Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ষষ্ঠীর মাধ্যমেই ৫ দিনের শারদ উৎসব শুরু

বাঁশখালী পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রনব দাশ বলেন, এই বছর৮৮ মন্ডপে ও ১৬০টি ঘট পূজা হচ্ছে। প্রতিটি মন্ডপে সরকারি অনুদান হিসেবে ৫০০ কেজি চাল বিতরণ করা হয়েছে। সেই সাথে প্রতি মন্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতি মন্ডপে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

শারদ উৎসব তথা দুর্গাপূজা হল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব এবং বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় নয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনের এক বিশাল অধ্যায়। দুর্গাপূজা মূলত শক্তির দেবী দুর্গার আরাধনা, যিনি মহিষাসুর নামক অসুরকে বধ করে পৃথিবীতে ধর্ম ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি, এটি সনাতন সম্প্রদায়ের নিকট মিলনমেলা ও আনন্দ উৎসবের একটি মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে, দুর্গাপূজা ধর্মীয় সহাবস্থানের উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে সকল সম্প্রদায় মিলে এই উৎসবকে আনন্দের সাথে উদযাপন করে।

দুর্গাপূজার পুরাণগত প্রেক্ষাপট : দুর্গাপূজার মূল কাহিনী পুরাণ থেকে নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে ‘দেবী মহাত্ম্যম’ গ্রন্থ থেকে, যা মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত। কাহিনী অনুযায়ী, মহিষাসুর নামক এক অসুর দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গ ও পৃথিবী দখল করেছিল। অসুরদের অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য দেবতারা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বরের (শিব) শরণাপন্ন হন। তখন দেবতাদের সম্মিলিত শক্তি থেকে দেবী দুর্গার জন্ম হয়। দশভুজা দেবী দুর্গা তার অস্ত্রসমূহ ব্যবহার করে মহিষাসুরকে বধ করেন এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। দেবী দুর্গা কেবলমাত্র যুদ্ধের দেবী নয়, তিনি মাতৃত্বেরও প্রতীক। তার সাথে তার চার সন্তান—লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক এবং গণেশ—সব সময় থাকেন, যা তার মাতৃরূপকে আরও বিশিষ্ট করে তোলে।

দুর্গাপূজার সময়কাল : বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে দুর্গাপূজা সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী উদযাপিত হয়। যদিও পঞ্জিকা অনুসারে সময় ভিন্ন হতে পারে, পূজার আচার-অনুষ্ঠানের মূল কাঠামো সর্বত্র একই। ষষ্ঠীর দিনে দেবীর বোধন হয়, অর্থাৎ দেবীর মর্ত্যে আগমন। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী দিনগুলোতে দেবীর পূজা সম্পূর্ণরূপে অনুষ্ঠিত হয়। দশমী দিন দেবী দুর্গার বিসর্জন দেওয়া হয়, যা একটি বিশেষ আচার এবং আনন্দ-বিষাদের মিশ্র অনুভূতির প্রকাশ।

আরও পড়ুন  বাঁশখালী‌তে বিশ্ব জনসংখ্যা দিব‌সে ইপসা'র র‍্যালী ও আ‌লোচনা সভা

দুর্গাপূজার আচার-অনুষ্ঠান : দুর্গাপূজার প্রতিটি দিনের আচার-অনুষ্ঠান বেশ বিস্তৃত এবং তা ধর্মীয় অনুশাসনের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়।

ষষ্ঠী: পূজার প্রথম দিন, দেবীর মৃৎ প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা বা বোধন করা হয়। এই দিনটিকে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ খুবই গুরুত্বের সাথে পালন করে।

সপ্তমী: সপ্তমীর সকালে একটি নৌকো করে নবপত্রিকা (দেবীর প্রতীকস্বরূপ নয়টি গাছের পাতা) নদীতে নিয়ে গিয়ে স্নান করানো হয় এবং মণ্ডপে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই নবপত্রিকা দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে পূজিত হন। সপ্তমী থেকেই মূল পূজার আচার-অনুষ্ঠান শুরু হয়।

অষ্টমী: অষ্টমীকে দুর্গাপূজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। অষ্টমীর দিন কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়, যেখানে একটি কুমারী কন্যাকে দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে পূজিত করা হয়। অষ্টমীর সন্ধ্যায় সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়, যা দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের মহিমান্বিত মুহূর্তের স্মারক।

নবমী: নবমীর দিন মহা আরতির মাধ্যমে দেবীর আরাধনা করা হয়। এই দিন দেবীর বিজয় উদযাপন করা হয়।

দশমী: বিজয়া দশমী হল দুর্গাপূজার সমাপ্তি। এই দিন দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে তাকে আবার কৈলাসে ফিরে যাওয়ার প্রার্থনা করা হয়। বিসর্জন শেষে, সবার মধ্যে বিজয়া গলা মিলন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়।

বাংলাদেশের দুর্গাপূজা উদযাপন : বাংলাদেশে দুর্গাপূজা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালিত হয়, বিশেষ করে হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোতে। ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির, চট্টগ্রামের আনন্দময়ী কালীবাড়ি, এবং কুমিল্লার শ্রীশ্রী চাঁদিমায় দুর্গাপূজা অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়। চট্টগ্রামের অনেক স্থানীয় এলাকায় দুর্গাপূজা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাঝে বিশেষ উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।

প্রতিটি পূজা মণ্ডপে বিস্তৃত আলোকসজ্জা, নানান ধরনের প্রতিমা শিল্প, এবং সংস্কৃতিমূলক কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়। পূজামণ্ডপগুলোতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেমন নাটক, সংগীতানুষ্ঠান, এবং নাচ অনুষ্ঠিত হয়।

মণ্ডপসজ্জা ও প্রতিমা : প্রতিমা নির্মাণ দুর্গাপূজার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিমা নির্মাণের সময় সুনিপুণ দক্ষতা এবং শিল্পসৌন্দর্যের নিদর্শন দেখা যায়। বাংলাদেশে কুমারটুলির মতো স্থানগুলোতে বিশেষভাবে প্রতিমা তৈরি করা হয়, যেখানে কারিগররা মাটি, খড়, রং এবং বস্ত্রের মাধ্যমে প্রতিমাগুলোকে জীবন্ত করে তোলেন। প্রতিমার সঙ্গে দেবী দুর্গার চার সন্তান—গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী এবং সরস্বতী—কেও সাজানো হয়।

আরও পড়ুন  বাহারছড়া গ্রামের অন্যতম সড়ক আশরাফ আলী সড়কের বেহাল দশা

ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক বন্ধন : বাংলাদেশের দুর্গাপূজা কেবলমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে। পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের উপস্থিতি খুবই স্বাভাবিক। এটি বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ।

প্রতি বছর পূজার সময় স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।