সম্পাদকীয়,
শৈশব আমাদের জীবনের আলোকোজ্জ্বল অধ্যায়, সেই অধ্যায়ের বিশাল অংশজুড়ে আমাদের স্কুল জীবন। কতশত স্মৃতিকাতরতা সেখানে। বাঁশখালী এক্সপ্রেস -বাঁশখালীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে (হাই স্কুল) শিকড় ১ শিরোনামে স্মৃতিচারণ মূলক লেখনীর আয়োজন করেছিল। উদ্দেশ্য আমাদের ভাই-বোনদের সুকুমারবৃত্তির চর্চার দ্বার উন্মুক্ত রাখা। তাদের অভূতপূর্ব সাড়া আমাদের প্রথম আয়োজনকে সাফল্যমণ্ডিত করেছে, করেছে আশান্বিত। এরপর শুরু হয়েছে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিকড় ২ এর আয়োজন যা লিংকে ক্লিক করলে পাওয়া যাবে। এবং সেই ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট বক্সে স্মৃতিচারণ পোস্ট করতে হবে। বাঁশখালীর বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও অসংখ্য লেখা এসেছে তার মধ্যে স্থান ও লাভ করেছে। বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে দেখছি আমাদের বাঁশখালী নামটা সবার হৃদয়ে স্থান লাভ করুক, তারাও আমাদের হৃদয়ে স্থান করে নিক এমনটাই প্রত্যাশা। লেখনীর মানদন্ড ছিল শুদ্ধ বানান চর্চা, প্রাঞ্জল ভাষা এবং বাস্তবিক ঘটনার সরল উপস্থাপনা। বিচারকদের দৃষ্টিতে আমরা প্রথম ১০ টি লেখাকে ই-পেপারে প্রকাশ করার সিদ্বান্ত এবং প্রথম তিনজনকে সনদ ও বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত করার সিদ্বান্ত নিয়েছি। বেশ কিছু মানদন্ডের বিচারে উত্তীর্ণ লেখা এই সংকলনে যুক্ত করা হয়েছে। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বাঁশখালী এক্সপ্রেস পরিবারের সকল কলাকুশলীদের, আমাদের প্রিয় শুভানুধ্যায়ীদের যারা আমাদের অনুপ্রেরণার বড় অংশজুড়েই। বাঁশখালী এক্সপ্রেস আপনাদের প্ল্যাটফর্ম, লেখনী অব্যাহত থাকুক এমন প্রত্যাশা করছি।
◾প্রথম স্থান:
ছাত্রজীবন মধুর জীবন। আমার মতে এর মধ্যে স্কুলজীবনই শ্রেষ্ঠ। রাতের আকাশের লক্ষ-কোটি তারার মাঝে কিছু তারা থাকে, যা সব সময় অতি উজ্জ্বলভাবে দেখা যায়। মানুষের স্মৃতিগুলোর মাঝে স্কুলজীবনের স্মৃতিগুলোও তাই। ১৯৯৬ সালে যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই তখন স্কুলের পাশে ছিল সাঙ্গু নদী। নদীর পাড়ে বিকেল বেলার পরিবেশটা ছিল খুবই মনোমুগ্ধকর। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে আমাদের গণিত ক্লাস নিতেন ভবানী প্রসাদ মিত্র স্যার (পরলোকগমন করেন ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১)।
স্যারের ক্লাস খুব মনোযোগ দিয়ে করতাম। স্যার বাংলা ২য় পত্র খুব ভালো করে পড়াতেন। স্যারের বেত দিয়ে মারার ধরনটা ছিল অদ্ভুত রকমের।
গণিত বিষয় আমার খুব ভালো লাগতো, পক্ষান্তরে ইংরেজি ছিল খুবই বিরক্তের ‘বিষয়’। ইংরেজি বিষয়ের প্রতি বিরক্ত একটু হলেও কমে ৮ম শ্রেণিতে। ৮ম শ্রেণিতে ইংরেজি ক্লাস নিতেন চপল কান্তি দেওয়ান স্যার (পরলোকগমন করেন ৬ ডিসেম্বর ২০০৯) তাঁর ক্লাস খুব একটা ফাঁকি দিইনি। আমাদের সময় ইংরেজি বিষয়ে খুব ভালো ও দক্ষ আরো দু’জন শিক্ষক ছিলেন, তাঁরা হলেন শ্রদ্ধেয় মোহাম্মদ সালেহ (সাবেক ডিজিএম, বাংলাদেশ ব্যাংক, মৃত্যু: ১৭ জুন ২০১০), সাবেক প্রধান শিক্ষক সুধীন্দ্র দেওয়ান স্যার। “বাংলা বিষয় কিভাবে পড়তে হয় তা শিখেছি শ্রদ্ধেয় জিন্নাতুল ফেরদৌস ম্যাডাম থেকে। আমার দেখা ও জানার মধ্যে সেরা বাংলা শিক্ষক তিনি। সবাই ম্যাডাম এর বাড়ির কাজ আগে শিখে আসতো। ম্যাডাম এখন অবসরে, তাঁর অভাব
কোনভাবেই মেটানো সম্ভব নয়। আমি তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। নবম শ্রেণিতে একটি মজার ঘটনা মনে পড়ে। আমাদের কৃষি শিক্ষা বিষয়ে ব্যবহারিক নম্বর ছিল ৪০। ক্লাস নিতেন শ্রদ্ধেয় মতিলাল দে (বর্তমানে প্রধান শিক্ষক, কামাল উদ্দিন চৌধুরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) স্যার। স্কুল মাঠে তখন প্রচুর ইট ছিল। স্যারের শর্ত ছিলো সবগুলো ইট মাঠ থেকে তুলে ফেললে সবাই ৪০ নম্বর করে পাবে। সবাই মাঠ পরিষ্কার অভিযানে নেমে পড়লাম। ইট তোলার এক পর্যায়ে একটা সাপ দেখতে পেলাম। আমার এক বন্ধু সাপকে মারতে গিয়ে ইট মারল আমার হাতে, সঙ্গে সঙ্গে আঙ্গুল ফেটে রক্ত বের হলো। তাৎক্ষণিক চিকিৎসার পাশাপাশি পেয়ে গেলাম স্যারের ঘোষিত ৪০ নম্বর। আমার তর্জুনি আঙ্গুলে দাগটা এখনো রয়ে গেছে।
১০ম শ্রেণিতে আমাদের গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞান ক্লাস নিতেন শ্রদ্ধেয় হামিদুল আলম চৌধুরী (বর্তমানে প্রধান শিক্ষক, তৈলারদ্বীপ বারখাইন এশাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়)। স্যারের গণিত ক্লাস খুবই উপভোগ্য ছিল। রসায়ন ও জীববিজ্ঞান ক্লাস নিতেন শ্রদ্ধেয় স্বপন কান্তি সুশীল। স্যার যে কোন কঠিন বিষয় খুব সহজেই বুঝাতে পারতেন। তাঁর বুঝানোর ক্ষমতা অসাধারণ।
মৌলানা মোহাম্মদ ইব্রাহীম (মৃত্যু: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮) ইসলাম শিক্ষা বিষয় খুব যত্ন সহকারে পড়াতেন। ভালোমত লিখতে পারলে হুজুর ৭০-৮০% নম্বর দিত। আমাদের সময়ে স্যারেরা ৫০-৭০% এর বেশি নম্বর দিত না।
শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মরহুম মোহাম্মদ সালেহ, সুধীন্দ্র দেওয়ান ও জিন্নাতুল ফেরদৌস- তিনজন ছিলেন একাধারে বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং শিক্ষক। স্কুলের প্রতি তাদের অবদান অবিস্মরণীয়। হাজিগাঁও বরুমচড়া উচ্চ বিদ্যালয় বাঁশখালী তথা চট্টগ্রামের একটি অন্যতম সফল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক- এই কামনা করি।
স্কুলের প্রথম দিন আর শেষ দিনটা একই ছিল।
চোখে জল ফেলেছিলাম দুই দিনেই।
কিন্তু কারণটা ছিল একবারে আলাদা।
একটা স্কুলে যাবার আনন্দ, আরেকটি বিদায়ের ব্যথা।
◾দ্বিতীয় স্থান
প্রাইমারি স্কুলের ১ম দিন।
সেই দিনটা অন্য দিনের মতো শুরু হয়নি। ভোর না হতেই মা ঘুম থেকে উঠিয়ে সাজিয়ে- গুছিয়ে দিল। ভাবছিলাম কোথাও বেড়াতে যাচ্ছি। কাঁধে ঝুলিয়ে দিল সুন্দর একটি ব্যাগ। মাকে জিজ্ঞাসা করছিলাম কোথায় যাচ্ছি মা? মা বললো ‘স্কুলে’ আমি বললাম ‘স্কুল’! জিজ্ঞাসা করলাম স্কুল মানে কি? মা বললো কখগ, ABC, এবং ১,২,৩ শিখানোর সুন্দর একটি ঘর। স্যারের সাথে পরিচয় করিয়ে ভর্তি করলেন। চলতে থাকে স্কুল জীবন। ১ম থেকে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষায় সব প্রশ্ন কমন পায়নি কখনো কারণ সিলেবাস ছাড়া সব সময় বইয়ের প্রথমের অধ্যায় গুলো পড়তাম। যার ফলে ৪র্থ শ্রেণীতে রোল ৩ থেকে ১৪ চলে গিয়েছিল। মজার বিষয় হল পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় ছাত্র-ছাত্রীদের অতি শব্দের কারণে রোল শুনতে না পেয়ে ৩০ পর্যন্ত বলে বাকী রেজাল্ট পরে প্রকাশ করবে বলছিল। ধরে নিলাম ফেল করলাম। মা বাবার বকাঝকা থেকে বাঁচার জন্য বলেছিলাম আগের রোলে পাশ করেছি। এই স্মৃতি ভুলার মতো নয়।
হাই স্কুলের ১ম দিন :
