতাম,
নাসরিন ম্যামের অর্থনীতি ক্লাসে বন্ধুদের দুষ্টুমি আরো বেড়ে যেত। শিক্ষিকা হিসেবে মেয়েদের জন্য একজন অনুকরণীয় আদর্শ নাসরিন ম্যাম। আইসিটি শাহাবুদ্দিন স্যারের সাথে সবাই মিলে দুষ্টামি করতাম।

ক্লাস ছাড়াও অধিকাংশ সময়ই মাদ্রাসায় কাটাতাম। মাদরাসার প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারী থেকে শুরু করে সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের সাথে আমার সখ্যতা গড়ে উঠে। যার কারণে হৃদয়ের মণিকোঠায় পালেগ্রাম মাদ্রাসা আর তার সাথে জড়িত সকলে।   আজন্ম আমার শিক্ষকদের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা। আল্লাহ আমার শিক্ষক যারা বেঁচে আছেন তাদের নেক হায়াত দান করুন। আর যারা বেঁচে নেই তাদেরকে জান্নাতুল ফেরদৌস নাসিব করুন।
(আমিন)

বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র সবার  সাথে পাহাড়ে, সমুদ্রে ও বিভিন্ন ধরনের দর্শনীয় জায়গায় বেড়াতে যেতাম সত্যি অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার ছিল। সবাই মিলে খুব মজা করতাম। হোস্টেলে আমার কিছু জুনিয়র ভাই , যাদের সাথে আমার সম্পর্কটা নিবীড় ভাবে গড়ে উঠে। অনেক সময় যেতাম, গল্প করতাম, রাতে ওদের সাথে থাকতাম। কত ধরনের স্মৃতিবিজড়িত মনে পড়লে কান্না আসে। জীবনের এই পর্যায়ে এসে সে খুনসুটি গুলো আর নেই, এখন কেবল শুধুই স্মৃতি।

আহা! আজ স্বার্থের জন্য মায়া ত্যাগ করতে হলো।ছেড়ে আসতে হলো ভালোবাসার প্রাঙ্গণ, আর সেই আঙ্গিনায় থাকা হাজারো মানুষকে।যাদের স্নেহ প্রীতি পেয়ে আমরা ধন্য।যাদের আপ্রাণ চেষ্টায় আমরা মনুষ্যত্ব শিক্ষা লাভ করেছি। আজ পেরিয়ে গেছে অনেক বছর।ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ে পুরনো দিনের সে কথা। স্মৃতি মানুষকে নানা রকম করে জড়িয়ে রাখে।ব্যস্ততা শেষে একটু একা হই,তখনি উঁকি মারে ফেলে আসা স্মৃতি। কত আনন্দ,ব্যথা-বেদনা!এই শোকে বুঝি, কবি বলেছেন:-
          ছেড়ে নাহি যেতে চাহে মন,
                 তবু চলে যেতে হয়।

মোঃ আরিফুল ইসলাম
প্রাক্তন ছাত্র:-
আলিম ব্যাচ:-২০১৮
পালেগ্রাম হাকিম মিয়া শাহ্ সিনিয়র (আলিম) মাদ্রাসা।

◾৫ম স্থান,
আসসালামু আলাইকুম।
যে স্মৃতি ভোলা যায়া না, সে আমার ছাত্র জীবনের স্মৃতি।শৈশবে পরিবারের গন্ডির বাইরে প্রথম বিদ্যাপীঠ,বন্ধু, সহপাঠী ও শিক্ষক, মাদরাসার আঙিনা ঘিরে কত মধুর স্মৃতি। আমি যখন পশ্চিম বাঁশখালী দারুল ইসলাহ (দাখিল) মাদরাসায় আব্বুর সাথে ভর্তি হতে গেলাম।মাদরাসা দেখে ভীষণ খারাপ লাগল। কারণ মাদরাসায় আছে মাত্র একতলা বিশিষ্ট একটি দালান,আরেকটি কাঁচা মাটির ঘর (বর্তমানে পাকা) আব্বুকে বললাম আমি মাটির এটাতে পড়ব।আমাদের স্কুলে(পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয়) অনেক গুলো বিল্ডিং আছে।আব্বু বলল আস্তে আস্তে হয়ে যাবে বিল্ডিং।আমার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ছাত্রত্ব এই মাদরাসায়।যখন ভর্তি হয় তখন সবাই ছিল আমার অপরিচিত।কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আস্তে আস্তে সবার সাথে পরিচয় হয়।তখন থেকেই বুঝেছি আমার প্রায় সহপাঠীরা অনেক মিশুক,আন্তরিক ও বন্ধুবৎসল যার কারণে সহজে আমাদের ব্যাচটা একটি পরিবারে পরিণত হয়।আমাদের পরিবারের নাম দেওয়া হয় বন্ধন।কিন্তু এই পরিবার বেশীদিন স্হায়ী হয়নি।যাইহোক আমাদের ব্যাচটা আমাদের বিদ্যাপীঠের সেরা ব্যাচ। যেটা আমাদের কাজে-কর্মে বা পারফরমেন্সে প্রমাণিত। আমাদের ব্যাচে ০৬ জন জিপিএ -৫ পেয়েছে।এছাড়া মাদরাসায় আমাদের ব্যাচের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য সরব ছিল সব স্তরে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি,তোমাদের মত সহপাঠীপেয়ে, তোমারা যেন সরাজীবন পাশে থাক।
এই পথ পাড়ি দেওয়ার পেছনে যাদের অনন্য ভূমিকা ছিল,যাদের অনুপ্রেরণা, ভালবাসা ও সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া এত দূর আসতে পারতাম না সেই সকল ওস্তাদদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালবাসা রইল। মহান আল্লাহ আপনাদের নেক হায়াত দান করুন।(আমিন)
মাধ্যমিক স্তরে দুইজন স্যারকে হারিয়েছি,খাইর আহমদ(গুনাগরী), দিদারুল আলম( রত্নপুর), আল্লাহ মরহুমদের জান্নাতবাসী করুক।(আমিন)

