Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

গর্ভবতী মায়ের পরিচর্যায় করণীয়

ডাক্তার জান্নাতুল ঝর্ণা

আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর একজন সুস্থ, সবল শিশুর জন্ম থেকে বেড়ে উঠা সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে একজন মায়ের স্বাস্থ্যের উপর।
WHO কর্তৃক ১৯৪৮ সালে ঘোষিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য বলতে বুঝায় শারীরিক, মানসিক,সামাজিক কল্যাণবোধ।শুধু রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতিকে স্বাস্থ্য বলে না।
স্বাভাবিক অবস্থায় একটি শিশু ২৮০ দিন বা ৯ মাস ১০ দিন মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠার পর পৃথিবীর আলো দেখতে পায়।এ-ই সময়ে তার বেড়ে ওঠা ও সঠিক রক্ষণা বেক্ষণ নির্ভর করে মায়ের কাছ থেকে পাওয়া পুষ্টির উপর।গর্ভাবস্থায় অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণ এবং অপুষ্টির কারণে জন্ম নিতে পারে  অপুষ্ট ও কম ওজনের শিশু তেমনি মায়ের ও রক্তস্বল্পতা, আমিষের অভাব,দূর্বলতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।তাই এ-ই সময়ে মায়ের খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দেওয়া বিশেষ ভাবে জরুরী।
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের অতিরিক্ত খাবারের প্রয়োজন হয় কারণ এ-ই সময়ে মায়ের শরীর আগের তুলনায় বেশি কাজ করে।
তাই প্রতিদিনের সুষম খাদ্য পরিকল্পনার সময় সাধারণ খাবারের পাশাপাশি কিছু বিশেষ উপাদান(আমিষ,আয়রণ,ফলিক এসিড, আয়োডিন,ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি,ওমেগা-৩ফ্যাটি এসিড) এর দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত মায়েদের।
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে (প্রথম তিন মাস) দৈনন্দিন সাধারণ খাবারের পাশাপাশি এক গ্লাস দুধ,তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খাবেন।এসময় প্রচুর পানি(ৈদনিক ৮-১০ গ্লাস) খাবেন।
প্রথমদিকে আর একটি জিনিস অবশ্যই দরকার তা হল ফোলেট বা ফলিক এসিড,যার অভাবে মায়েদের রক্তস্বল্পতা হতে পারে।আর এটি সন্তানের জন্মগত বিকলাঙ্গতা প্রতিরোধ করে।পালংশাক,কলিজা, বিচি,ডিম,ডাল,দুধ ইত্যাদি ফলিক এসিডের উৎস। এছাড়া ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্টারী ফুড/ ওষুধ হিসেবে ফলিক এসিড খেতে পারেন।
স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি আমিষ দরকার এ-ই সময়।কারণ ভ্রুণের সঠিক বৃদ্ধি ও মায়ের স্তন গ্রন্থি বৃদ্ধির জন্য আমিষ প্রয়োজন। আমিষের মূল উৎস হচ্ছে মাছ,মাংস,ডিম,দুধ,বাদাম,ডাল ও সিমের বিচি।
গর্ভাবস্থার মধ্যভাগে অর্থাৎ ৪-৬ মাস এ স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি খাবার প্রয়োজন। কারণ এ-ই সময় বাচ্চার ব্রেণ বা মস্তিষ্কের ও চোখের গঠন হয়।আর এ-ই গঠন সঠিকভাবে হওয়ার জন্য প্রয়োজন ভিটামিন ডি ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড।ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সূর্যের আলোতে,দুধে,দইয়ে,বাদামী চাল ও গমে।ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় সামুদ্রিক মাছ ও খাবার এ।