প্রাথমিক স্তরের ছোটদের বিদ্যালয় থেকে বড় দাদাদের স্কুলে পড়তে চলার বিষয়টা একটা অজানা ভয় কাজ করত। নতুন জায়গা, নতুন বন্ধ-বান্ধব, নতুন শিক্ষকেরা কেমন হবেন; আমি বদলে যাওয়া নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারবো কিনা সে বিষয়েও আমি আতঙ্ক ছিলাম। আরও দুঃখের বিষয় বাড়ির সব চাচাতো ভাই বোন ১ম দিনেই আমার আগে চলে গেছে। পরে আমি যাওয়ার পথে জাতীয় সঙ্গীত শুরু হয়ে গেছে। বড় দাদাদের কাছে শুনছিলাম জাতীয় সঙ্গীতে উপস্থিত না থাকলে স্যার মার দেয়। বাড়ি আর স্কুলের মাঝখানে জলকদর খাল। ভাগ্য ভালো জলকদর খালে পানি কম ছিল। কি আর করব! জুতা খুলে প্যান্ট তুলে কোন রকম খাল পার হলাম। ঐ দিন থেকে শুরু হলো হাই স্কুল জীবন। পেলাম পড়াশোনার পাশাপাশি স্যারের ভালোবাসা, বন্ধুদের সাথে কাটানো স্মৃতি।
এস এস সি রেজিস্ট্রেশন
মা-বাবা নাম রাখলেন নুরুল আকতার। ভুলে পি.এস.সি আকতার হোসেন। এস এস সি রেজিস্ট্রেশনে স্যার লিখলেন আকতার হোসাইন। মন ভরা দুঃখ নিয়ে স্যারকে বললাম। স্যার আমার নাম ভুল এসেছে। স্যার বললো আকতার হোসেন থেকে আকতার হোসাইন নামটি সুন্দর বেশি তাই আমি লিখলাম। এখনো পি এস সি তবে আকতার হোসেন এবং এস এস সি তে আকতার হোসাইন। এই স্মৃতি ভুলার মতো নয়।এভাবে কেটে গেল আরও পাঁচ বছর।
স্কুল জীবন বিদায়ের দিন
পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে ক্ষণস্থায়ী মানবজীবনের বাঁকে বাঁকে বহু স্মৃতি জমে থাকে। তেমনি আমার জীবনে বিদ্যালয়ের শেষ দিনের স্মৃতি এক মধুময় অনুভব। তবে স্মৃতির সাথে জড়িয়ে রয়েছে স্যার, বন্ধুবান্ধব এবং স্কুল ছেড়ে আসার বিষাদময় যন্ত্রণা। আনন্দের বিষয় হল ২০১২ সালে এস এস সি পরীক্ষায় ‘বাহারছড়া রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয় বাঁশখালীর প্রথম হয়েছিল। এই স্মৃতি ভুলার মতো নয়। আজীবন জড়িয়ে থাকবে এই স্মৃতি।
◾তৃতীয় স্থান
বৈলছড়ি নজমুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম পূর্ব চেচুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় পিতৃতুল্য শিক্ষক মুনীর স্যারের সাথে। আমার পরনে ছিলো ফতুয়া, জিন্স আর পায়ে এক জোড়া বাটা জুতা। চুলের কাট দেখে সবাই ছেলে ই ভাবতো। তাহের ভাইয়ের বাবা তখন দপ্তরি ছিলেন। ছেলেদের ভর্তির দায়িত্বে ছিলেন মুজিব স্যার। তিনি মুজিব স্যারের কাছে নিয়ে গেলেন ভর্তির জন্য। এইদিকে স্যার ও আমাকে ছেলেই ভাবলেন, নামের শেষে ‘হাবিব’ ছিলো তাই। যখন স্যার ছাত্র অপশন টিতে ঠিক চিহ্ন দিবেন তখন আমি বলে উঠলাম ‘স্যার!ছাত্রী হবে।’ স্যার আমার দিকে তাকালেন। মুনীর স্যার হেসে বললেন, ‘সে আমার মেয়ে হয়।’ মুজিব স্যার তো হাসতে হাসতে শেষ। ইব্রাহিম হুজুরের কাছে পাঠালেন ভর্তির ফরম পূরণের জন্য। প্রথমদিন আমাদের ক্লাসে এসেছিলেন শাহানা ম্যাম। কালীপুর ফকির পাড়া মাদ্রাসার অপোজিটে একটা দোতলা বিল্ডিং আছে। ওখানেই থাকেন। হাস্যোজ্জ্বল একটি মুখ। আমার খুব প্রিয় একজন শিক্ষিকা ছিলেন। আমাদের ইংরেজি প্রথম ক্লাস নিতেন। ওনার ‘সাবিনা’ উচ্চারণটা এতো সুন্দর ছিলো!! ও হ্যাঁ, সাবিনার একটা প্যাসেজ ছিলো ক্লাস সিক্সে। ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিলো আমাদের বারে। আজিম উদ্দৌল্লাহ স্যার এসেছিলেন ক্লাসে ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট ঘোষণা করার জন্য। ভাবিনি ফার্স্ট হবো এবং স্কুল জীবনটা ফার্স্ট গার্ল হয়ে ই শেষ করবো। তৌহিদ স্যার খুব শান্ত স্বভাবের একজন মানুষ ছিলেন। সারাবছর সর্দি লেগে থাকতো বলে পকেটে সবসময় রুমাল থাকরো তাঁর। আমাদের মধ্যে যেদিন ই কেউ স্যারের বকা না মার খেয়ে স্যারের সর্দিরোগ নিয়ে মজা করতাম এর কিছুদিন পরেই দেখতাম নিজেরাই সর্দি রোগে আক্রান্ত। খালেক স্যার ছিলেন শান্ত স্বভাবের কড়া একজন শিক্ষক। সবসময় হাতে বেত থাকতো। গণিত ক্লাস নিতেন আমাদের। বেশি মারতেন না। কিন্তু যেটা মারতেন খবর হয়ে যেতো। ইব্রাহিম হুজুরের ধর্ম ঘণ্টা খুব মজার ছিলো। এতো সুন্দর সুন্দর ইসলামের সব কাহিনী গুলো বলতেন! আর আহমেদ হোসেন হুজুর তো সবসময় হেসে হেসে কথা বলতেন। মনোরঞ্জন স্যার চারু ও কারুকলার ক্লাস নিতেন। প্রবাস স্যার একবার দুষ্টমি করতে দেখে বলেছিলেন ‘প্রাইভেটে তো ব্যোম মারলেও তোমার মুখে কথা বের হয়না৷ আর স্কুলটাকে মাথায় তুলে রাখো।’ আজিম উদ্দৌল্লাহ স্যারের বিদেশ ঘুরার গল্পগুলো শুনলে ইচ্ছে করতো তখন দু’টো পাখা লাগিয়ে বিদেশ চলে যাই। শান্তনু স্যার সবার খুব প্রিয় ছিলেন। যখন আমরা অষ্টম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা দিচ্ছি তখন তিনি বিদায় নেন। হল পরিদর্শন করতেন প্রায় ই। ক্লাস সিক্স টু এইট আমার প্রত্যেক পরীক্ষায় আমার বেঞ্চের সামনে এসে জিজ্ঞেস করতেন, ‘হাবিব! তোমার পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?? হাইয়েস্ট মার্ক পাবে তো? সব পারছো তো?’ রেজিয়া ম্যামের কথাগুলো এতো সুন্দর লাগতো। ক্লাস টেনে যখন আমাদের লাস্ট বাংলা ক্লাস নিচ্ছিলেন তখন বলেছিলেন, ‘সানজিদা! তুমি চলে যাবে ভাবলেই খারাপ লাগে। আমার মনে হয় এইতো সেদিন তুমি এসেছিলে। স্কুল মাঠে দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে আর আমরা তোমার ছেলেমানুষি দেখে হাসতাম।’ আমার লেখার একজন ফ্যান ছিলেন- উত্তম স্যার। সবসময় খুব আদর করতেন। ওনাকে সবাই খুব পছন্দ করতাম। কারণ প্যারাগ্রাফ বা লেটার বা কম্পোজিশন একটা বা দু’টো পুরো ক্লাসকেই শিখাতেন একই নিয়মে আর বলতেন ‘এইটা আসলেও লিখবে, না আসলেও লিখবে।’ বাবুল স্যার তো ক্লাস নাইনে আমাদের ক্লাস টিচার ছিলেন। এতো দারুণ পড়াতেন তিনি! ওনার উচ্চারণ সবসময় অসাধারণ ছিলো। আমাকে শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটির আবৃত্তি তিনিই শিখিয়েছেন একটা প্রতিযোগিতার জন্য। এই কবিতাটি উচ্চারণের সময় স্বর একবার উঁচুতে নিয়ে যেতো হতো, একবার নিচুতে। আর আমি হাসতে থাকতাম। স্যার বিন্দুমাত্র বিরক্ত হতেন না। মেরী ম্যাম ছিলেন আমার মায়ের মতো। সবসময় সাধারণ ভাবেই চলতেন। ওনি আমাকে খুব বিশ্বাস করতেন। শাম্পা ম্যাম ছিলেন খুব মিষ্টি স্বভাবের। মুজিব স্যারের ক্লাসে সবাই খুব মনোযোগী থাকতাম। ইংরেজি আর অংক এতো ভালো করে বুঝাতেন তিনি! অনিল স্যার আমাকে মেয়ের মতো আদর করতেন আর বলতেন ‘আমার সাথে চলে যাবি আমাদের বাড়িতে? তোকে মেয়ের মতো রাখবো আমি।’ আমি বলতাম, ‘স্যার আপনি আমাদের বাড়িতে চলে আসেন।’ গোলাম রহমান স্যারকে খুব ভয় পেতাম। সবসময় খুব কড়া ছিলেন। এখন বুঝতে পারি কড়া ছিলেন বলেই তাঁর সময়কালে স্কুলের পরিবেশ এতো সুন্দর ছিলো!!! ছানবী স্যারের কেমিস্ট্রি ক্লাস, নির্মলেন্দু স্যার ‘এই তোমরা হিবিজিবি করবানা’ বলা সব মিস করি। তার চেয়ে বেশি মিস করি স্কুল লাইফের বান্ধবীগুলোকে। ১৪০/১৮০ জন বান্ধবীর মধ্যে ৪/৫ ই জন ই অবিবাহিত আছে। কয়েক মাস হলো অনেকজনের ফেসবুক আইডি খুঁজে বের করে একটা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলেছি। স্কুল লাইফে সবাই মিলে কত মজা করতাম!! সবাই মিলে একসাথে স্কুল মিস দিতাম, পালাতাম। কখনো বা দল বেঁধে স্কুল পালিয়ে বান্ধবীদের বাসায় যেয়ে গল্প করতাম। স্যার ক্লাস থেকে বের হলেই বসে যেতাম গুটি নিয়ে। একজন আরেকজনকে টিজ করতাম বিভিন্ন নামে। সব মিস করি। আমাদের বিদায় অনুষ্ঠানের দিন আমরা কেউ কান্না করিনি। আমাদের জন্য স্যাররা কেঁদেছিলেন। ভেবেছিলাম সবাই আশেপাশের এলাকার। দেখা তো হবেই। কান্নার কি আছে!! কিন্তু পরে ধীরে ধীরে বুঝলাম আগের মতো দেখা হওয়া আর সম্ভব নাহ…ভাবলেই কান্না পেতো..কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে স্মৃতিগুলো!!