মোজাহেদুল ইসলাম
ব্যাচ- বন্ধন২০১৪
পশ্চিম বাঁশখালী দারুল ইসলাহ(দাখিল) মাদরাসা।
বাঁশখালী,চট্টগ্রাম।

◾ষষ্ঠ স্থান,
মানুষের জীবন তিনটি ভাগে বিভক্ত তার মধ্যে ছাত্র জীবন একটি খুব আনন্দময় জীবন।সেই মধুর সময় টা কাটিয়েছি আমার প্রাণ প্রিয় দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পালেগ্রাম হাকিম মিয়া শাহ আলিম মাদরাসায়। মানুষের জীবনের যতগুলো স্মৃতি থাকে তার মধ্যে অন্যতম একটি স্মৃতি হল ছাত্র জীবনের স্মৃতি। ২০০৭ সালে আমি একটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা থেকে তৃতীয় শ্রেণি পাশ করে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হতে যাই। তখন আমাকে ছোট দেখে পালেগ্রাম মাদ্রাসায় আবার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পুনরায় ভর্তি করিয়ে দেয়। তখন একটু খারাপ লাগলো আমার বন্ধুরা আমার উপরের ক্লাসে ভর্তি হয়েছে আমাকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করিয়ে দিল। পরে আবার সব কিছুই বাদ দিয়ে পড়া শুরু করলাম। ক্লাসের সবার সাথে মিলেমিশে পড়াশোনা শুরু করি। এই একলা একলা এসে সবচেয়ে বেশি ভয় পাইতাম মাস্টার আলী হোসেন স্যার কে।আমাদেরকে ইংরেজি পড়াইতেন।উনাকে ভয় পাইতাম উনি ছাত্রদেরকে সবসময় বকাঝকা করতেন তাই।মনে মনে বলতাম চতুর্থ শ্রেণীরতে  উঠলে কিভাবে ক্লাস করব। চতুর্থ শ্রেণীতে উঠে আলী হোসেন  এর এক মাস ক্লাস    পাওয়ার পর হঠাৎ একদিন শুনলাম আলী হোসেন স্যার আর থাকবে না। বিদায় হয়ে যাবেন।  তখন আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে কি যে খুশি। ইবতেদায়ীতে আর একটা স্যার ছিলে উনি ও খুব মজা করতেছে ছাত্র ছাত্রী দের সাথে।
২০১১ সালে ইবতেদায়ী ক্লাস ফাইভ পাশ করে দাখিল শ্রেণীতে পদর্পণ করি। ৮ম শ্রেণীতে গনিত ক্লাস নিতেন মাষ্টার ইউনুছ কামাল আজাদ স্যার।আর নাহু-সরফ এর ক্লাস নিতেন মাওলানা নুর মুহাম্মদ সাহেব। গনিত ক্লাস আর ইংরেজি ক্লাস খুব ভালো লাগতো কিন্তু নাহু-সরফ এর ক্লাস খুব ভয় লাগতো বিষয় টা খুব কঠিন লাগতো। খুব বিরক্তকর একটা বিষয় কিন্তু প্রতিটা স্যার ও হুজুর খুব দক্ষতার সাথে পড়াইতেন। কিন্তু আমি নাহু-সরফ এর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে চলে যেতাম নাস্তা করতে।  ২০১৪ সালে অষ্টম শ্রেণি পাশ করে নবম শ্রেনিতে উত্তীর্ণ হই। নবম শ্রেণিতে ক্লাস টিচার ছিলেন ইউনুছ  স্যার উনি আমাদের  গনিত ক্লাস নিতেন। তখন উনি আমাদের কে একটা জরিমানা করতেন ক্লাসে একদিন অনুপস্তিত থাকলে ১০ টাকা জরিমানা। এই টাকা গুলো ক্লাস ক্যাপ্টেন এর কাছে জমা রাখতো । এই ভাবে আমরা জরিমানার টাকা দিয়ে ক্লাস এর জন্য হোয়াট র্বোড কিনে নিলাম। এতো গুলো টাকা হয়েছিল যে সব বন্ধুরা মিলে ভ্রমণ করে আসলাম পতেজ্ঞা সী-বিচে।