এ সময়ে আয়োডিন খাবেন পর্যাপ্ত পরিমাণে।কেননা এ-ই সময়ে বাচ্চার থাইরয়েড গ্রন্থি কাজ করা শুরু করে,যা বাচ্চার মস্তিষ্ক বা ব্রেণ গঠনের জন্য অতীব প্রয়োজন।
এ-ই সময় ক্যালসিয়াম খান প্রচুর পরিমাণে।এটি বাচ্চার হাড় ও দাত গঠনের জন্য দরকার। দুধ ও দই ক্যালসিয়ামের একটা আদর্শ উৎস।
এছাড়া ও পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন যুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। আয়রন এর অভাবে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে।আয়রন পাওয়া যায় কলিজা,লাল শাক,কালো কচুশাক,সবুজ সবজি,টেংরা মাছ ইত্যাদিতে।
গর্ভাবস্থায় শেষ দিকে অর্থাৎ ৭ম মাস থেকে বাচ্চা জন্মানোর আগ পর্যন্ত উপরোক্ত নিয়মে খাবার চালিয়ে যান।এ সময়ে কোষ্টকাঠিন্য হবার সম্ভাবনা থাকে বেশি।তাই পানি খাবেন প্রচুর আর আঁশযুক্ত ফল ও শাক সবজি বেশি খাওয়া উচিত। আঁশযুক্ত খাবার পায়খানা নরম করে ও কোষ্টকাঠিন্য দুর করে।
গর্ভাবস্থায় খুব ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন।এসব খাবার খেলে এসিডিটি হয়।
গর্ভাবস্থায় অনেকেই ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে ডায়েট করে থাকেন,যা একেবারেই উচিৎ নয়।কারণ গর্ভবতী অবস্থায় ১০-১২ কেজি ওজন বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক।
ধুমপান একদমই করবেন না বা স্বামী বা বাসার অন্যকেউ ধুমপান করলে পরিহার করা উচিৎ। কারণ এতে করে কম ওজনের বাচ্চা জন্মানোর ও বাচ্ছা নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে বেশি।
পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতা, নিয়ম মত স্নান করতে হবে।যতটা সম্ভব হালকা – পাতলা সুতির পোশাক পরা উচিৎ। বেশি কসমেটিক ব্যবহার না করাই ভাল।আর এ সময় চুল কালার বা রং করা বন্ধ রাখুন।
গর্ভাবস্থায় মিলন করা উচিৎ নাকি উচিৎ না?
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস ও শেষ সময়টুকু বাদ দিয়ে,মাঝের সময়গুলোতে সাবধানতা অবলম্বন করে সহবাস করা যায়।তবে না করাই ভাল।প্রথম ও শেষ সময়টুকুতে মিলন করলে মিসক্যারেজ ও প্রিম্যাচিওর লেবারের রিস্ক বেড়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় ভ্রমণে কোন বাধা নেই।তবে প্রথম তিনমাসে গর্ভপাতের ঝুকি থাকে বেশি তাই  দীর্ঘ ভ্রমণে যাওয়া উচিৎ নয়।এছাড়াও কোথাও গেলে একা না যাওয়াই ভাল।আর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য এর দিকে খেয়াল রাখা উচিত,এই সময় টাতে মায়েদের শরীর ও মনের অনেক পরিবর্তন হয়, দয়া করে তখন মাকে মানসিক সাপোর্ট দিবেন।আসেন আমরা সবাই মিলে আজ একটা স্লোগানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই-

” খেলে ভিটামিন গর্ভাবস্থায়,
  বাচ্চা অনেক বড় হয়ে যায়
  নরমাল ডেলিভারি  না হয়ে
  সিজার হয়।
  এই ভুল ধারনা থেকে বের হই,
  সমাজ পাবে সুস্থ বাচ্চা
  যদি করি গর্ভাবস্থায় মায়ের সুষ্টু    
  পরিচর্যা।”

লেখক; বিসিএস (স্বাস্থ্য) সহকারী সার্জন, লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, বাঁশখালী এক্সপ্রেস

আরও পড়ুন  চোখের আলো ফিরিয়ে দেয়ার নিরব কর্মযজ্ঞ