◾চতুর্থ স্থান
পুরোনো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়
ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়” আসলেই শৈশব ও কৈশরের সেই প্রথম আবেগ, ভালবাসা সে কি কখনো ভোলা যায়। ধন্যবাদ জানাই বাঁশখালী এক্সপ্রেসের এডমিন ও অন্যান্য কলাকৌশলীদের এত সুন্দর একটি কন্টেস্টের আয়োজন করার জন্য। যার মাধ্যমে একটু হলেও আমরা আমাদের প্রিয় বিদ্যাপীঠকে নিয়ে আমাদের আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ করতে পারবো এবং জানাতে পারবো সবার কাছে। প্রিয় বিদ্যাপীঠ যেন আমার কাছে জীবনান্দের সেই নাটরের বনলতা সেন, যার কাঁজল কাল চোখের দিকে তাকিয়ে যেমন সারা জীবন পার করে দেওয়া যাবে তেমনি প্রিয় বিদ্যাপীঠের আবেগ জড়িত স্মৃতিগুলো নিয়ে পার করে দিতে পারবো আমার বাকি জীবন। প্রিয় বিদ্যাপীঠ আমার কাছে লালনের সেই আরশি নগর, যার দিকে তাকালে আমি আমার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। আমার শৈশব ও কৈশরের প্রতিটি মুহূর্ত যেন চোখের সামনে ভেসে উঠে। প্রিয় বিদ্যাপীঠ আমার কাছে শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি, যার সৌন্দর্য আমার চোখকে কখনো পুরোনো করে না। যতবার দেখবো ততবারই যেন প্রিয় বিদ্যাপীঠের ছবি ধরা দিবে নতুন সৌন্দর্যে ও নতুন মহিমায়।
সালটা ২০০৭। পঞ্চম শ্রেণীতে তখন বৃত্তি পরীক্ষারর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ভাল প্রস্তুতির জন্য আম্মু আমাকে সাথে করে তার লাইব্রেরীতে নিয়ে যেতেন। আম্মু তখন আমার সেই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরীয়ান ছিলেন। তখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি চলছিল। তখন আম্মু আমাকে অফিস কক্ষে নিয়ে গিয়ে নাম লিপিবদ্ধ করে আসেন। সেই থেকেই বিদ্যালয়ের প্রতি ভালবাসা তৈরি হল যা আজও বিদ্যমান। তারপরই শুরু হল আমার পথচলা। আর স্মৃতিপটে যুক্ত হতে থাকলো অসাধারন সব স্মৃতি।
অ্যাসেম্বলিতে সম ও উচ্চ সুরে জাতীয় সংগীত গাওয়া। বাংলা বিশ্বনাথ স্যারের সেই রুপাই কবিতা আবৃত্তি যেন এখনো কানে লেগে আছে। ইংরেজী রাশিদা ম্যামের গ্রামার বোঝানোর সুন্দর টেকনিক ও জাফর স্যারের কোনো কিছু বোঝানোর পর “বোঝে আসছে” ডায়লক। হারুন স্যারের বিখ্যাত ফুটুরির গল্প। হ্যাড স্যারের সেই চিরচেনা ডায়লক “এই তোরা তিনজন কাল থেকে তিন জায়গায় বসবি।” এগুলো সব স্মৃতিপটে সযত্নে সাজানো আছে। মজার স্মৃতিও রয়েছে অনেক। স্যার, ম্যামদের নিয়ে আড়ালে মিমিক্রি করা ও অদ্ভুত অদ্ভুত নাম দেওয়া। আমাদের তিন বন্ধুর গোপন আলাপন ও সেই আলাপনের জন্য কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ও মুচকি মুচকি হাসা। সবাই মিলে গাছ থেকে পেয়ারা চুরি করে খাওয়া। টিফিন পিরিয়ডে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাওয়া। বার্ষিক ক্রিয়া প্রতিযোগিতা ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করা। স্কুল জীবনে সবচেয়ে কষ্টের হল প্রিয় খগন্ড স্যারের মৃত্যু। সেদিন শুধু প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীই নয় স্যার, ম্যামরাও কেঁদেছিল। আমরা সেদিন দল বেঁধে স্যারকে শেষ দেখা দেখতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছিলাম। সবচেয়ে বিষাদময় দিন ছিল সেটি। হাজারো সুখ, দুঃখ, আনন্দ ও মজার স্মৃতির এক ভান্ডার হল আমার এই প্রাণের বিদ্যাপীঠ। আমার সেই বিদ্যাপীঠের নাম হল “সাতমোড়া উচ্চ বিদ্যালয়।” আজও স্কুলে গেলে সেই সব দিনের কথা মনে পড়ে যায়। আর তলিয়ে যাই স্মৃতির মায়াজালে।
◾পঞ্চম স্থান
ছাত্রজীবনের সেরা সময় পার করেছিলাম পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেই সময় গুলো ঘিরে রয়েছে শত শত স্মৃতি। আমি ভুলা মনের মানুষ ভালো কিছু মনে রাখতে পারি না তবে মজার স্মৃতি গুলো অন্য স্মৃতির টেলাটেলির মাঝে ও এই ভুলা মন থেকে হারিয়ে যায় না। কয়েকটা মজার স্মৃতি নিচে শেয়ার করলাম:-
স্মৃতি-১:- উপরে যে বললাম আমি ভুলা মনের মানুষ এতোটা ভুলা মনা যে বিদ্যালয়ের প্রথমদিন মা ড্রেস,ব্যল্ট,স্কাপ সব কিছু পরিয়ে দিয়ে এগিয়ে দিয়েছিলো আমি কিছুদুর না যেতেই স্কাপ খুলে পরে গেছে আমি নিজেও জানি স্কুলের প্রথম দিন বলে কথা খুশিতে তো একটু লা লা লা ভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে না হাটলে কি হয়? এতোটা লা লা লা ভাব ছিলো পিছন থেকে বড় ভাই স্কাপ নিয়ে ডাকতে ডাকতে বিরক্ত হয়ে দৌড়ে গিয়ে স্কাপ হাতে তুলে দিয়েছিলো মনে পড়লে এখনো বড্ড হাসি পায়।
স্মৃতি-২:- বন্ধু গিয়াসউদ্দিন ভুলে বোনের জুতা পায়ে দিয়ে স্কুলে চলে আসছিলো দূভাগ্যক্রমে আমার নজরে পড়ে গেছিলো জিঙ্গেস করলাম কিরে জুতা কার? লজ্জায় ব্যাচেরা আর কিছু না পেরে বলে কিরানমালা জুতা নিউ ডিজাইন বাজারে আসছে,, ব্যাচেরা আর না পারে বাজারে যেতে না পারে গ্রুপ ক্লাস করতে ক্লাস রুম থেকেই আর বের হতে পারে না জানি না পরে কিভাবে বাড়ি গেছিলো।তবে বিপদ কেটে গেলেও তার নাম টা রয়ে গেছে, এখনো সবাই কিরানমালা বলে ডাকে।
স্মৃতি-৩:- স্কুল জীবনে দুষ্টমির জন্য প্রচুর মাইর খাইতাম তার মধ্যে একদিন মাইরের ভয়ে কাপঁতে কাপঁতে হেঁসে দিছিলাম কারণ আমি কথা বলতেছিলাম মাশুক ইলাহি স্যার কে নালিশ করেছিলো ক্লাস ক্যাপ্টেন তানজিলা স্যার রাগে আমার দিকে ডাস্টার ছুড়ে মারার সময় ডাস্টার তো আমার গায়ে পরে নাই উল্টা চকের গুড়া গুলো গিয়ে পড়েছিলো তানজিলার নাকে মুখে ব্যাচারির জন্য এখনো মায়া হয় পাকনামি করতে গিয়ে নিজে শাস্তি পেয়ে গেছিলো।
◾ষষ্ঠ স্থান
উজ্জল স্যার, হুজুর স্যার, স্বপন স্যার,জয়নাল স্যার, হেড (সুব্রত স্যার) স্যারেরা প্রায় সময় বিকেলে আমাদের সাথে ভলিবল খেলতেন।।
এটাই আমার ৫ বছরের স্কুল এবং হোস্টেল জীবনের সেরা স্মৃতি। আর স্কুল হোস্টেলে কাটানো সময় টা জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি। প্রতি সন্ধ্যায় ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়তে বসা, পড়ার ভান ধরে ঘুমিয়ে পড়া। স্যারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্রিকেট খেলা। ম্যানেজারের দ্বায়িত্ব পালন করা।ক্লাস ফাঁকি দিয়ে হোষ্টেলে ঘুমানো। স্যার দের উরাধুরা মাইর খাওয়া।
বড় ভাইদের শাসন, ছোট ভাই দের থেকে পাওয়া সম্মান। কত হাজার স্মৃতি, বলে শেষ করা যাবে না। আর ২০১৩ ব্যাচের বন্ধু গুলোর কথা না বললেই নয়।
◾সপ্তম স্থান
২০০৭ সালে ৫ম শ্রেনী পাশ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে যাবার আগে বিশেষ একটা ভাব চলে আসে। অবশ্য তখনো ভাব কি জানতাম না কিন্তু একটু বড় হয়ে গেছি,উচ্চ বিদ্যালয়ে যাবো অন্যরকম লাগতো। দিন তারিখ মনে নেই,ভর্তি হয়ে গেছি বাঁশখালীর অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে তথা লোকমুখে পরিচিত মইন্দেরো স্কুল বা চাঁপাছড়ি স্কুলে। দেড় মাইলের বেশি হেটে আমরা স্কুলে যেতাম দল বেধে। টিফিনে ৫ টাকার চনামুড়ি খেতাম,ছুটির পর কোন দল আগে হেটে বাড়ি পৌছিবে সে নিয়ে হাটার প্রতীযোগিতা হত। সেই ৬ষ্ঠ শ্রেনী থেকেই একই ক্লাসের বন্ধুদের মধ্যে আলাদা আলাদা সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। অন্যান্য সিনিয়র ক্লাসের বড় ভাইয়েরা আমাদের দেখলে র্যাগ দেওয়ার মতো করে বলতো “সিক্সে পড়ে মনে হয়,এখনো প্রাইমারি স্কুলের গন্ধ যায়নি”। সিক্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা বোধহয় চলাফেরায় অন্যদের চেয়ে আলাদা থেকে, স্যারেরাও মাঝে মাঝে এই কথা বলতেন। নতুন ড্রেস সেলানোর আনন্দ, নতুন বিদ্যালয়ে পড়ার আনন্দ, নতুন নিয়মের স্কুল, অনেকগুলা বইয়ের ক্লাশ.. ৬ষ্ট শ্রেনী তাই আসলেই অন্যরকম অনুভূতির ক্যানভাস।
এরপর ধীরে ধীরে আমরাও বড় হয়ে যাচ্ছি.. সেভেন,এইট,নাইন করে করে হয়ে গেলাম দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী। স্কুল এখন আমাদের দখলে। ক্লাশ শেষ জুনিয়র-সিনিয়র ব্যাচের সাথে ক্রিকেট, ফুটবল ম্যাচ লেগেই থাকতো। সেই সাথে নিয়মমাপিক ঝগড়া,উল্লাস..আরো কত কি! রুপন বৈদ্য স্যার,তাহের স্যার,হেলালী স্যার,মাহফুজ স্যার সবাইকে পেয়েছি পরিবারের মতো। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের পরবর্তী জীবনের বেশিরভাগ বন্ধুই স্কুল জীবনের বন্ধু। জীবনের এমন সুন্দর কিছু মুহূর্তের জন্য ধন্যবাদ তোমাকে হে প্রিয় বিদ্যাপীঠ পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয়।