আরও পড়ুন  দস্যুপ্রবৃত্তি ছেড়ে মূল স্রোতে তারা ; পেলেন র‍্যাবের উপহার

নবম/দশম শ্রেণিতে  তেমন ফাঁকি দেওয়া হয়নি। ওখানে আমার প্রিয় স্যার ছিলে মাষ্টার জসিম সাহেব।উনি আমাদের কে ইংরেজি পড়াইতেন।ছাত্র/ছাত্রী দের কে খুব ভালোবাসতেন। আমি তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। দশম শ্রেণির একটা মজার ঘটনা হলো মাদরাসয় পুকুর ভরাট এর কাজ চলতেছে তখন দপ্তরী জেবল হোসেন ভাই ক্লাস নোটিশ দিয়ে আসলো প্রিন্সিপাল সাহেব সাবাই কে মাঠি টানার জন্য যেতে বলছেন। আমি সেই ফাঁকে বাড়িতে চলে আসছি বাড়ি কাছে ছিল তাই। বন্ধুরা স্যার কে বলে দিলেন সোহেল চলে গেছে স্যার থেকে ছেলে ৪/৫জন পাঠিয়েছে আমাকে নেওয়ার জন্য তখন আমার ভয় শুরু হয়ে গেছে চিন্তা ভয়ে ভয়ে গেলাম স্যার বলল চোর পালিয়ে গেছো কেন? কাজ করো। তখন একটু ভয় কমলো এরপর কাজে চলে গেলাম। ২০১৭ সালে দাখিল পাশ করে আলিম শ্রেণিতে পদার্পন  করি। আলিম প্রথম বর্ষে ক্লাস টিচার ছিলেন  প্রভাষক মাওলানা শিহাব উদ্দিন সাহেব তবে আলিম এর প্রত্যেক স্যার /হুজুর  সবাই খুব প্রাণপ্রিয় ছিলেন। সবাই খুব আন্তরিকতার সাথে পড়াতেন। আলিমে ইংরেজি ক্লাস নিতেন শ্রদ্ধেয় সাইফুল ইসলাম স্যার বাংলা নিতেন কামরুল ইসলাম স্যার আলিম আমার প্রিয় একজন হুজুর ছিলেন মুফতি মাওলানা মু. ইসমাঈল সাহেব।তিনি আমাদের ফিকাহ আর অন্যান্য বিষয় পড়াইতেন। তিনি খুব নম্র-ভদ্র ও নরম মনের মানুষ ছিলেন ছাত্রদের সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ আচার-আচরণ করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের কে এতিম করে আল্লাহ তায়ালা ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান। তখন খুব কষ্ট লাগলো।  [মৃত্যু ০১/০২/২০২০ খ্রীঃ] আলিম এর প্রত্যেক টি টিচার এর ক্লাস উপভোগ্য ছিল। পালেগ্রাম মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের অবিভাবক ছিলেন মওলানা মীর আহমদন আনসারী সাহবে [প্রিন্সিপাল] তিনি বাঁশখালী তে সেরা অধ্যক্ষ নির্বাচিত  হন।  মাদরাসায় তাদের অবদান অবিস্মরণীয়। পালেগ্রাম মাদরাসা বাঁশখালী তথা দক্ষিন চট্টগ্রামের অন্যতম একটি দ্ধীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরিশেষে শিক্ষক/শিক্ষিকা ও মাদরাসার জন্য দোয়া রইল যেন আজীবন সেরা দ্ধীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে সুনাম ধরে রাখতে পারে এই কামনা করি।

মো.সোহেল তানভীর
দাখিল ব্যাচ ২০১৭,
আলিম ব্যাচ ২০১৯,
সাবেক শিক্ষার্থী, পালেগ্রাম হাকিম মিয়া শাহ আলিম মাদরাসা।