বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের রসায়ন বিভাগের স্বনামধন্য শিক্ষক, বিভাগীয় প্রধান, একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর এসএম আইয়ুব আর নেই (ইন্না-লিল্লাহ রাজেউন)। আজ সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে দ্রুত চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য গত ২৪ সেপ্টেম্বর একদল শিক্ষার্থী কলেজের ভেতর অবরুদ্ধ করে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। ওই সময় তিনি সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটে পড়েন। এরপর থেকে মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েন। পরিবার, সহকর্মী ও স্বজনদের দাবি ছাত্রদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অপমান সহ্য করতে না পারার জেরে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
জনাব এসএম আইয়ুবের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন,’ জনাব আইয়ুব একজন ক্যামিস্ট্রির বস। নানা রং-ঢং মিশিয়ে হাস্যরসে ক্যামিস্ট্রির জঠিল সব বিক্রিয়া আমাদের আমাদের কাছে সহজবোধ্য করে তুলতেন। হাজেরা-তজু কলেজকে এতো উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ওয়ানম্যান আর্মি ছিলেন তিনি। স্যার সবসময় তাঁর ব্ল্যাকবোর্ডে শিক্ষকের সংজ্ঞা লিখে রাখতেন এভাবে “চক-ডাস্টারের মাধ্যমে নিরেট বোর্ডে যিনি রসের সৃষ্টি করতে পারেন, তিনিই শিক্ষক।” ক্ষোভের সঙ্গে এই শিক্ষার্থী বিলেন, ‘২৪ সেপ্টেম্বর উনার প্রাণ প্রিয় প্রতিষ্ঠানে উনার সাথে যা হয়েছে কথিত ছাত্র নামধারীরা এর দায়ভার এড়াতে পারেনা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায় মরহুমের নামাজে জানাজা আজ (২৩ নভেম্বর, ২০২৪) আসরের নামাজের পর চান্দগাঁও মৌলভি পুকুর পাড়ে সম্পন্ন হয় ২য় নামাজে জানাজা আগামীকাল জোহরের নামাজের পর স্যারের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী স্যারের হাতে গড়া মাস্টার আবু আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হবে এবং তাঁর বড় ভাইয়ের সমাধির পাশেই সমাহিত করা করা হবে।
প্রফেসর এসএম আইয়ুব চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার কাথরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বাগমারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর পিতা মাস্টার আবু আহমেদ, মাতা ছৈয়দা নূর জাহান। কাথরিয়া বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সাতকানিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সম্মান সহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। তিনি নুরুল ইসলাম বিএসসি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানায় অবস্থিত হাজেরা তজু কলেজে প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি এই কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে একই কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছিলেন। এবং সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মিত অধ্যক্ষ অবসরে যাওয়ায় পুনরায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সরকারি প্রবিধান অনুযায়ী অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত কলাম, প্রবন্ধ, কবিতার সংখ্যা শতাধিক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “আর কত রাত”।
একজন শিক্ষা সংগঠক হিসেবে তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার মানোন্নয়নে পেশাগত জীবনের অবসরে কাজ করছিলেন নিরলসভাবে। দক্ষিণ বাগমারা মাস্টার আবু আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, সৈয়দ আলফা মিয়াজি ফোরকানিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, উত্তর বাগমারা মাদ্রাসার ভূমি প্রদান করে তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনে ভূমিকা রেখেছিলেন।