◾অষ্টম স্থান
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি,ছোট চাচা জানে আলম তালুকদার এর সাথে ভর্তি হতে এলাম পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে। অফিসে সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।কেউ যেন মোরশেদ বলে ডাক দিল।দু’তলার দিকে তাকিয়ে দেখি শাকিব ডাকছে। এই শুরু পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল জীবনের পথ যাত্রা। একই সাথে শুরু হলো মাধ্যমিক স্কুল জীবন।
ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়ে এক মাস যেতে না যেতে আমাদের ক্যাপ্টেন নির্বাচন,ক্যাপ্টেন নির্বাচন স্কুল জীবনের অন্যতম রোমাঞ্চকর অধ্যায়৷ সে অধ্যায়ের সবচেয়ে উজ্জ্বল ধ্রুবতারা হিসেবে আমার সহপাঠীরা আমাকে প্রতিবারই ক্যাপ্টেন নির্বচিত করেছে।স্কুলের প্রায় অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করার সুযোগ পেতাম।আর সব কিছু তে অংশগ্রহণ করার কারনে স্যারদের কাছে অতি আদরের এবং প্রিয় হয়ে উটি। অষ্টম শ্রেণির বিদায় অনুষ্ঠানে তেমন কারো মনে কস্ট ছিল না কারন সবাই একই স্কুলে এক সাথে আছি। ২০২০ সালের ৫ই জানুয়ারি, দেখতে দেখতে কেটে গেল পাঁচটি বছর। এখন আমাদের স্কুল জীবনের একবারে শেষ সময়ে দাঁড়িয়ে আছি।মাত্র ২০-২২ দিন পর আমাদের বিদায় নিতে হবে। জীবনের সেরা সময়টা শেষ হওয়ার পথে। এ কথা মনে পড়লে খু্ব খারাপ লাগে। আর তাই চাই স্কুল জীবনের বাকী সময় টুকু প্রাণ ভরে উপভোগ করতে।
২০২০সালের ২৬শে জানুয়ারি, জীবনের সব চেয়ে বেশি কিছু বুঝি আজ হারালাম। মানুষের ছোট্ট এ জীবনে সবকিছু বুঝি বিধাতার লীলাখেলা।
সকাল ১০:১৫ এর বাঁশির আওয়াজে সবাই এক সাথে এসে পিটি করতাম। সাড়ে দশ’টার ঘন্টিতে সবাই এক সাথে ক্লাসে ঢুকতাম। পড়া না পারলে শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য কখনো মনে ছিল না,ভুলে গিয়েছি,অসুস্থ ছিলাম,মাকে নিযে ডাক্তারের কাছে গিয়েছি, পেট ব্যাথা ছিল, মাথা ব্যাথা ছিল ইত্যাদি ছিল নিত্য দিনের বাচাঁর কৌশল। আবার কখনো ওয়াদা করতাম পরের দিন শিখবো। কখনো বা আবার বন্ধুদের অনুরোধে পড়া পারা স্বত্বেও মার খেতাম।কেউ কেউ আবার ক্লাস চুরি করতো। এগুলো সব স্কুল জীবনের নিত্য দিনের ঘটনা।
অনেক সময় আমরা একে অন্য কে হেনস্তা করে আনন্দ করতাম, মজা করতাম। কখনো ইডিয়ট, কখনো বা Science, নামধারী আনলাইন গ্রুপ টিশু গ্রুপ ডিজে গ্রুপ। কারো ব্যাগে নিজে লিখে অন্যর নামে চিঠি লিখে ডুকে দিতাম বা ছলের বই মেয়ের ব্যাগে মেয়র বই ছেলের ব্যাগে। -এ রকম অদ্ভুত সব শয়তানী ছিল আমাদের মাঝে।
রাগ অভিমান সব কিছু ছিল হয়ত দু-চার মিনিট, সর্বোচ্চ একদিন কথা না বলে থাকতাম; কিন্তু এর চাইতে বেশি থাকতে পারতাম না। সবাই মিলে যেতাম। অদ্ভুত এক মিল ছিল আমাদের মাঝে।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা নবম-দশম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্র ভাবলেও আমাদের শয়তানি বলে দিত প্লে,নার্সারি কিংবা ওয়ান-টুর ছেলে মেয়ে। কারণ আমাদের মাঝে ছিল রাবার মারামারি, কাগজ মারামারি ইত্যাদি। যা আজ আমায় স্মরণ করিয়ে দেয়। স্কুল বিরতির সময় সবাই এক সাথে বাজারে যেতাম, একসাথে নাস্তা করতাম। একে অন্যের খাবার কেড়ে নিয়ে খাওয়া নিত্য দিনের ব্যাপার। অদ্ভুত সব শয়তানি ছিল আমাদের মাঝে। জানি এ সময়গুলো আর ফিরে আসবেনা। এখনো আমার মনে হানা দেয় সেরা কিছু সময়, সেরা কিছু মুহূর্ত। তখন মন চায় আবার ফিরে যেতে সে স্কুল জীবনে। জানি,সময়ের চাকা কখনো পিছনে ঘুরানো যায় না। তাই এটা এখন শুধু অতীত।
◾৯ম স্থান:
বাড়িটা আমার বাঁশখালী হলেও সেখানে থাকা হয় না৷ আমার শৈশব, কৈশোর সব কেটেছে অন্য জায়গায়। তবে কৈশোরের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটে বাঁশখালীতে। হঠাৎ করেই বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মিরসরাই সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই। আর অষ্টম শ্রেণী তে ভর্তি হই বাহারচরা রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।
যেদিন ভর্তি হই সেদিনই আমার প্রথম ক্লাস করা। আর ভর্তি প্রক্রিয়াতে দেরী হওয়ায় ক্লাসে যেতেও দেরী হলো। তখন গণিত ক্লাস ছিল, ক্লাসটা নিচ্ছিলেন শ্রদ্ধেয় মনজুর স্যার। প্যাটার্নের যে চ্যাপ্টার ছিল সেটার মধ্যে ফিবোনাক্কি সংখ্যার বিষয়টা বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।
আমি অনুমতি নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করছিলাম। দেরী হওয়ায় স্যার কী যেন একটা বললেন আর ক্লাসে সকলেই হেসে উঠলো। আমি কিঞ্চিৎ লজ্জা পেয়ে একটা খালি সিটে বসে পড়লাম।
আমার বই ছিলনা৷ আর স্কুলেও বই ফুরিয়ে গিয়েছিল। তো দেখলাম ক্লাসে একজন আমাকে বইয়ের কথা জিজ্ঞেস করলো৷ আমি বললাম যে, বই তো আমার নাই৷ এরপর সে আমাকে প্রায় অনেকগুলো বইয়ের ব্যবস্থা করে দিল। তার নাম ছিল সজিব।
এরপর কয়েকদিন এমনিতে কেটে যায়। কয়েকজনের সাথে ভাব হলো। ওরা ক্লাস শুরু হওয়ার আগে আর টিফিন ছুটিতে ক্রিকেট খেলতো৷ একদিন ওরা খেলার সময় আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে খেলতে আহ্বান করলো । প্রথমে তামিম জিজ্ঞেস করলো যে খেলবো কিনা৷ এরপর দলে নেওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই খেলতাম।
ক্লাসে সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে রুকনের সাথে৷ যার ক্লাস রোল আট ছিল। আমি প্রতিদিনই তার সাথে বসতাম৷ সে গণিতে ভালো ছিলো খুব৷ আমি না বুঝলে তার কাছ হতে বুঝে নিতাম।
একদিন বাংলা ক্লাসে শ্রদ্মেয় তাহুরা ম্যাম ক্লাস নিচ্ছিলেন৷ ভাষাগত জটিলতায় তিনি আমাকে একটা বিশেষ স্থানের লোকদের সাথে মিলিয়ে ফেললেন। তো তৈলচিত্রের ভূত( এইটা ঠিক মনে নাই, ভুলও হতে পারে) নামক গল্পটা মনে হয় পড়াচ্ছিলেন। সেদিন তামিমের সাথে বসেছিলাম। তামিম খুব টেলেন্টেড আর দুষ্টু ছিল বেশি। ও পাশের জনের সাথে গল্প করছিল আর ম্যাম তাকানোর পর এরা বইয়ের দিকে তাকিয়ে যায়, মনোযোগী ছাত্র হয়ে উঠলো৷ আর আমি বোকা ম্যামের দিকে তাকিয়ে গেলাম, ফলপ্রসূ আমি সেই শাস্তিটা পেয়েছিলাম।
ইংরেজি ক্লাস নিতেন শ্রদ্মেয় সন্তোষ স্যার, যিনি খুব টেলেন্টেড শিক্ষক৷ আমাকে খুব স্নেহ করতেন৷ মাঝেমধ্যে আমাকে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করতেন৷
টিফিন ছুটিতে অনেক সময় মারামারি হতো৷ তামিম আর একটা ছেলে ছিল যার নামটা ভূলে গেলাম৷ ওরা রেসলিং খেলার মার গুলো দিতো৷ 藍藍藍 তামিম একবার আমাকেও দিয়েছিল আর আমি রেগে গিয়েছিলাম। কারণ আমি এইসবে অভ্যস্ত ছিলাম না৷
সবচেয়ে মজার ছিল পাঞ্জা লড়াই; প্রায় প্রতিদিনই হতো৷ প্রতিটি ক্লাসের পরপর সবাই দুষ্টুমি করে মারামারি করতো৷ আজও সেই দৃশ্যটি মনে পড়ে। তখন ভালো লাগতো না বিষয়টা। তবে এখন খুব মিস করি।
রায়হান উদ্দিন ফাহিম; ক্লাসের ফার্স্ট বয়। সবকিছুতেই টেলেন্টেড। যেমন পড়ায় ভালো তেমনটা গানের গলায়৷ আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সকলে এসে তার পিঠে খুব মারতো৷ সেও খুব উপভোগ করতো৷
আরেকটা কথা বলি, একজন খুব মজার স্যার ছিল। যনি ক্লাসে আসলে সকলেই খুব আনন্দমুখর হয়ে উঠতো। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেইতো সকলে খুব রোমান্টিক হয়ে উঠতো৷ স্যার এর নামটা না-ই বললাম। হয়তো সবাই চিনবেন৷
এভাবেই বাঁশখালীতে আমার একটা বছর কেটে যায়। পরবর্তীতে আমি পূর্বের স্কুলে এসে আবার ভর্তি হলাম। তবে আমি ঐ একটি বছর খুব মিস করি৷ যেটা আমার চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
◾দশম স্থান
ফেলে আসা দিনের নানা স্মৃতি মানুষকে আন্দোলিত করে। দূর অতীতকে জীবন্ত করে বর্তমানকে ভুলিয়ে দিতে চায় স্মৃতি। তবে সুখ-স্মৃতিময় অতীতকে নিয়ে ভাবতে মানুষ বড় বেশী ভালোবাসে। আর সে যদি হয় শৈশব কৈশরের স্মৃতি বিজড়িত অতীত তবে তো আর কথাই থাকে না।প্রতিটি মানুষকে প্রবলভাবে আকর্ষন করে থাকে সে অতীত।
ভালো লাগে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে। স্মৃতিচারণের যে অধ্যায়টি আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় তা হলো আমার স্কুল জীবন।যেখানে কেটেছে আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আনন্দঘেরা ও স্মৃতিময় মুহূর্ত। সবাই বলে যে স্কুলেই জীবনের প্রিয় মুহূর্তগুলো কাটে।সত্যিই তাই…
