বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের আগমনের প্রাথমিক সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ‘হারানো মসজিদ’। প্রায় ১৪০০ বছর আগে, ৬৯ হিজরিতে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌজায়, রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে এর অবস্থান।
মসজিদের ধ্বংসাবশেষে পাওয়া একটি ইট থেকে এর ইতিহাস জানা যায়। সেই ইটটিতে আরবিতে স্পষ্ট লেখা ছিল কালেমা তাইয়্যেবা ও হিজরি ৬৯ সন। স্থানীয়রা ধারণা করেন, এটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর ৫৮ বছর পরে নির্মিত হয়েছিল।
মসজিদটির আবিষ্কার ঘটে ১৯৮৫ সালে। জমি সমান করার সময় স্থানীয় লোকেরা পুরনো অনেক ইট খুঁজে পান, যা প্রাচীন কারুকাজে সজ্জিত ছিল। সবাই ধারণা করেছিলেন এটি হয়তো পুরনো জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ। তবে ১৯৮৬ সালের ১০ মহররমে, গ্রামবাসী আইয়ুব আলী একটি ইট কুড়িয়ে তাতে আরবি লিপি দেখতে পান, যেখানে লেখা ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ” এবং হিজরি সন ৬৯।
এরপর খনন শুরু হলে, ২১ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের একটি মসজিদের ভিত্তি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়। দেয়ালের পুরুত্ব ছিল ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি, আর এর একটি দরজা ও চার কোণে আট কোণবিশিষ্ট স্তম্ভ ছিল। আরও কারুকার্যময় ইট এবং গম্বুজের অংশও আবিষ্কৃত হয়।
ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক টিম স্টিলের মতে, প্রাচীনকালে ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকাকে আরব ও রোমান বণিকরা বাণিজ্য পথ হিসেবে ব্যবহার করতেন। ধারণা করা হয়, সাহাবি আবু ওয়াক্কাস (রা.) এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। বিভিন্ন রোমান ও জার্মান ইতিহাসবিদদের বর্ণনায়ও এই অঞ্চলের বাণিজ্য পথের কথা উল্লেখ রয়েছে।
১৯৮৫ সালে মসজিদটি আবিষ্কারের পর নতুন করে আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যেখানে প্রাচীন মসজিদের ভিত্তি অংশটি সুরক্ষিত রাখা হয়েছে। প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে বহু দর্শনার্থী এই মসজিদটি দেখতে আসেন।