অনলাইন ডেক্স ▪️
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মানবসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা মিলে সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলেন। সমাজের মানুষদের বিভিন্ন সমস্যায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাদের গড়া এসব সংগঠন। তেমনই একটি সংগঠন সারা আনোয়ারা।
এ সংগঠনের কাজের মধ্যে রয়েছে- অসহায়দের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, রক্তদান কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ ও শীতবস্ত্র বিতরণ। বাঁশখালী এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা হচ্ছিল সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল মালেক চৌধুরীর। তিনি শোনালেন তাদের এগিয়ে যাওয়ার গল্প।
সময়টি ছিল ২০১৬ সাল। একদল তরুণ নিয়ে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হতে গঠন করা হয় সারা আনোয়ারা নামের সামাজিক সংগঠন। শুরু হলো সংগঠনের যাত্রা।
বর্তমানে সংগঠনটিতে কাজ করেন ১৫০ জনের মত স্বেচ্ছাসেবক। তার মধ্যে কেউ চাকরিজীবী কেউ ব্যবসায়ী বেশির ভাগই তরুণ ছাত্র । তাদের দেওয়া চাঁদায় চলে সব কার্যক্রম।
এইবার তাদের এক নতুন উদ্যােগ যিনি চাচী হয়েও নিজের ছেলের থেকেও বেশি গুরুত্ব দেন মা হারা ১৪ বছরের শিশু সাইফুলকে। যাকে প্রায় ছয় বছর ধরে প্রতিমাসে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ছোট্ট সাইফুলকে। এই ছয় বছর ধরে তারই চাচী হাসনা খানম টুম্পা মা হীন ছেলেকে আন্তরিকতার সঙ্গে নিজের হাতে লালন পালন করে অভাবের মধ্যেও প্রতিমাসে মেডিকেলে আনা নেওয়া সহ শিশু সাইফুলকে বাঁচাতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এরই মধ্যে বিগত তিন বছর আগে সামাজিক সংগঠন সারা আনোয়ারার নজরে আসে সাইফুলের বিষয়টি তারপর থেকেই প্রতি মাসে রক্ত জোগাড় করা ও প্রতিমাসের মেডিকেল খরচ তারাই চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজ মা হারা শিশু সাইফুলকে বিগত ছয় বছর ধরে যে মায়ের মত নিঃস্বার্থ স্নেহময় ও ভালোবাসা দেখিয়ে বড় হওয়ার স্বপ্ন জাগিয়েছে সেই চাচী নামের মা হাসানা খানম টুম্মাকে সম্মানিত করে সম্মাননা স্বারক দিয়েছেন সামাজিক সংগঠন সারা আনোয়ারা।
একই সাথে সাইফুলের চাচীকে একটি গরুর বাছুর উপহার দিয়ে ছোট একটি কর্মসংস্থান তৈরি করে দিয়েছেন এই সংগঠনটি।
এ বিষয়ে আবদুল মালেক চৌধুরী বলেন, যারা সত্যিকারের সুবিধাবঞ্চিত, তাদেরই আমরা সহায়তা করেছি।’
মালেকর ভাষ্যমতে, ‘করোনাকালে অর্থের অভাবে খুব বেশি কাজ করতে পারেনি সংগঠনটি। তারপরও ২৫০টি পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। সদস্যদের চাঁদা ৫০ টাকা। তবে আমরা কোনো ইভেন্ট করতে গেলে সামর্থ অনুযায়ী নির্ধারিত চাঁদার বাইরেও টাকা দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করি। করোনাকালে আমরা অসহায়দের সাধ্যমতো সহায়তা করেছি।’
এ ছাড়াও এ সংগঠনের মাধ্যমে বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা, নতুন উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া হয়। এ সম্পর্কে আবদুল মালেক চৌধুরী বলেন, ‘অনেকেই আছেন গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাকরি পান না। তাদের আমরা চাকরি পেতে সাধ্যমতো সহায়তা করি। তাছাড়াও সাইফুলের মত অনেক অসহায় আছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানোর সাধ্যমতো চেষ্টা করি।
মুমূর্ষু রোগীদের রক্তের ব্যবস্থা করে দিতেও সরব ভূমিকা পালন করেছে সংগঠনটি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আবদুল মালেক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে চাই। বৃদ্ধাশ্রম, পাঠাগার, দাতব্য চিকিৎসালয়, অনাথ স্কুল, প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান নিয়ে পরিকল্পনা আছে।’