স্কুলের সকল স্মৃতি এখনো জীবন্ত।ঠিক তেমনই যেমনি আমরা প্রতিদিন কাঠিয়েছিলাম সকলে সকলের সাথে।আর সেই স্মৃতি আর অনুভূতিগুলো যদি দেখাতে পারতাম তাহলে বুঝাতে পারতাম স্কুলের সাথে জড়িত স্মৃতিগুলো কত গুরুত্ব।এই স্মৃতিগুলোকে হাজার শব্দ বা বাক্যে দিয়ে বুঝানো সম্ভব না তা শুধু মনের অনুভুতি দিয়ে বুঝানো সম্ভব।
যদিও আরো চার বছর আগে পার করে এসেছি তারপরেও স্কুল জীবনের স্মৃতি আমার জীবনে অনেকখানি জায়গা জুড়ে অাছে।
সেই কোন এক অতীতে একদিন দুরু দুরু বুকে প্রকৃতির বিচিত্র সবুজ-শ্যামল গ্রামের এক অখ্যাত বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছিলাম।আজ তা স্মৃতি হয়ে মনের কোনে ভেসে আছে।তারপর অানন্দ বেদনা মুখর কতো শত দিন চলে গেছে,তবু মনে হয় এই বুঝি সেদিন বাড়ি থেকে পা রেখেছিলাম।
স্মৃতিতে অস্পষ্ট হলেও আমার খুব স্পষ্ট মনে আছে স্কুলের সব কথা।শিক্ষক শিক্ষিকাদের কথা।পেয়েছি সুনাগরিক তৈরি করার কারিগর। আর পেয়েছি সুখ দুঃখ ভাগ করে নেওয়া প্রিয় সহপাঠীদের। যাদের সান্নিধ্যে কেটেছে আমার সেদিনের সেই রঙিন সময়।
আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে কাটানো অনেক মুহূর্ত এখনো মনে নাড়া দিয়ে উঠে।খোকন স্যার সাইফুর স্যার এনেছেন আমাদের বিদ্যালয়ে নতুন প্রণের ঝংকার। খোকন স্যার শিক্ষক ছিলেন বটেই কিন্তুু কখনো বাবা কখনো বন্ধুর মতন আমাদের সমস্যা সমাধান করতেন। সমীর স্যার উচ্চতর ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন একজন শিক্ষক।তিনি আমাদের বড় স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছেন।হারাধন স্যার শিখিয়েছেন কিভাবে হাসতে হাসতে পড়াকে আয়ত্ত করা যায়।তার প্রতিটি ক্লাশই হতো রোমান্সময়।গল্প করে পড়াতেন রাজিব স্যার। ছবি একে পড়াতেন সন্তুুস স্যার।শিউলী ম্যাডাম ক্লাশে এসে বলতেন “তোরা আমার কথা পিছনে শুনতেছস,আমার গলা কিন্তুু টল্লাবাঁশ”।অনেক মধুর স্মৃতি বিজড়িত সেই স্কুল আজও আমাকে টানে।
বিদ্যালয়ের শেষ দিনটা যেন স্কুল জীবনের প্রতিচ্ছবি। এই দিনটি স্মরণ করলেই স্মৃতিপটে ভেসে উঠে স্কুল জীবনের অসংখ্য চিত্র।শিক্ষকদের আদর শাসন,ছাত্র ছাত্রদের একত্রে ক্লাসে বসা,মাঠে খেলা করা,স্কুল ছুটির পর হৈ হুল্লা করে অানন্দের সাথে স্কুল ত্যাগ করা সবই যেন অম্লান স্মৃতি।
পুরোনো সব স্মৃতি এখন বেশি মনে পড়ে।আমাদের বিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো পূর্নমিলনী হবে জেনে আবারো সকল স্মৃতি এসে ভিড় করেছে।সে সব মনে করে কখনো অট্টহাসিতে লুটিয়ে পড়ছি না হয় কখনো অশ্রুজলে সিক্ত হচ্ছে আখিঁ।
⇨ বিচারকের দৃষ্টিতে আরো উল্লেখযোগ্য লেখা
➤
ছোট বেলা থেকে বরাবরই চঞ্চল প্রকৃতির ছিলাম। এক সময় প্রাইমারীর গন্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হলাম৷ শৈশব থেকে কৈশোরের যাত্রা শুরু। আমার শিক্ষক সম্পর্কে ধারণা ছিল শিক্ষকরা রাগী, গম্ভীর, খুবই শৃঙ্খল থাকবে সবসময়। শিক্ষক সম্পর্কে আমার এ ধারণা সম্পূর্ণ বদলে দেয় আমার হাই স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক জিয়াউর হক স্যার। তখন আমি সবে ক্লাশ সিক্সে ভর্তি হয়েছি। শীতকাল যাই যাই করছে। স্কুলে তখন বার্ষিক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিযোগীতার মৌসুম শুরু হলো। যেহেতু প্রতিযোগিতার সাথে চঞ্চলতার একটু গাঢ় যোগসূত্র রয়েছে, সেহেতু এই প্রতিযোগিতা নিয়ে আমি ছিলাম বরাবরই উৎসাহী। কারও কারও মতে, অতি উৎসাহীও বটে। তাই প্রাথমিক নির্বাচনের জন্য আমরা ছাত্র ছাত্রীরা অডিটোরিয়াম রুমে গিয়ে বসলাম। বাছাই প্রক্রিয়ার জন্যে অপেক্ষমাণ আমরা। তার সাথে কী নিদারুণ উত্তেজনা। সাথে ছিলো অল্প একটু ভয়ের রেশ। ঠিক তখনই, হঠাৎ দেখি জিয়াউল হক স্যার আমাকে ডাকছে। আমি তো ভয়ে শেষ, কি ভুল করে ফেললাম! স্যার আমার পরিচয় জানতে চাইলো। আমি আম্মুর নাম, নানার নাম বললাম। জানতে পারলাম ওনি আমার আম্মুকে ও পড়িয়েছে। তারপর শুনলাম এক অতি বিস্ময়কর কথা। স্যার বললো আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু। আমার তো অশ্চর্যের শেষ নেই। একই ক্লাসে না পড়লে বন্ধু হয় নাকি? তাও আবার শিক্ষক! তখন থেকে আমার কাছে বন্ধুর সংজ্ঞাটা পরিবর্তিত হলো৷ আমি বুঝলাম, বন্ধুত্বের সীমারেখায় লিঙ্গ, বর্ণ, বয়সের মাপকাটি নিতান্তই ঠুনকো। আমি আরও বুঝলাম, যার কাছে নিজের ভালো-খারাপের কথা অনায়াসে বলা যায় সে’ই বন্ধু । তারপর থেকে হেড স্যার, জিয়াউর হক স্যার, খালেক স্যার, নন্দিতা ম্যম, সুমিতা ম্যম, ফাতেমা ম্যম, খালেক স্যার, মুরিদ স্যার সবাই আমার বন্ধু।
☞ আনিকা শর্মিলা
বি. বি. চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়
➤
বাল্যকালের পাঠ চুকিয়ে শৈশবের দুরন্তপনাকে সঙ্গী করে শুরু হয় আমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জীবন। কত সহস্র স্মৃতি হৃদয়ে আজ নাড়া দিয়ে আমাকে স্মৃতিকাতর করে তোলে তার হিসাব করা সম্ভব নয় । একবার শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরবেলায় ম্রিয়মান সূর্যের আলোতে আমি সাইকেল চালিয়ে স্কুলের দিকে রওনা দিলাম। স্কুল ফটকে প্রবেশকরা মাত্র একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে আমার সাইকেল দুর্ঘটনায় পতিত হয়। মেয়েটি আমার দিকে বিরক্তভরা দৃষ্টি উপহার দিল। আমি হতভম্ব হয়ে মাটিতে পড়ে রইলাম। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে শোরগোল শুরু করে দেয়। বিষয়টি আমার জন্য খুবই পীড়াদায়ক ছিলো। পরক্ষণে বিদ্যায়লয়ের প্রধান এসে আমাকে উপদেশ মিশ্রিত শাসন করেন যা আমার কাছে আজও স্মরণীয়। টিফিন ছুটিতে পালানোর প্রতিদান স্বরূপ মিলতো বাংলা স্যারের বেত্রাঘাত আর উপদেশবাণী। তখন স্যারের এই যত্নবহুল আচারণ মানসিক অশান্তির কারণ ছিলো । আরেকটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করি,আমাদের বিজ্ঞান স্যার নব জীবনের সূচনা অধ্যায় পড়ানোর সময় ছকিনার মা আর বাপের কাহিনী আজও আমাকে হাসির খোরাক জোগায়। বিদ্যালয়ের হাউসভিওিক ফুটবল টুর্নামেন্টে ধারা-বিবরণীর জন্য আমাকে বাছাই করা হত, মাইক্রোফন হাতে তথ্যবহুল ধারা-বিরণীর মাধ্যমে স্যারদের প্রশংসার স্রোতে হারিয়ে নিজেকে নিয়ে বিচরণ আবিষ্কার করতাম গর্বের রাজ্যে। বন্ধুদের নিয়ে সমুদ্র সৈকত ঘুরতে গিয়ে অথৈ জলে স্নান করে আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলাম যা আজও স্মৃতিতে অম্লান। বিদায় বেলায় মৌলভী স্যার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে নিয়ে ওনার আশবাদ ব্যক্ত করলেন। আর স্কুল ফটকে বিদায়বেলায় বন্ধুদের আহাজারিতে অশ্রুসিক্ত নয়নে আমিও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। ভালো থেকো মাতৃতুল্য প্রিয় বিদ্যাপীঠ বি.বি চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়। স্মৃতির ক্যানভাসে তুমি আমার হৃদয়ের তাজমহল।
☞ সাইফুর রহমান তাসিম
ব্যাচ: ২০১৮
বি.বি চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়
➤ আমি পড়তাম পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এই স্কুলেই ভর্তি হই। নতুন স্কুলে এসে আমি যেনো এক বড় জগৎ দেখতে পেলাম। প্রথম প্রথম নতুন পরিবেশ অস্বস্তিকর মনে হতো। তবে ধীরে ধীরে সেটা আমার বাড়ির মতো আপন হয়ে উঠল।স্কুলের বাথরুম থেকে শুরু করে বাসায় যাওয়া পর্যন্ত সব জায়গায় বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমির স্মৃতি জমে আছে মনে।এই স্কুল জীবনে কত শত বিয়ে পড়িয়েছি মনে নাই।সুযোগ পাইলে বন্ধুদের বিয়ের পিড়িঁতে বসাতাম।বিয়ের আয়োজনে সহযোগী ছিল আমার প্রিয় এবং কাছের বন্ধু হাবিব,অনিক,সোহেল,ইছহাক।
অন্য বন্ধুদের সাথেও অনেক মজার মজার স্মৃতি আছে।অনিক আমাকে উল্টা-পাল্টা বুঝিয়ে নিয়ে বাসায় নিয়ে যাচ্ছিল,বাসায় যাওয়ার জন্য স্কুল পালাচ্ছিলাম দুজনে।হঠাৎ আব্বু দেখে ফেলল তারপর আব্বুর হাতে থাকা ছাতা দিয়ে তুলোধুনো খেলাম।নোমান স্যার আর রুপন বৈদ্য স্যার আব্বুর হাত থেকে রক্ষা করে আবার স্কুলে পাঠাল।হাবিব আর আমি স্কুল থেকে বাড়ি যাওয়ার পথেএকবার খুব বৃষ্টি হয়েছিল সাথে ছিল ভয়ংকর বজ্রপাত।বজ্রপাতের ভয়ে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আস্তক আস্তক করে কোনরকম বাড়িতে গেলাম।এরকম অনেক স্মৃতি জমে আছে মনে।
