বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির প্রস্তাবক, ৬৯ এর গণআন্দোলনের কিংবদন্তি, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক (৭১) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে… রাজেউন)। বুধবার (১৫ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মরহুমের নামাজে জানাযা আজ (বৃহস্পতিবার) বাদে মাগরিব গুলশান-২ আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আনোয়ারার ভিংরোল হাইলধর চৌধুরী বাড়ির সন্তান।
রেজাউল হক শুধু ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির উদ্ভাবকই ছিলেন না, বঙ্গবন্ধুর জীবনীও প্রথম রচনা করেন ১৯৭০ সালে।
১৯৫০ সালের ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানার ভিংরোল গ্রামের মিয়া বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন রেজাউল হক মুশতাক। তাঁর পিতা মরহুম নুরুল হক চৌধুরী এবং মাতা মরহুমা মুসলিম আরা। গ্রামের বাড়ি আনোয়ারা হলেও তিনি চট্টগ্রাম শহরের পাথরঘাটায় ছোটবেলা থেকে জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় পার করেছেন। চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে অধ্যয়নকালে ১৯৬৫ সালে তিনি ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্কুলের ছাত্র অবস্থায় তিনি ১৯৬৬-৬৭ সালে নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির কনিষ্ঠতম সদস্য।
১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান যখন আগরতলা মামলার প্রহসনমূলক বিচারে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় শোনার জন্য অপেক্ষায়, সেই সময়ে ঢাকা কলেজের এক ছাত্র, তাঁর পুত্র শেখ কামালের সহপাঠী রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক বঙ্গশার্দুল শেখ মুজিবের জন্য নতুন এক উপাধি উদ্ভাবন করলেন। সেই উপাধি ‘বঙ্গবন্ধু’। এর এক বছর পর শেখ মুজিবুর রহমান যখন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাইরে এলেন— সেই পরিস্থিতিতে ১৯৬৯-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তাঁর সম্মানে আয়োজিত গণসংবর্ধনায় ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমদ শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করলেন। সেদিন থেকে শেখ মুজিব হয়ে গেলেন ‘বঙ্গবন্ধু’।
মুসলিম হাইস্কুল থেকে ১৯৬৭ সালে এসএসসি পাস করার পর তিনি ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। এই সময় তৎকালীন রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যমণি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম পুত্র শেখ কামালের সাথে সহপাঠী হিসেবে তাঁর পরিচয় ঢাকা কলেজেই। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি নির্বাচিত হন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-দপ্তর সম্পাদক।
ছাত্রজীবন শেষে রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক ব্যবসা ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত হন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কেএন হারবার কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে শিপিং, ইনডেনটিং, আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন। ছিলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সদস্যও।
রেজাউল হক মুশতাক ঢাকায় চট্টগ্রামবাসীদের সংগঠন ‘চট্টগ্রাম সমিতি’র কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯০-৯১, ১৯৯৬-৯৭, ১৯৯৮-৯৯ সালে ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির তিন তিনবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ‘ঢাকার বুকে একখণ্ড চট্টগ্রাম’ তথা বহুতল বিশিষ্ট চট্টগ্রাম ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২০১২-২০১৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকা-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
মুশতাক ভাই আপনি দুদিন পর পর খবর নিতেন আমার। আপনার প্রয়াণে আমরা সত্যিকারার্থে একজন অভিভাবক হারালাম। আমরা ভাষাহীন হয়ে পড়লাম পড়লাম। ঢাকায় গেলে হাতের মুঠোয় টাকা তুলে দেওয়া আর দেখা করার কথা বলার মত কেউ রইলোনা।