Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাঁশখালী হানাদার মুক্ত দিবস আজ

১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঁশখালী পাক হানাদার মুক্ত হয় ১২ ডিসেম্বর। চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র ৪ দিন আগে বাঁশখালীতে পাক-হানাদারদের রুখে দিয়ে ১ম বারের মত স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিকামী জনত। এর মধ্যে দিয়ে বিজয়ের স্বাদ পায় বাঁশখালীবাসী।
.
যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাঁশখালীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে অভিযান চালিয়ে শত্রæমুক্ত করে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে স্বাধীনতার বিজয়কে ছিনিয়ে আনতে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বাঁশখালীর স্বাধীনতাকামী জনগণেরও সর্বাত্মক ভূমিকা ছিল। পাক হানাদার বাহিনী বাঁশখালীতে প্রথম অভিযান চালায় ১৯ মে ১৯৭১। এই দিন সকাল ১০ টার দিকে বাঁশখালীর পূর্বাঞ্চল এবং হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রভাবশালী স্বাধীনতা বিরোধীরাসহ শতাধিক সৈনিক ও ১০ ট্রাক সাজোয়া বহর নিয়ে বাণীগ্রাম থেকে শুরু করে নাপোড়া পর্যন্ত চালায় ইতিহাসের জগন্যতম বর্বর, নির্বিচার গণহত্যা ও বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগ। তাদের হিংস্রতায় বাঁশখালীর বিভিন্ন গ্রামে ৯০ জন সংখ্যালগু নারী-পুরুষকে হত্যা করা হয়। নিজ এলাকা ও দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গণে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন বাঁশখালীর আরো ১০ জন বীর সেনানী। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি এসব শহীদ পরিবারগুলোর খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই।

এইসব শহীদদের মধ্যে কালীপুর ইউনিয়নের ১৮ জনকে হাত-পা বেঁেধ আধমরা অবস্থায় বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজের দক্ষিণ পার্শ্বে গর্তে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়। এ বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন গ্রæপ কমান্ডার খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন এর উদ্যোগে ১৫ মার্চ ১৯৮৯ তারিখে একটি গণসমাধি ভিত্তিস্থাপন করা হয়। ২৬ মার্চ ১৯৮৯ তারিখে এই গণসমাধির ফলক উন্মোচন করেন বাঁশখালীর তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান সুজিত কান্তি সিকদার ও ইউএনও জালাল আহমদ। বাণীগ্রামে নিহত ২২ জনকে রাতের অন্ধকারে বাণীগ্রাম মধ্য পাড়া পুকুর পাড়ে স্থানীয় মুসলমানদের সহযোগিতায় সমাহিত করা হয়। পরবর্তীতে এই শহীদের স্মরণে ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে নাম ফলক সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এমএফ কমান্ডার ও সাধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন। ২৬ মার্চ ২০১২ তারিখে এই স্মৃতিস্তম্ভ ফলক উন্মোচন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক। দীর্ঘদিন যাবত এ বধ্যভূমি ২টি অযতœ ও অবহেলায় পড়ে থাকায় সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত¡াবধানে দৃষ্টিনন্দন বধ্যভূমি নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কে.এম. সালাহ্উদ্দীন কামাল বলেন- ইতিমধ্যে বধ্যভূমি ২টি সংরক্ষনে আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেছি, বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্ম জানতে পারবে ও শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।

আরও পড়ুন  The Rohingyas ; history of Rohingyas

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বাঁশখালীর মানুষ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের এই সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা সেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রধান মোক্তার আহমদ (প্রাক্তন এমপি), তৎকালীন চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা অ্যাড. সুলতানুল কবির চৌধুরী (প্রাক্তন এমপি), তৎকালীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫ম বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী, তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিমান বিধ্বংসী গোলন্দাজ বাহিনীর রাড়ার অপারেটর খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন, পুকুরিয়ার শফিকুল ইসলাম, জলদীর নূরুল কবির চৌধুরী ও চাম্বলের মীর ওয়াজেদ আলী খান প্রমূখ। চট্টগ্রাম শহর ও আশেপাশের বিভিন্ন অভিযানে গুরুত্বপূণূ ভূমিকা পালন করেছেন বাঁশখালীর আরেক বীর সন্তান শহীদ মৌলভী ছৈয়দ যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার ১ম প্রতিবাদকারী ও ১ম শহীদ। বাঁশখালী হানাদার মুক্ত দিবসে এসব বীর সেনানীদের বাঁশখালীবাসী গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।