আমি বড়দের বরাবর সম্মান করে চলতাম।তাই বড় জনরা আমাকে খুবই ভালবাসতেন।আর আমি এই স্কুলের শিক্ষক প্রয়াত মাষ্টার মোক্তার আহমদ তালুকদার এর ছেলে ছিলাম বলে আমাকে সবাই খুব অল্প সময়ের মধ্যে চিনে ফেলে । এ কারণেই হয়তো স্কুলের সব শিক্ষক আমাকে স্নেহ করতেন। শিক্ষক আর বন্ধুদের স্নেহ- ভালোবাসায় আমার স্কুল জীবন হয়ে উঠেছিল আনন্দের ও গৌরবময়।
সময় বহমান। সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না। স্কুল লাইফের গণ্ডি পেরিয়ে এসেছি ঠিকই, স্কুল লাইফের মায়া ছাড়তে পারেনি। স্কুল জীবনে যখন খুব করে চাইতাম স্কুল জীবনটা শেষ হয়ে যাক, শুরু হোক কলেজ জীবন, আজ তার থেকেও অনেক বেশি করে ফিরে পেতে চাই স্কুল জীবনকে। মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন এমন একটা সময় যা হারিয়ে যাওয়ার আগে উপলব্ধি করা যায় না। আমার জীবনে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের প্রতিটি অধ্যায় স্মৃতিময় হয়ে আছে। যদি সত্যিই ফিরে যাওয়া যেত, তবে আমি ফিরে যেতাম আমার স্কুল জীবনে।
☞মোহাম্মদ মিশকাতুল ইসলাম,
ব্যাচ-২০১২
পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয়।
➤ এই প্রিয় বিদ্যালয় এর মধ্যে লুকিয়ে আছে আমাদের হাজারো অজানা স্মৃতি, স্মৃতিকথা। যা আজ আমি আনন্দ আর স্মৃতি কাতরতায় স্মরণ করছি। জরাজীর্ণ ভবনে শুরু হওয়া স্কুল প্রাণ ফিরে পায় একঝাঁক কিশোর-কিশোরীর দৃপ্ত পদচারণায়। সেই পলেস্তারা খসা দেয়াল, সবুজ ঘাসের মাঠ আজো বুকে জাগায় শিহরণ। স্কুল শুরুর ঠিক আগে আগে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা — সেই প্রিয়মুখ একঝলক দেখবো বলে। প্রিয় বন্ধুর সাথে বসবো বলে বই দিয়ে জায়গা দখল, ক্লাসের ফাঁকে কাটাকুটি খেলা কিংবা নড়বড়ে করিডোরে দাঁড়িয়ে গল্প করা, স্যারের বেত্রাঘাত এড়াতে ছোট করে চুল কাটা, টিফিন পিরিয়ডে সারা মাঠ ছুটাছুটি করে হাঁপিয়ে গিয়ে দেয়ালে লাগানো পানির ট্যাপে মুখ লাগিয়ে পিপাসা মেটানো আরো কত কি!! কতটা বছর কেটে গেছে, জীবনের কত স্মৃতি হারিয়ে গেছে! তবু স্কুল জীবনের স্মৃতিরা পাখা মেলে ব্যস্ত সময়ের খানিক অবসরে।
সবার জীবনে প্রথম প্রেমটাও স্কুল জীবনে আসে আমার এমনটি ধারনা। আমরা পাইনি আধুনিক যোগাযোগের মাধ্যম, ইন্টারনেটের যুগের ডিজিটাল প্রেম। তবুও জীবন থেমে থাকেনি। প্রেমিক হৃদয়ের আকুলতাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি কেউ। প্রেমিক বন্ধুর ভালোলাগা মানুষটি ব্যালকনীতে চাতকিনী পাখির মত দাঁড়িয়ে থাকা দেখে বুকের মাঝে কেমন যেন শূন্যতা অনুভব করতাম। মনে হত আহা কেউ যদি থাকতো!! ভালো কি কাউকে লেগেছিল!! নাকি তা শুধুই অতৃপ্ত হৃদয়ের হাহাকার!! সে বয়সে অত শত হিসেব করতে পারিনি। আজ পরিণত বয়সে যখন পিছে ফিরে তাকাই, মনে হয় ভুল কি সেদিন করেছিলাম তার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে!! মধুর সে ভুল আজো মনে জাগায় দোলা। এখনকার ছাত্র-ছাত্রীরা অবশ্য অনেক বেশি সাহসী। নিজের পছন্দকে চেপে রাখে না। সামনা সামনি না পারুক, মেসেঞ্জারে ঠিকই বলে ফেলে অকপটে। চারিদিকে আধুনিকতার এত এত গ্যাজেট হাতছানি দেয়, তবুও মনে হয়— আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।
কলেজ জীবনের সাথে এই মধুর জীবনের অনেক ব্যবধান রয়েছে। আজ ভার্সিটিতে কতো বন্ধু আমাদের,কত আড্ডা আজ,তবুও যেন কিছু অসম্পূর্ণ! এসবের আজ কিছুই নেই, আছে কিছু কল্পনা স্মৃতিকথা! এসব স্মৃতিময় দিন গুলো আর কখনো ফিরে পাবো না। হাহাকার করা হৃদয় যেন বলে উঠে, বিদায় বন্ধু! বিদায় শূন্য ক্লাসরুম! স্কুল জীবনে কত বন্ধু/বান্ধুবি, কত আড্ড-গাণ, আনন্দ,বেদনা, প্রেম-ভালোবাসা, রাগ-অভিমান দিয়ে শেষ করলাম শ্রেষ্ঠ স্মৃতিময় অধ্যায়।
☞ বৈলছড়ি নজমুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়
➤ দুহাজার আট সালের কোন এক রৌদ্রময় সকালে আম্মুর কনিষ্ঠ আঙ্গুল ধরে কোন এক অদ্ভুত,অদেখা স্বপ্ন চোখে নিয়ে প্রথম যাওয়া প্রিয় বিদ্যাপীঠে।অদ্ভুত এক ভাললাগা কাজ করেছিল সেদিন, মনে হয়েছিল যেন কোন এক রুপকথা লিখতে মা আমাকে সেখানে নিয়ে যাচ্ছে।ঘুমঘুম চোখে সেদিনই শুরু হয়েছিল মাধ্যমিক স্তরের স্কুল জীবন,যেখানে কাটিয়েছি জীবনের স্বর্ণালি পাঁচটি বসন্ত। সীমাবদ্ধতা,শৃঙ্খলা আর গোছালো শৈশবের সেই স্মৃতি,ক্লাস উপস্থিতি, টিফিনের ফাঁকে দৌড়াদৌড়ি,এসেম্বলিতে দাড়িয়ে শপথ বাক্য পাঠ করা,সবাই একসাথে আমার সোনার বাংলা গাওয়া,একজন আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুন্দর প্রতিযোগিতা, বন্ধুর ইউনিফর্মে কলমের দাগ লাগিয়ে দেয়া সেসব নস্টালজিক করে দেয়া সুন্দর মূহুর্তগুলো ফেলে আসা এক-একটা মধুর স্মৃতি,যেগুলো চাইলেও দাম দিয়ে কেনা যাবেনা। প্রিয় স্যারদের আদর, মধুর শাসন কিংবা জীবন পাল্টে দেয়া এক-একটা উপদেশ ফেলে আসা স্কুলজীবনের এক-একটা অধ্যায়।কিছু প্রকৃত বন্ধু যারা কখনো হারাবার নয়,এসবই তো ছিল সেই সময়গুলো। নিশ্চয় আবারও কোন একদিন প্রিয় বিদ্যাপীঠ পশ্চিম বাঁশখলী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হবো,এতোদিনে বোধয় অনেক ভালবাসা জমিয়ে রেখেছে সেসব আনতে যাবো, আর-একবার জাতীয় সঙ্গিত গাইতে যাবো আর একটিবার ক্লাসরুমের চেয়ার টেবিলগুলো ছুয়ে দেখবো, প্রিয় স্যারদের আর একটাবার ভালবাসা নিতে যাবো,সন্ধ্যা নামার আগেই আরেকটাবার ছুয়ে দেখবো প্রিয় প্রাঙ্গনটা।আগামী প্রজন্মকেও প্রিয় বিদ্যাপীঠের গান শুনাবো। পরিশেষে এটাই চাওয়া ভালো থাকুক প্রিয় বিদ্যাপীঠ,ভালো থাকুক ফেলে আসা সুখস্মৃতি। পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয় একটা আবেগ,একটা ভালবাসা।
☞ শাহরিয়াজ চৌধুরী রাকিব
সাবেক শিক্ষার্থী,
পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয়,
২০১৩ ব্যাচ।
➤
বাবা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এর শিক্ষক ছিলেন, আমি একই স্কুলের শিক্ষার্থী। আমি তখন ৭ম শ্রেনীতে পড়ছি। স্কুলের পাশ্বেই তালুকদার পাড়ায় আমার বড় বোনের বিয়ে হয়। স্কুল ছৃটির পর দিদির এক দেবর আমাকে দিদির বাসায় নিয়ে যায়।দিদি ও শশুড়রা ঐদিন আমিকে জোর করে রেখে দেয় আর বাড়িতে খবর পাঠান। কিন্তু বাড়িতে খবর পৌছায়নি। এদিকে একমাত্র সন্তানের জন্য সব জায়গায় খোঁজ নেয়া শুরু হয়। শেষে রাতে বাবা সন্দেহমুলুকভাবে দিদির বাড়িতে খবর নিতে এসে আমার খবর পায়। রাতেই খুব রেগে আমাকে বকা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যায়। পরের দিন বন্ধু, প্রতিবেশিরা অনেকে জিজ্ঞাসা করে,” কাল কোথায় গিয়েছিলে? আর কোনদিন না বলে কোথাও যায়নি।উক্ত ঘটনা আমার জন্য স্মরণীয়। আমাদের ব্যাচের অনেক বন্ধু আজ আমাদের মাঝে খবরা খবরা নেই, অনেকের আছে। সবাইকে আজও খুব মিস করি। আমি মনে করি, মাধ্যমিক ৫ বছর সময়টা বন্ধুত্বের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। যা সারা জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ।
☞ অমৃত কারন
সাবেক শিক্ষার্থী,
বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়
➤ দিনটা ছিল নভেম্বরের ০৪ তারিখ ২০০৯ খেলা ছিল জিম্বাবুয়ে বনাম বাংলাদেশের খেলা চলছিল দিবা রাত্রির ম্যাচ জিম্বাবুয়ে টসে জিতে ব্যাটিং করে আমরা টিফিনের সময় বের হয়ে আর স্কুলে যাইনি। দেখি বাংলাদেশ খুব ভাল বল করছিল ৫ম ঘন্টায় আমরা ক্লাসে যাই নি।স্যার যখন দেখে কিছু ছাত্র মিসিং! স্যার লম্বা একটা ঝাউ গাছের বেত নিয়ে বের হলেন আমাদের খুঁজতে যখন দেখলেন আমরা টিভি দেখতেছি তখন আমাদের ধরার জন্য দোকানে গেলেন আমরা দিলাম ভোঁদৌড়। স্যার পিছনে দৌড়ে কয়েক বেত দিলেন তবুও ধরতে পারলেন না। তুফান আলীর বাড়ির দিকে বিল দিয়ে, আমার স্পষ্ট মনে আছে সেসময় বিলে ধান চাষ হয়েছিল। পালিয়ে কোন রকমে বাঁচলাম পরে ছুটি শেষে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরলাম। আরে এরকম কত শত স্মৃতি, কত আবেগ জড়িয়ে আছে। প্রিয় শৈশব, কৈশোর কাটানো প্রতিষ্ঠান পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয়।
☞ রাকিবুল ইসলাম,
পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয় !
