Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সিআরবিকে কেন বাঁচাতে হবে?

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা বসতি স্থাপনের জন্য গেল কয়েক বছরে ছয় মাসে উখিয়া ও টেকনাফে উজাড় হয়েছে পাঁচ হাজার একর বনভূমি। কক্সবাজারেরই আরেক উপজেলা মহেশখালীর সংরক্ষিত বনের ২০০ একর জায়গা গত ২০১৮ সালের মে মাসে অধিগ্রহণ করা হয়েছে অপরিশোধিত তেলের ডিপো ও পাইপলাইন স্থাপনের জন্য। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বনের জায়গায় গড়ে উঠছে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ অবস্থায় দেশে প্রাকৃতিক বনভূমি কমবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন বাংলাদেশের প্রয়োজনের কত শতাংশ বনভূমি আছে? সাধরণত যেকোনো দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য ন্যূনতম শতকরা ২৫ শতাংশ বনভূমির প্রয়োজন রয়েছে। এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ প্রায় ২৩ লাখ হেক্টর, যা আমাদের দেশের আয়তন এর প্রায় শতকরা ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ব্যক্তিমালিকানাধীন সহ সব মিলিয়ে এর পরিমান ২০ শতাংশের বেশি হবেনা। সময়ের প্রয়োজনে শিল্পায়ন, গৃহায়ন, নগরায়নের যে চাপ তার সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আশংকাজনক ভাবে কমছে বনভূমি ও গাছপালার হার। তদুপরি জনসাধারণের মাঝে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আশানুরূপ সচেতনতা তৈরী হয়নি। একটি গাছ কাটলে তার বদলে আরো দুইটি গাছ রোপনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে পারছি না আমরা। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে মরণব্যাধি এইডস কে যেমন আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে অধ্যায় ভুক্ত করা হয়েছে সময় হয়েছে একই ভাবে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পাঠ্যবইয়ে বিশেষ নিবন্ধ যুক্ত করার।
▪️কেন গাছ নিয়ে এত কথা? বাস অযোগ্য শহরের তালিকায় বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। ঢাকাকে ধরার প্রতিযোগিতায় জোর কদমে এগিয়ে চলেছে বানিজ্য নগরী চট্টগ্রাম। জলাবদ্ধতা, মশার যন্ত্রনা সহ কত সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এ নগর। ইট-পাথরের শহরে সবুজের আচ্ছাদন দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। একটু সতেজ, নির্মল বায়ু সেবনের জায়গা নগরে বেশি নেই। যে কয়টি সবেধন নীলমনির মত ঠিকে আছে তার একটি সিআরবি। এটি বাংলাদেশ রেলওেয়ের সম্পদ৷ এবং বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় এ সিআরবি। যান্ত্রিক বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ফুসফুস বলা হয় এই চত্বরকে। সবুজে ঘেরা সারি সারি সুবিশাল বৃক্ষ। কোনো গাছের বয়স একশ বছর। কোনোটির বয়স দুশোর বেশি। বয়সের ভারে এই বৃক্ষগুলো ন্যুব্জ হয়নি, বরং শতবছরেও গাছগুলো ধরে রেখেছে তাদের সবুজের সজীবতা। হাসপাতালে নির্মানের প্রয়োজন আছে তবে তা কোন ভাবে শতবছরের ঐতিহ্য কে নষ্ট করে নয়। প্রাকৃতিক অক্সিজেন ভান্ডার নষ্ট ধ্বংস করে নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ভাষাগুলো দেখে আশান্বিত হচ্ছি।  ভার্চুয়াল ব্যানারে ব্যানারে ছেঁয়ে গেছে ফেসবুক, টুইটারের নিউজফিড। ফেসবুকে জনপ্রিয় সংগঠক, আমরা ক’জন মুজিব সেনার চট্টগ্রাম জেলার সাবেক প্রচার সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, “সিআরবিতে মানুষ অক্সিজেনের জন্য যায়,  প্রাকৃতিক  এই পার্কে মানুষ বিকালে বেড়াতে যায়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বড় একটি মঞ্চ এই সিআরবি। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান হয় এখানে। যেখানে বিভিন্ন দেশ পয়সা খরচ করে এমন একটি পরিবেশ তৈরী করে সেখানে আমরা তা ধ্বংসের জন্য উঠেপড়ে লেগেছি। কার স্বার্থে এই সুন্দর জায়গা ধ্বংস করে হাসপাতাল বানানো হচ্ছে?  যদি হত সরকারী তাহলে একটা কথা ছিল। এমন পরিবেশ ধ্বংস করে বেসরকারী হাসপাতাল কেন? চট্টলাবাসী আজীবন সংগ্রামী। বৃটিশ থেকে শুরু করে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে প্রথম জেগে উঠেছিল এই চট্টলা।  তাই এই চট্টগ্রামের নাম বীর চট্টলা। চট্টলাবাসি আবার জেগে উঠুন। নিজের ফুসফুস রক্ষায় আবার রাস্তায় নামুন। আমাদের ফুসসুস ধ্বংস করে আমরা হাসপাতাল চাইনা। প্রাকৃতিক অক্সিজেনে বাঁচতে  চাই, কৃত্রিম অক্সিজেনের দরকার নাই। না নিতে পারি যদি শ্বাস, হাসপাতাল সেতো নাভিশ্বাস।
আশাবাদী হওয়ার আরো বড় উপলক্ষ নিয়ে এসেছেন চট্টল শার্দুল মহিউদ্দিন চৌধুরীর তনয় মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মহোদয়ের গতকালের ফেসবুক স্ট্যাটাস “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যা কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশের প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই। সুতরাং বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। আস্থা রাখুন। 
চট্টগ্রামে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের সদরদপ্তর সিআরবির একটি জায়গায় সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে হাসপাতাল নির্মাণ এবং পরিবেশ ও বৃক্ষ সংরক্ষণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে শীঘ্রই আলোচনা করে এর একটি সমাধান করা হবে। “
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দৈনিক আজাদী এতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে বিষয়টি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সি আরবি রক্ষা পাবে। বেঁচে যাবে নগরীর ফুসফুস। 

লেখক,
▪️স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী,
▪️জেলা অ্যাম্বাসেডর, ICT4E এটুআই, শিক্ষক বাতায়ন,
▪️সম্পাদক, বাঁশখালী এক্সপ্রেস

আরও পড়ুন  বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের ইফতারী বিতরণ