ব্যাচ ২০১১
➤ রত্নপুরে তাল বুনো ঘাস গুল্ম লতার ঝোপে, ঝাউ বন, বাঁশ ঝাড় ভরা জলকদর নদী কূলে ফেলে এসেছি শৈশব আনমনে কোন এক কালে হারিয়ে ফেলেছি গোধূলি লগ্ন মঙ্গল ধূপে। ফিরে পাব কি শিশির ভেজা সোনালী দিন? স্বপ্নীল লীলাভূমি বাঁশখালীতে আমার জন্ম। সুন্দর নিস্তব্ধ একটি পরিবেশে গড়ে উঠেছে আমার শৈশবের জীবন।
দূর অতীতকে জীবন্ত করে বর্তমানকে ভুলিয়ে দিতে চায় স্মৃতি। গতিময় জীবনে সামনে ক্রমাগত এগিয়ে চলার সময় পেছন ফিরে তাকাতে ভাল লাগে। ভাল লাগে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে। স্মৃতিচারণে যে অধ্যায়টি আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় তা হল আমার স্কুলজীবন। স্কুলজীবনের স্মৃতি আমার জীবনের অনেক খানি জায়গা জুড়ে আছে। স্মৃতিটুকু আছে আনন্দের উৎস হয়ে। তাই সব ভোলা যায়, স্কুলজীবনের স্মৃতি ভোলা যায় না, সে বড় মধুর চির স্মরণীয়।
স্মৃতিতে অস্পষ্ট হলেও আমার খুব স্পষ্ট মনে আছে । একদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি ছেড়ে আবার বাহারচরা রত্নপুর হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই। নতুন স্কুলে বৃহত্তর পরিবেশে এসে আমি যেন এক বড় জগৎ দেখতে পেলাম। শ্রেণীর বিন্যাসের প্রেক্ষিতে ছোট বড় শিক্ষার্থীর কলকাকলিতে মুখরিত শিক্ষাঙ্গন যেন আমাদের নিয়ে এসেছে বৃহত্তর পরিবেশে। এখানে শৃঙ্খলা, নিয়মকানুন, নিয়মিত ক্লাস, ঘন ঘন পরীক্ষা, সহপাঠ্যক্রম কার্যক্রম যেন এক নতুন জীবনের সন্ধান দিল। প্রথম প্রথম নতুন পরিবেশে অস্বস্তিকর মনে হয়েছিল। পরে এর কল্যাণকর দিক আমাকে অভিভূত করতে থাকে। পরিণতিতে আমার মনে হয়েছে বাড়ি থেকে স্কুলই আমার জন্য বেশি আনন্দের।
হাই স্কুল জীবনের শুরু থেকেই প্রত্যেক শিক্ষকের প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা দেখাতে সমর্থ হয়েছিলাম। এ দুটি গুণের জন্য বিদ্যালয়ের মধ্যে অচিরেই আমার সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। প্রত্যেক শিক্ষকের স্নেহ ও সহানুভূতিপূর্ণ দৃষ্টির কথা আজও আমার মনে পড়ে। অনেক বেশি মনে পড়ে আমার শিক্ষগুরু জনাব, মনজুর আলম স্যারের সুন্দর সুন্দর উপদেশ গুলো। স্যার হাত ধরে শুরু হয় আমার স্কাউট জীবন। স্যার সাথে কাজ করতে আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করতো আমার মাঝে। আমার স্কুল জীবন যে কত সুখের, কত গৌরবের ছিল, তা আজ স্কুল ছেড়ে এসে বুঝতে পারছি। স্কুলের পরিবেশ ও লেখাপড়ার স্বাধীনতা। আমাদের বিদ্যালয়টি ছিল অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা। একটা মুক্ত ও প্রকৃতির আনন্দময় পরিবেশে আমরা লেখাপড়া করতে পেরেছি। লম্বা স্কুল ভবন, বিশাল মাঠ, মাঠের পাশ দিয়ে বাঁধানো সড়ক চলে গেছে গ্রামে দিকে। একটা উন্মুক্ত পরিবেশ আমাদের সব সময় উৎফুল্ল করে রাখত। আমাদের পরম শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকগণ যে যত্নশীলতায় পাঠ দিতেন তা ছিল আমাদের জন্য পরমানন্দের। শিক্ষকগণ সংখ্যায় ছিলেন অনেক। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে তাঁরা আমাদের প্রত্যেকের নাম জানতেন এবং ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন। এখানে যেন একটি বৃহৎ পরিবার জীবন গঠনে নিয়োজিত। পাঁচ বছর এখানে আমার অতিবাহিত হয়েছে। শিক্ষকদের তেমন পরিবর্তন ঘটেনি, ছাত্রদেরও না। তবে বছরের শেষে ব্যর্থতার জন্য যারা বিদায় নিয়ে গেছে তারা আমাদের স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছে। শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক ছিলেন খুবই হাস্যজ্জল একজন মানুষ। ওনার সুন্দর সুন্দর বাণী গুলা খুবই আমাদের মনকে আকর্ষণ করতো। শ্রেণী শিক্ষকরা ছিলেন খুব যত্নশীল। প্রত্যেকটি বিষয় তাঁরা এমন মনোযোগ দিয়ে পড়াতেন যে, ক্লাসের পর আমাদের কোন কোচিং সেন্টারে ছুটতে হত না। কারও বুঝতে অসুবিধে হলে অনেক সময় শিক্ষকগণ পৃথকভাবে পড়াবার ব্যবস্থা করাতেন। গৃহশিক্ষকের বাহুল্য অত্যাচার থেকে আমরা ছিলাম মুক্ত। বাড়িতেও আমার কোন বাঁধাধরা নিয়ম ছিল না। স্কুলের কাজগুলো শেষ করাই আমার একমাত্র কর্তব্য ছিল। এতে আমি প্রচুর আনন্দ পেতাম।
স্কুল জীবনের হাসি-কান্না সবই মাধুর্যমণ্ডিত। পরিণত বয়সে সকলে এ জীবনের স্মৃতিচারণ করে আনন্দ লাভ করে। বাল্যজীবনের অনাবিল আনন্দ অতুলনীয়। আমার স্কুল জীবন বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ ছিল। ঐ জীবনে নবীন প্রাণে কত আঘাত পেয়েছি। অভাবের তাড়না, শোকের আঘাত, ব্যাধির আক্রমণ জীবনকে নিরানন্দ করে তুলেছে। তথাপি আমার নিকট সেগুলো তুচ্ছ বলে মনে হয়েছে। শত আঘাত, অভাব-অভিযোগ কাটিয়ে জীবনে কত আনন্দই না আমি উপভোগ করেছি। তাই আজ স্কুল জীবনের কথা স্মরণ করলে হৃদয়ে-বেদনার অনেক ছায়া জেড়ে ওঠে- ‘বিস্মৃতির অতলে স্মৃতিভাণ্ডার রইবে অম্লান চিরদিন।’
☞ আসাদুল হাকিম রিজয়
বাহারচরা রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয়
ব্যাচ-২০১৮
➤ স্মৃতি বিজড়িত সোনালী স্কুলের ক্যানভাস
স্মৃতির সাহায্যে বেঁচে থাকা, কিন্তু স্মৃতি মানে আজও আনন্দ। ফেলে আসা জীবনের স্মৃতি নিয়ে পুরানো স্কুলের ক্যানভাসে সোনালী অতীতের কথা মনে পড়ে, আবার সেই স্মৃতি মনে পড়ে চলেও যায়। নতুন কিছু পাওয়ার বদলে একটা করে দিন গুনে নেয় সময় ফুরিয়ে আসার।
জীবনের ক্যানভাসে এমন কিছু স্মৃতির ছবি আঁকা থাকে যা কোনোদিন ভুলে থাকা যায় না। ঘুমহীন চোখে সেইসব স্মৃতিরা ক্রমাগতই যেন পিছু টানতে থাকে আর তখনি কালের তরীতে ভেসে হারিয়ে যাই স্কুলের সেই সোনালি শৈশবের দিনগুলোতে !
বাবার হাত ধরেই স্কুলে ভর্তি হওয়া এবং স্কুলের যাওয়া শুরু করা। বাবা প্রতিদিন ১০ টাকা অথবা ২০ টাকা দিতো টিফিন এবং গাড়ি ভাড়ার জন্য। আমি গাড়ি ভাড়া দিয়ে যেতাম আর বাকি টাকা গুলা টিফিনের সময় বনা পুকুর পাড় কিংবা স্কুলের ক্যান্টিনে টিফিন করতাম। আহা কি স্মৃতি। মনের পড়ে সে শৈশবের স্কুলের ক্যানভাসের স্মৃতি।
সকাল সকাল কোচিং এ যাওয়া, কোচিং শেষ করে স্কুলের জাতীয় সংগীতে যাওয়া, তারপর সংগীত শেষে ক্লাসরুমে যাওয়া, মনযোগ সহকারে ক্লাস করা, ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে কত দুষ্টামি করা। দুষ্টুমির জন্য তো কত মাইর খেয়েছি তা অজানা। আবার টিফিন ছুটিতে হেঁটে হেঁটে বাড়িতে ভাত খেয়ে আসা। সেখান থেকে ক্লাস শুরু করে শেষ পর্যন্ত ক্লাস করা। তারপর আবার গ্রুপ ক্লাস করতে হরেক রকমের মজা। ক্লাসের সময় বাড়ির কিংবা পড়াশুনার জন্য না করেও করেছি এবং জীবনে সবচে মিথ্যা একটা কথা,
— স্যার বলতো :- বাড়ির কাজ সবাই করেছো?
স্টুডেন্ট বলতো :- “জ্বি স্যার “
— স্যার বলতো সবাই বুঝতে পেরেছো না বুঝলে আবার জিগ্যেস করো।
স্টুডেন্ট বলত :- হ্যাঁ স্যার বুঝেছি। আর না বুঝলেও জিগ্যেস করবেনা হয়তো জিগ্যেস করলে তাকে আরো কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, না হয় তখন স্কুলের টিফিনের সময়, অথবা ঘন্টার শেষের দিকে ছিলো না হয় ছুটির টাইম ছিলো। কত মজার একটা টাইম। স্মৃতিরা এমনই। আর সকল স্যারের তুলনা অতুলনীয়। সকলের স্নেহ ভালবাসা আজ এতোবড়। ক্লাস শেষে বাড়িতে যাওয়ার সময় রাস্তায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়িতে যাওয়া। আর স্কুল দিনের বৃষ্টি পড়া মজা এক অনন্য ও আনন্দের বিষয়। ছেলেরা খুব কমই ছাতা আনত। মেয়েদের ব্যাগে ছাতা থাকত। কেউ স্কুল ছুটির দিনে বৃষ্টিতে আনন্দ কাক ভেজা হয়ে বাড়ি যায়।
আর স্কুলের বন্ধু-বান্ধব মানে একটা গভীর বন্ধন। ভালবাসার নাম বন্ধুত্ব। ঠিক তেমনি আমারো অনেক বন্ধু ছিলো স্কুল লাইফে। যারা আমার সুখে-দুঃখে সব-সময় পাশে ছিলো। খবরা-খবর নিতো সব-সময়। আর হোস্টেল লাইফের কথা তো সেই লম্বা কাহিনী। মজার তিনটা মাস হোস্টেল লাইফে। হাসি-খুশি, খাওয়া-দাওয়া, পড়া-শুনা, নামাজ-কালাম,স্যার-ম্যাডামদের কঠোর শাসনের মাধ্যমে পার হয়। কেননা এই তিনটা মাস হলো একটা ছাত্র প্রস্তুত প্রণালীর মাধ্যম। এই তিন মাসে একদম পরিপূর্ণ করে ভালো থেকে আরো ভালো এবং খারাপ থাকলে তাকে অন্তত পাশ করানো যায় মতো তৈরী করে পরীক্ষার জন্য পাটান। আর এই হোস্টেল লাইফে সবার সাথে ভালো ভাবে মিলে-মিশে দিন পার করেছি আনন্দে। ছোটোবেলায় এভাবে স্কুলের ক্যানভাসে মজার সব গল্প এবং সুন্দর স্মৃতি বিজড়িত কেটেছে আমার সুখময় শৈশব ! পরবর্তী সময়ের আরও যে কতো শত-সহস্র স্মৃতির সাথে এই স্কুলটি মিশে আছে সেই অংকের হিসাব হয়তো কোনোদিনই মেলাতে পারবো না। আর স্কুলের সকল প্রোগ্রাম এবং প্রতি বছর ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিমূলক অনুষ্টানে সকল ছেলে মেয়ের মিলবন্ধন এবং নবীনদের বরণ। যারা নতুন স্কুলে সবেমাত্র ষষ্ট শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে তারা মেতে উঠে নানান রকম প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যুক্ত হয়ে নিজেকে হাসিমুখে রাখে। আরো মজার কথা হলো, তখন পুরা স্কুলের স্যার ম্যাডাম’রা মিলে স্কুলের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের চার দলে ভাগ করে নেয়। এবং ঠিক তেমনি সকল স্যার-ম্যাডাম’রা ও চারভাগে বিভক্ত হন। এবং প্রত্যেক চার দলে কত সুন্দর নামে নামকরণ করেন। এবং নিয়ম মাফিক সকল ছাত্র-ছাত্রীদের চার ভাগে ভাগ করা হয় ও সকল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। যারা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তাদের মধ্যে ফুটে উঠে নানান চরিত্রের গুনীজনদের দেশাত্মবোধক গান,গল্প, চরিত্র, সাঁজ-নাচ ইত্যাদি। সেখান থেকে ধাপে ধাপে অতিক্রম করে এবং সকল দলের কাজের পারদর্শিতা দেখিয়ে দর্শকের এবং বিচারকের মন অকর্ষণ করে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান নিশ্চিত করে। সেদিনের বিজয় অত্যন্ত আনন্দের।
কত এঁকেছি জীবনের স্বর্নালী দিগন্তের ছবি স্মৃতির ক্যানভাসে স্বপ্ন রংয়ের আঁচরে প্রাপ্তির উচ্ছ্বাসে রঙিন জীবনের কোলাহলে
সময়হীন ফ্রেমে।স্মৃতির পাতায় ডুকরে কাঁদে বেদনার মুহূর্তগুলো বিবর্ণ বর্ণে আর কত আঁকব বল হতাশার হতাশ।স্মৃতির চোরাবালিতে দাড়িয়েকালের নিষ্ঠুর ভ্রুকুটি সয়ে। জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে আজ আমি নির্বাক স্মৃতির বাতায়নে স্মৃতির আকাশে সুযোগ-দিগন্তে শকুনদের ভয়াল ভ্রুকুটি আতংকের বাতাসে কেঁপে কেঁপে উঠে ভবিষ্যতের বুক আঁধারের বুক চিরে টিমটিমে আশারা ছুটে চলে অবিরত। ভেসে গেছে প্রত্যাশা ব্যর্থতার জলোচ্ছ্বাসে অজানায়। লাভ ক্ষতির ফলাফলে আশাটা ক্ষীণকায়। স্মৃতির পদাভারে অনুশোচনা কেঁদে মরে। তবু আশায় বেঁচে আছি স্মৃতির শিথানে কিঞ্চিত অর্জনে।
☞মোহাম্মদ জাবেদ হাসান অমি,
এসএসসি ব্যাচ ২০১৬।
নাটমুড়া পুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।
➤ ২০১৪ সালের ৬ ই জানুয়ারি,ছোট আপু ফাহমিদা চৌধুরী ইভা এর সাথে ভর্তি হতে এলাম পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে।স্কুল মাঠে দাঁড়িয়ে দেখি কিছু চেনা মুখের সাথে দেখা।অনেকের সাথে পরিচয় হয়ে দিনটি অনেক রোমাঞ্চকর ভাবে কাটালাম।এই থেকে শুরু আমার মাধ্যমিক স্কুল জীবনের পথ যাএা। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে এক মাস যেতে না যেতেই ক্যাপ্টেন নির্বাচন।খুশির আমেজে ক্যাপ্টেন নির্বাচন করে ফেললাম যদিও ক্যাপ্টেন মানে তখন ঠিক জানা ছিল না।লাস্ট বেঞ্চে বসে দুষ্টুমি করার ইচ্ছা সেই ছোটবেলা থেকে।যদিও ক্যাপ্টেন হওয়ায় আর লাস্ট বেঞ্চে আর বসা হলো না।
২০২০সালের ৬ জানুয়ারি,দেখতে না দেখতে কেটে গেল পাঁচটি বছর।স্কুলের শেষ সময়ে চলে আসলাম।মাএ ১৮-২০ দিন পর আমাদের বিদায় নিতে হবে।তার আগে স্কুল জীবনের শেষ ক্লাস করতে হবে। যদিও শেষ ক্লাসটা হঠাৎ করে না বলে শেষ ক্লাস নিয়ে নেওয়া হয় তাই ক্লাসটা করার সুযোগ হয়নি।জীবনের সেরা সময়টা শেষ হয়ে গেল।এইবার বিদায়ের দিনের জন্য অপেক্ষা। ২০২০ সালের ২৬শে জানুয়ারি, জীবনের সব চেয়ে বেশি কিছু বুঝি আজ হারালাম।মানুষের জন্ম মৃত্যু যেমন সত্য তেমনি বিদায় নামাক শব্দ টাও সত্য সেইদিন তা ধরে নিতে হয়েছিল। সেইদিন স্কুলের সব স্মরণীয় দিন যেন চোখের সামনে ভাসতে থাকে।বাঁশির আওয়াজ শুনে সবাই এক সাথে পিটি করতে যাওয়া মাঝে মাঝে পাকি দেওয়া।পিটির পর আবার ক্লাসে সবাই একসাথে ঢুকতাম।ঢুকা মাএই কথা বলা শুরু করতাম, ক্লাসে আমাদের কথার কোনো শেষ ছিল না।লাস্ট বেঞ্চে বসে আড্ডা দেওয়ার মজায় আলাদা। বাড়ির কাজ না করলে কতরকম বাহানা দেখাতাম।পড়া না শিখলে আগামীকাল শিখে আসব ওয়াদা করতাম। একজনে না শিখলে সবাই শিখিনাই বলে দাঁড়িয়ে যেতাম।মাঝে মাঝে ক্লাস ফাঁকি আর স্কুল পালানো, একজনকে এক এক নামে ডাকা,একজনের বই অন্যজনের ব্যাগে ঢুকিয়ে দেওয়া,সব মিলিয়ে অনেক রোমাঞ্চকর দিন ছিল।স্কুলে অনুষ্ঠান হলে নাস্তার প্যাকেট বানানোর দায়িত্ব নেওয়ার মজায় আলাদা। রাগ অভিমান সবাই ঠিকই করত কিন্তু একদিনের চেয়ে কেউ কারো সাথে রাগ করে থাকতে পারতো না। শিক্ষক-শিক্ষিকারা নবম-দশম শ্রেনির শিক্ষার্থী ভাবলেও আমাদের দুষ্টুমি দেখে বলতো প্রাইমারির ভাস এখনোও যাইনাই তোদের কাছ থেকে। আমাদের মাঝে ছিল অদ্ভুত দুষ্টুমি।খাবার খেয়ে পেলা,কলম চুরি করে রেখে যাওয়ার সময় দেওয়া,ব্যাগ খুলে দেওয়া এক অদ্ভুত দুষ্টুমি করতাম।ওই সময় গুলো হয়তো আর ফিরে পাব না।আসবেনা আর সেই পুরানো মুহূর্ত গুলো।এখন চাইলেও আর একটা দিনের জন্য আগের মুহূর্ত ফিরে যাই,হয়তো পারবো না তবু জীবনের চলার পথে স্মৃতি হয়ে থাকবে।
➤ ছাত্র জীবনের সেরা সময় পার করছিলম বাহারচড়া রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে।এই ছাত্র জীবনের কাটানো সময় গুলোকে আমার জীবনের সেরা সময় মনে করি।মিস করি সেই স্কুলের সব শিক্ষকদের কথা এবং সব সহপাঠী আমার সব বন্ধুদের কথা।আমি আমার বিদ্যালয়ে সব শিক্ষকদের,অনেক ভালোবাসতম। মিস করি মনজুর স্যারের গণিত ক্লাস। আমাদের বিদ্যালয়ে প্রতি দুই বছর পর পর একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো। আমরা অই অনুষ্ঠানে অনেক মজা করতম। অনেক দূর থেকে অনেক অতিথি আমাদের মাঝে আসতো। ঐ দিন গুলো যখন আমার মনে পড়ে তখন আমার মন চাই বাহারচড়া রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে আবার পড়ালেখা করি। স্কুলের কেন্টিনে বসে বান্ধবীর সাথে নাস্তা করা এবং টিফিনের সময় আড্ডা মারা আমি এখনো অনেক মিস করি। স্কুলের সামনে পুকুর ঘাটে বসে কিছু সময় কাটানো এখনো আমার স্মৃতিতে ভাসে। ক্লাস রুমে শিক্ষক আসতে দেরি হলে ক্যাপ্টেনের কথা মতো কেউ গান করতো, আবার কেউ ইসলামি সঙ্গীত পরিবেশন করতো আবার কেউ বিভিন্ন ধরনের গল্প বলতো। আমার এখনো মনে পড়ে আমার সেই রফিক স্যারের কথা।মনে পড়ে সে বাংলা ক্লাসের কথা।আমি বাহারচড়া রত্নপুর উচ্চ বিদ্যায়ের ছাত্রী হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করতাম। আমার স্কুলের সব শিক্ষক ছাত্র -ছাত্রীর প্রতি অনেক খেয়াল করতো।আর মনে পড়ে স্কুল প্রতিষ্টাতা জনাব মোহাম্মদ মুজিবুর রহমানের কথা। উনি স্কুলের সব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন। আর আমারদের পড়ালেখার উন্নয়নের জন্য অনেক নিয়ম কানুন শিখাতেন। তার প্রতিটা কথা আমার জন্য অনেক মূলবান ছিলো। মনে পড়ে আমার স্কুলের সে চক্ষু শিবিরের কথা। আমি খুব মিস করি আমার স্কুলের ফুলের বাগানটাকে। মনে পড়ে সে শিক্ষা সফরের কথা আমরা যখন স্কুল থেকে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সফরে গিয়েছিলম তখন অনেক মজা করলম আরো অনন্দ তখন করলম যখন এএসপি জসিম আমদের সবার সাথে ছবি তুলে আর সবাইকে এক সাথে নাস্তা করায়। মনে পড়ে সে বিদায় অনুষ্ঠানের কথা। সব চেয়ে বেশি কষ্ট ঐ দিন হয়ে ছিলো যে দিন ৫ বছর পড়ালেখা করার পর স্কুল থেকে বিদায় নিয়ে ছিলম।আমি যত দিন বেঁচে থাকবো ততদিন খুব মিস করবো আমার প্রাণ প্রিয় বাহারচড়া রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয়কে।
☞ ফাহামিদা সোলতানা
ব্যাচ ২০১৯
বাহারচড়া রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয়